ইউরেনাস
Uranus
 

১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে ভয়েজার ২ থেকে ইউরেনাস-এর তোলা ছবির সাথে, ১৯৯৮ সালে তোলা হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে অবলোহিত রশ্মির তৈরি ছবির বলয়ের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই ছবি।

সৌরজগৎ-এর একটি গ্রহ। সূর্যের দিক থেকে এর অবস্থান সপ্তম এবং আকারের বিচারে তৃতীয় বৃহত্তম। এই গ্রহের আবিষ্কারের সাথে উইলিয়াম হার্সেল-এর নাম বিশেষভাবে জড়িত। মূলত এই গ্রহটিকে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই আগে লক্ষ্য করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা এটাকে সৌর জগতের গ্রহ হিসাবে বিবেচনায় আনতে পারেন নি। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে John Flamsteed অন্তত ছয়বার এই গ্রহটিকে দেখতে পান। তিনি তার নক্ষত্র তালিকায় এই গ্রহটিকে বৃষ নক্ষত্রমণ্ডলের একটি নক্ষত্র হিসাবে নামকরণ করেছিলেন 34 Tauri। ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী Pierre Lemonnier  ১৭৫০ থেকে ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে প্রায় ১২ বার এই গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু তিনিও একে নক্ষত্র হিসাবেই চিহ্নিত করেছিলেন। স্যার উইলিয়াম হার্সেল (Sir William Herschel) এই গ্রহটিকে প্রথম ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং ঐ বৎসরের ২৬ এপ্রিলে একে একটি ধূমকেতু হিসাবে উল্লেখ করেন। পরে আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর তিনি একে সৌরজগতের গ্রহ হিসাবে স্বীকৃতি দেন। প্রথমাবস্থায় অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই এটা মানতে চান নি। শেষ পর্যন্ত একে গ্রহ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়।

 

ইউরেনাসের নামকরণ : ভারত, চীন, গ্রিক বা মিশরের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই গ্রহের কোনো নাম পাওয়া যায় না। এই কারণে গোড়াতেই হার্সেল বা অন্যকোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোনো বিশেষ নামে একে চিহ্নিত করেন নি। এই গ্রহের নামকরণের জন্য প্রথমে হার্সেলকে অনুরোধ করা হয়েছিল। হার্সেল তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা King George III-এর  নামানুসারে এর নামকরণ করতে চেয়েছিলেন Georgium Sidus (George's Star)। কিন্তু ইংল্যান্ডের বাইরে এই নামকে কেউ মেনে নিলেন না। ফলে বিকল্প নামের প্রয়োজন পড়লো। জ্যোতির্বিজ্ঞানী Jérôme Lalande আবিষ্কারকের নামনুসারে এর নাম Herschel রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউরোপে মহাকাশীয় লক্ষ্যবস্তুগুলোর নাম গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র থেকে নেওয়ার রীতিটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। সেই সূত্রে সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী Erik Prosperin এই গ্রহটির নাম নেপচুন (Neptune) রাখার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই গ্রহের কক্ষপথ নির্ণয়কারী জার্মান বিজ্ঞানী Johann Elert Bode এর নাম দেন ইউরেনাস। বোদে যুক্তি দেখান যে- সূর্যের দিক থেকে Jupiter (বৃহস্পতি) -এর পরে রয়েছে Saturn (শনি)। গ্রিক পুরাণ মতে জুপিটরের পিতা হলেন স্যাটার্ন। ইউরেনাস যেহেতু স্যাটার্নের পিতা, সেই কারণে স্যাটার্নের পরের গ্রহের নাম হওয়া উচিৎ ইউরেনাস। অবশেষে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইউরেনাস নামটিই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

 

