পৃথিবী
[অভিধান:
পৃথিবী]

সৌরজগতের একটি গ্রহ। সূর্যের দিক থেকে এর অবস্থান তৃতীয় এবং আকারে সৌর-গ্রহসমূহের ভিতর পঞ্চম। এর একমাত্র প্রাকৃতি উপগ্রহের নাম চন্দ্র
ইংরেজি : earth
ল্যাটিন : terra
জ্যোতির্বিজ্ঞান চিহ্ন :

 

সমার্থক বাংলা শব্দাবলি : এই গ্রহের সংস্কৃত এবং সংস্কৃতজাত শব্দের বিচারে পৃথিবীর বহু নাম। এই নামগুলো হলো অখিল, অখিলখণ্ড, অচলকীলা,অচলা, অদিতি, অদ্রিকীলা, অধিলোক, অনন্তা, অবনীমণ্ডল, অব্ধিদ্বীপা, অব্ধিমেখলা, অবনী, অবনীতল, আদিম, আদ্য, ইড়া, ইড়িকা,  ইরা,

সূচি

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন
পৃথিবীর পাত সঞ্চালন
পৃথিবীর কালপঞ্জী
পৃথিবীর ক্রমবিবর্তনের ধারা
পৃথিবীর ক্রমবিবর্তনের কালপর্যায়ের এককসমূহ
পৃথিবীর মহাদেশ ও তার ক্রমবিবর্তন
কালবিভাজন
পৃথিবীর বরফযুগ
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি-কথায় ধর্মীয় মতবাদ

ইলা, ইলিকা,  ইহজগৎ, ইহলোক, উদধিবস্ত্রা, উর্বরা, উর্বী, কাশ্যপী, কু, ক্রোড়কান্তা, ক্ষমা, ক্ষিতি, ক্ষিতিজ, ক্ষোণি, ক্ষৌণী, ক্ষ্মা, খগবতী, খণ্ডনী, গন্ধবতী, গিরিকর্ণিকা, গো, গোত্রা, চরাচর, জগ, জগৎ, জগতী, জগদ্বহা, জাহান, জীবলোক, জ্যা, দুনিয়া, দোহিনী,  দ্বিরা,ধরণী, ধরা, ধরাতল, ধরাধাম, ধরিত্রী, ধাত্রী, ধারণী, ধারতি, ধারয়িত্রী, ধারিণী, নরলোক, নিখিল, নিশ্চলা, নৃলোক, পারা, পিষ্টপ, পৃথিবী, পৃথিবীতল, পৃথিবীমণ্ডল, পৃথ্বী, বরা,বিপুলা, বসুধা, বসুন্ধরা, বসুমতী, বসুমাতা, বিশ্ব, বিশ্বম্ভরা, বীজপ্রসূ, বীজসূ, ভবলোক, ভুবন, ভুবনমাতা, ভূ, ভূখণ্ড, ভূতধাত্রী, ভূতল, ভূভাগ, ভূমণ্ডল, ভূমি, ভূর, ভূর্লোক, ভূলোক, মনুষ্যলোক,  মরজগৎ, মর্ত, মর্ত্যধাম, মর্ত্যলোক, মহা, মহাকান্তা, মহী, মহীমণ্ডল, মেদিনী, রত্নগর্ভা, রত্নাবতী, রসা, শ্যামা, সংসার, সর্বংসহা, সপ্তদ্বীপা, সমুদ্রমেখলা, সমুদ্রাম্বরা, সসাগরা, সাগরনেমি,  সাগরমেখলা, সাগরাম্ববরা, সৃষ্টি, সৃষ্টিতল, স্থিরা।

 

মহাকাশ থেকে এই গ্রহটিকে নীলাভ দেখায়। এখন পর্যন্ত সৌরজগতের একমাত্র জীবের বিকাশ ঘটেছে গ্রহে এমনটাই ধারণা করা হয়সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার (৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল)। পৃথিবী একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সাধারণ পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে। আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসের ৪ তারিখে। কক্ষপথে চলার সময় পৃথিবীর গতি হ্রাস বৃদ্ধি হয়। সাধারণত পৃথিবী যখন সূর্যের নিকটবর্তী হয়, তখন এর গতি সবচেয়ে বেশি থাকে। পৃথিবীর চলার গতির গড় মান ৬৬,৬০০ মাইল ঘণ্টা বা ১৮.৫ মাইল/সেকেন্ড (২৯.৬ কিলোমিটার.সেকেন্ড)।

পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে সময় নেয় ৮৬,৪০০ সেকেন্ড। আমরা একে হিসাবের সুবিধার জন্য ২৪ ঘণ্টা হিসাবে ধরে ১ সৌরদিন বিচার করে থাকি।  পৃথিবী
৩৬৫.২৫৬৩৬৬ দিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই প্রদক্ষিণের সময় ধরে
সৌর-বৎসর গণনা করা হয়। এক্ষেত্রে বাড়তি .২৫৬৩৬৬ দিন সময়ের সাথে বৎসরে হিসাবকে সমন্বয় করা জন্য অধিবর্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, পৃথিবী সূর্যকে পরিভ্রমণ করার সময়, সব সময় এর উত্তর মেরু ধ্রুবতারার দিকে থাকে।

 

পৃথিবী ঠিক সুষম গোলক নয়। এর দুই মেরু ঈষৎ চাপা এবং বিষুব অঞ্চল স্ফীত। বিষুব অঞ্চলে এর ব্যাস ৬৩৭৮.১৬০ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৬৩৫৭.৭৭৫ কিলোমিটার। এর ভর ৫.৯৭৩৬x১০২৪ কিলোগ্রাম। এর গড় ঘনত্ব ৫.৫১ গ্রাম/সেন্টিমিটার

 

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন

পৃথিবীর উপরিতলে রয়েছে সিলিকেট সমৃদ্ধ মাটি, নানবিধ জৈব ও অজৈব উপাদান। আর কেন্দ্রে রয়েছে কঠিন লৌহ পিণ্ড। পৃথিবীর উপরিতল থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৫১০০-৬৩৭৮ কিলোমিটার। এর ভূত্বক থেকে কেন্দ্রের ভিতরে রয়েছে নানা রকমের উপাদানের স্তর। এই সব স্তরের বস্তুসমূহ কঠিন, তরল, অর্ধতরল, চূর্ণ ইত্যাদি নানা রকম দশায় রয়েছে। কখনো কখনো পৃথিবীর অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে ভূত্বক ভেদ করে উপরে আসে। বিশাল বিশাল বস্তুপুঞ্জ নিয়ে গঠিত হয়েছে প্লেট। এই সকল প্লেটের সংঘর্ষে বা অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্টি হয় ভূমিকম্প। 

 

পৃথিবীর এই স্তরগুলোকে মোট টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো

 

১. কেন্দ্রমণ্ডল
    ১.১. মধ্য-কেন্দ্রমণ্ডল
    ২.২. ঊর্ধ্বকেন্দ্রমণ্ডল
২. কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের সীমানা

৩. গুরুমণ্ডল
    ৩.১. নিম্ন গুরুমণ্ডল
    ৩.২. ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল
৪.এ্যাস্থোনোস্ফিয়