ইউরেনাসের দৈহিক বৈশিষ্ট্য: এর ব্যাস নেপচুনের চেয়ে একটু বেশি কিন্তু পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৪গুণ বেশি। এর বিষুব এলাকার ব্যাসার্ধ ২৫,৫৫৯ ±৪ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ২৪,৯৭৩ ±২০ কিলোমিটার। এর পরিধি ১,৫৯,৩৫৪.১ কিলোমিটার। এর উপরিতলের এলাকার পরিমাণ ৮,১১৫.৬X১০কিলোমিটার। এর আয়তন ,৮৩৩.৬X১০১৩ কিলোমিটার। এর ভর  ,৬৮১০±.০০১৩X১০২৫ কিলোগ্রাম। পৃথিবীর তুলনায় এই গ্রহ প্রায় ১৪.৫ গুণ বেশি ভারি। এর ঘনত্ব ১.২৭ গ্রাম/ঘন সেন্টিমিটার। বিষুব এলাকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ৮.৬৯ মিটার/সেকেন্ড, ০.৮৮৬ গ্রাম।

 

এর অভ্যন্তরে কেন্দ্রে রয়েছে সিলিকেট, লৌহ ও নিকেল মিশ্রিত পিণ্ড, এর ব্যাপ্তী ২২,০০০ কিলোমিটার। এরপর ১০,০০০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বরফের আবরণ। এরপর রয়েছে ৫,০০০ কিলোমিটার জুড়ে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও মিথেনের গ্যাসীয় বলয়।


এর একটি মেরু সূর্যের দিকে প্রায় ৪২ বৎসর থাকে, এই সময় অন্য মেরু অন্ধকারে থাকে।
ইউরেনাসে সূর্যের আলোর তীব্রতা পৃথিবীর ৪০০ ভাগের ১ ভাগ পরিমাণ। এর উপরিতলের গড় তাপমাত্রা -১৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শীতলতম অবস্থায় তাপমাত্রার পরিমাণ দাঁড়ায় -২২৪ সেলসিয়াস। বিষুব অঞ্চলে প্রায় ২৫০ মিটার/সেকেন্ড বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়।

 

ইউরেনাসের কক্ষপথ: সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে ইউরেনাসের সময় লাগে পার্থিব ৮৪ বৎসর। সূর্য থেকে এর সর্বোচ্চ দূরত্ব ৩,০০,৪৪,১৯,৭০৪ কিলোমিটার এবং সর্বনিম্ন দূরত্ব ২,৭৪,৮৯,৩৮,৪৬১ কিলোমিটার।  কক্ষপথে এর গড় গতি ৬.৮১ কিলোমিটার/সেকেন্ড। এর নাক্ষত্রিক আবর্তন কাল ০.৭১৮৩৩ দিন বা  ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আবর্তিত হয়।  অর্থাৎ এই গ্রহটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে।

 

ইউরেনাসের বলয় : এই গ্রহকে ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো বলয়। এই বলয়গুলোর বিস্তার মাইক্রোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত। এ পর্যন্ত অন্তত দুটি বলয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের বিস্তৃতি কয়েক কিলোমিটার। এই বলয়গুলোর উপাদান উপগ্রহের খণ্ডাংশ দ্বারা গঠিত বলেই অনুমান করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৩টি উজ্জ্বল বলয় সম্পর্কে ধারণা করা গেছে। দূর থেকে টেলিস্কোপের সাহয্যে এই বলয়গুলো সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল, Voyager 2-এর পাঠানো তথ্যানুসারে এ সকল বলয় সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের বলয়গুলোর রঙ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। হাল্কা ধূসর, লাল, নীল রঙের বলয় দেখা যায়।  নিচে বলয়গুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো।

 
নাম ইউরেনাস থেকে দূরত্ব বিস্তার প্রশস্ততা  
 1986U2R  ৩৮০০ কিমি ২৫০০ কিমি ০.১ কিমি
 6 ৪১,৮৪০ কিমি ১-৩ কিমি ০.১ কিমি
 5 ৪২,২৩০ কিমি ২-৩ কিমি ০.১ কিমি
 4 ৪৪,৫৮০ কিমি ২-৩ কিমি ০.১ কিমি
 Alpha ৪৪,৭২০ কিমি ৭-১২ কিমি ০.১ কিমি
 Beta ৪৫,৬৭০ কিমি ৭-১২ কিমি ০.১ কিমি
 Eta ৪৭,১৯০ কিমি ০-২ কিমি ০.১ কিমি
 Gamma ৪৭,৬৩০ কিমি ১-৪ কিমি ০.১ কিমি
 Delta ৪৮,২৯০ কিমি ৩-৯ কিমি ০.১ কিমি
 1986U1R ৫০,০২০ কিমি ১-২ কিমি ০.১ কিমি
 Epsilon ৫১,১৪০ কিমি ১২-১০০ কিমি ০.১৫ কিমি

 


ইউরেনাসের উপগ্রহ : এখন পর্যন্ত ইউরেনাসের ২৭টি উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই উপগ্রহগুলো হলো-

আম্ব্রিয়েল (
Umbriel): ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন উইলিয়াম ল্যাসেল। উল্লেখ্য এই একই সময় ইনি আবিষ্কার করেছিলেন ইউরেনাসের অপর উপগ্রহ আরিয়েল। আলেক্সন্ডার পোপ-এর দ্যা রেপ অফ ত্যা লক কবিতার একটি চরিত্রের নামানুসারে।

এই উপগ্রহটি বরফ ও পাথরের টুকরো দিয়ে গঠিত। ইউরেনাসের ওবেরন উপগ্রহটি সবচেয়ে ভারী। এই বিচারে আম্ব্রিয়েল দ্বিতীয় ভারী উপগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ২৬৬,০০০ কিলোমিটার। ইউরেনাসকে ঘিরে এর আবর্তনকাল ৪.১ পার্থিব দিন। এর কক্ষপথ ইউরেনাসের ম্যাগটোস্ফিয়ারের অভ্যন্তরে। এই উপগ্রহটি মূলত বরফ দিয়েই তৈরি। এর উপরিতলে অসংখ্য বড় বড় গর্ত পরিক্ষিত হয়। ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত ছবিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো।

 


আরিয়েল (Ariel): এটি ইউরেনাসের একটি উজ্জ্বলতম উপগ্রহ। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন উইলিয়াম ল্যাসেল। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ১,৯১,২৪০ কিলোমিটার। পার্থিব ২.৫ দিনে একবার ইউরেনাসকে প্রদক্ষিণ করে।
    এর গা জুড়ে কাটাকুটির দাগ দেখা যায়। এছাড়া এই উপগ্রহে আগ্নেয়জ্বালামুখ এবং খাল লক্ষ্য করা যায়। এই উপগ্রহে রয়েছে জমাটবাধা এ্যামোনিয়া, মিথেন এবং কার্বন-মনোক্সাইড।  ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত ছবিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো।


ওফেলিয়া (Ophelia) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুনে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের পোলোনিয়াসের কন্যা ওফেলিয়া'র নামানুসারে এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ইউরেনাসের দিক থেকে নিকটতম দ্বিতীয় উপগ্রহ।  এর ব্যাস মাত্র ১৬ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৫৩,৭৬০ কিলোমিটার। এই উপগ্রহটি ইউরেনাসের এপসিলন বলয়ের নিকটবর্তী।


ওবেরন (Oberon) : উইলিয়াম হার্সেল ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারিতে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। এর ব্যাস ৭৬১.৪ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৫,৮২,৬০০ কিলোমিটার। এই উপগ্রহের উপরিভাগ পাথুরে, তবে এর পুরোটাই বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত।

এই উপগ্রহটি পার্থিব ১৩.৫ দিনে একবার ইউরেনাসকে প্রদক্ষিণ করে। এই উপগ্রহটির উপরিভাগ প্রচুর জ্বালামুখ দেখা যায়। ফলে দূর থেকে একে বেশ অমসৃণ মনে হয়। ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত ছবিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো।


কর্ডেলিয়া (Cordelia) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। শেক্সপিয়রের কিং লিয়র নাটকের কিং লিয়রের কন্যা কর্ডেলিয়া'র নামানুসারে এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ইউরেনাসের সবচেয়ে নিকটতম উপগ্রহ। এটি একটি ক্ষুদ্রাকৃতির উপগ্রহ। এর ব্যাস মাত্র ১৫ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৪৯,৭৫০ কিলোমিটার। এই উপগ্রহটি ইউরেনাসের এপসিলন বলয়ের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।


কিউপিড (Cupid): ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ছবি বিশ্লেষণ করে মার্ক শো্য়াল্টার এব জ্যাক জে লিস্যার এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। এর প্রাথমিকভাবে নামকরণ করা হয়েছিল S/2003 U 2। শেক্সপিয়ারের টিমন অফ এথেন্স নামক নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এর ব্যাসার্ধ প্রায় ১৮ কিলোমিটার।


ক্যালিবান (Caliban) : ২০০ ইঞ্চি হেলে টেলিস্কোপ ব্যাবহার করে- ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বরে ফিলিপ নিকোলসন, ব্রেট জে গ্লাডমেন, জোসেফ এ বার্নস এবং জন জে কাভেলার্স এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য একই সাথে এঁরা সাইকোরাক্স উপগ্রহটিও আবিষ্কার করা হয়েছিল। শেক্সপিয়ার-এর দ্যা টেমপেষ্ট নাটকের দানবের নামানুসারে এই নাম গ্রহণ করা হয়েছে।

 

এর ব্যাস ৪৯ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৭১,৬৯,০০০ কিলোমিটার।


ক্রেসিডা (Cressida):  ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি তারিখে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল- S/1986 U 3। শেক্সপিয়রের 'Troilus and Cressida' নাটকের Calchas -এর কন্যা  ক্রেসিডা-র নামানুসারে এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ইউরেনাসের দিক থেকে নিকটতম চতুর্থ উপগ্রহ। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এর ব্যাস মাত্র ২২ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৬১,৭৭০ কিলোমিটার।


জুলিয়েট (Juliet) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/1986 U 2। পরে শেক্সপিয়ারের রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট নাটকের নায়িকার নামানুসারে এই নাম গ্রহণ করা হয়েছে। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এর ব্যাস ৫৩ কিলোমিটার। এই উপগ্রহটি ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে ৬৪,৩৬০ কিলোমিটার।


টাইটানিয়া (Titania) : ইউরেনাসের বৃহত্তম গ্রহ। উইলিয়াম হার্সেল ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারিতে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। শেক্সপিয়ারের 'এ মিডসামার নাইটস ড্রিম' নাটকের পরীদের রানির নমানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল। এর ব্যাস মাত্র ১৫৭৮ কিলোমিটার। এই উপগ্রহটি ইউরেনাসের ম্যাগনেটোস্ফিয়ার-এর ভিতরে অবস্থিত। এই উপগ্রহটি পাথর এবং বরফের সমন্বয়ে সৃষ্ট। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৪৩৬,০০০ কিলোমিটার। পার্থিব ৮.৭ দিনে একবার ইউরেনাসকে প্রদক্ষিণ করে। ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত ছবিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো।


ট্রিন্কুলো (Trinculo) : ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ আগষ্ট ম্যাথিউ জে হোলম্যান, জন জে কাভেলার্স, ডান মিলিসাভলিজেভিক, বের্ট জে গ্লাডম্যান  প্রাথমিকভাবে এর নাম দেওয়া হয়েছিল । ইউরেনাসের S/2001 U 1। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেস্ট  নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে।


ডেসডিমোনা (Desdemona) : উইলিয়াম হার্সেল ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারিতে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল- S/1986 U 6। শেক্সপিয়ারের ওথেলো নাটকের ওথেলো'র স্ত্রীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য।

 

এর ব্যাস ২৯ কিলোমিটার। ইউরেনসারে কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৬২,৬৬০ কিলোমিটার।


পার্দিতা (Perdita): ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভয়েজার ২ এই উপগ্রহের ছবি তুলেছিল। প্রথমে ভয়েজারের এই ছবি দেখে এই কেউ এটাকে উপগ্রহ বলে স্বীকার করে নেন নি। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই এরিখ কার্কোশ্চ্কা একে উপগ্রহ হিসাবে ঘোষণা দেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এর প্রাথমিকভাবে নামকরণ করা হয় S/1986 U 10। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা গৃহীত ছবি দেখে একে উপগ্রহ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর শেক্সপিয়ারের দ্যা উইন্টার টেল নাটক চরিত্র অনুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়।

 

এই উপগ্রহটি পোর্শিয়া উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এই উপগ্রহটির কক্ষপথ বেলিন্ডা এবং পুক-এর কক্ষপথের ভিতরে। এর ব্যাস ৪০ কিলোমিটার। ইউরেনসারে কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৭৫,০০০ কিলোমিটার।


পুক (Puck) : ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বরে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর নাম দেওয়া হয়েছিল- S/1985 U 1। পরে শেক্সপিয়ারের এ মিডসামার নাইট'স ড্রিম-এর পুক চরিত্রের নামানুসারে গ্রহণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ইংরেজি লোককথা এবং কেল্টিক পৌরাণিক কাহিনী থেকে শেক্সপিয়ার এই নামটি গ্রহণ করেছিলেন।

এই উপগ্রহটি ইউরেনাসের বলয় এবং মিরান্ডা'র মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে এই উপগ্রহটি ইউরেনাসকে প্রদক্ষিণ করে। এর ব্যাস ১৬২ কিলোমিটার। এই উপগ্রহটি বরফ আর পাথর দিয়ে তৈরি।


পোর্শিয়া (Portia) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারিতে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। তখন সাময়িকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/1986 U 1। পরে শেক্সপিয়ার-এর দ্যা মার্চেন্ট অফ ভেনিস এর নায়িকার নামানুসারে এই নাম গ্রহণ করা হয়েছে। ইউরেনাসের একগুচ্ছ উপগ্রহকেও এই নামে অভিহিত করা হয়। এই গুচ্ছের অপর উপগ্রহগুলো হলো- বিয়ান্কা, ক্রেসিডা, ডেসডিমোনা, জুলিয়েট, রোসালিন্ড, কিউপিড, বেলিন্দা এবং পার্দিতা। এই উপগ্রহগুলো প্রায় একই কক্ষপথ অনুসরণ করে এবং এদের ঔজ্জ্বল্য প্রায় একই রকম।

এর ব্যাস ১৬২ কিলোমিটার। ইউরেনাস-এর কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৬৬,১০০ কিলোমিটার।


প্রোসপেরা (Portia) : ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই তারিখে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন- ফিলিপ নিকোলসন, ব্রেট জে গ্লাডমেন, জোসেফ এ বার্নস এবং জন জে কাভেলার্স এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/1999 U 3। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেস্ট  নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে।

এর ব্যাসার্ধ ১৫ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ১,৬৫,৬৮,০০০ কিলোমিটার।


ফ্রান্সিসকো (Francisco) : ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ আগষ্ট তারিখে গৃহীত ছবি বিশ্লেষণ করে ম্যাথিউ জে হোলম্যান, জন জে কাভেলার্স, ডান মিলিসাভলিজেভিক, বের্ট জে গ্লাডম্যান এই উপগ্রহটির কথা প্রকাশ করেন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/2001 U 3। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেস্ট  নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে।

ফার্ডিনান্দ (Ferdinand) : ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ আগষ্ট ম্যাথিউ জে হোলম্যান, জন জে কাভেলার্স, ডান মিলিসাভলিজেভিক, বের্ট জে গ্লাডম্যান এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/2001 U 2। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেস্ট  নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে। এটি ইউরেনাসের সবচেয়ে দূরবর্তী উপগ্রহ।


বিয়ান্কা (Bianca): ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। শেক্সপিয়রের 'দ্যা টেমিং অফ দ্যা শ্রু' নাটকের ক্যাথেরিনের বোন বিয়ান্কা-র নামানুসারে এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ইউরেনাসের দিক থেকে নিকটতম তৃতীয় উপগ্রহ। এই উপগ্রহটি পোর্শিয়া উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এর ব্যাস মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৫৯,১৬০ কিলোমিটার।


বেলিন্দা (Belinda) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারিতে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল- S/1986 U 5। পরে আলেক্সান্দার পোপ-এর দ্যা রেপ অফ দ্যা লক নামক কবিতার নায়িকার নামানুসারে এই গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এই উপগ্রহটি পোর্শিয়া উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য।

এর ব্যাস ৪৫ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৭৫,২৬০ কিলোমিটার।
 


মার্গারেট (Margaret) : ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ছবি বিশ্লেষণ করে মার্ক শো্য়াল্টার এব জ্যাক জে লিস্যার এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। এর প্রাথমিকভাবে নামকরণ করা হয়েছিল  S/2003 U 3। পরে শেক্সপিয়ারের মাচ অদো এ্যবাউট নাথিং নামক নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল।

মিরান্ডা (Miranda) :  ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে জেরার্ড কুইপার এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের টেমপেস্ট নাটকের মিরান্ডা নাম থেকে এই উপগ্রহের নাম গ্রহণ করা হয়েছে।

 

ধারণা করা হয়, এর অধিকাংশই পানির বরফ দ্বারা তৈরি। এর ব্যাস ২৩৫.৮ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ১২৯,৭৮০ কিলোমিটার। ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত ছবিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো।


ম্যাব (Mab) : ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ছবি বিশ্লেষণ করে মার্ক শো্য়াল্টার এব জ্যাক জে লিস্যার এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। এর প্রাথমিকভাবে নামকরণ করা হয়েছিলS/2003 U 1। পরে শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট নামক নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য ইংরেজি লোককথায় এই চরিত্রটি রানি ম্যাব নামে খ্যাত। এর ব্যাসার্ধ প্রায় ১৮ কিলোমিটার।

রোসালিন্ড (Rosalind) : ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারিতে ভয়েজার ২ মহাকাশ-যান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর প্রাথমিকভাবে নামকরণ করা হয়েছিল S/1986 U 4। পরে শেক্সপিয়ারের এ্যাজ ইউ লাইক ইট নাটকের ডিউকের কন্যার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য।

এর ব্যাস ২৭ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৬৮,৯৩০ কিলোমিটার।


সাইকোরাক্স (Sycorax):  ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে হেলে-এর টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন- ফিলিপ নিকোলসন, ব্রেট জে গ্লাডমেন, জোসেফ এ বার্নস এবং জন জে কাভেলার্স এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার-এর 'দ্যা টেমপেস্ট'- এর ক্যালিবান-এর নামানুসারে এই উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে। এই উপগ্রহটি ,পোর্শিয়া  উপগ্রহগুচ্ছের সদস্য। এর ব্যাস ৯৫ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ১,২২,১৩,০০০ কিলোমিটার।


সেটেবস (Setebos): ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই ফিলিপ নিকোলসন, ব্রেট জে গ্লাডমেন, জোসেফ এ বার্নস এবং জন জে কাভেলার্স এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/1999 U 1। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেষ্ট নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এর ব্যাস ২৪ কিলোমিটার।


স্টেফানো (Stephano): ৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই ফিলিপ নিকোলসন, ব্রেট জে গ্লাডমেন, জোসেফ এ বার্নস এবং জন জে কাভেলার্স এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছিল S/1999 U 2। পরে শেক্সপিয়ারের দ্যা টেমপেষ্ট নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এর ব্যাস ১০ কিলোমিটার। ইউরেনাসের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব ৭৯,৪৮,০০০ কিলোমিটার।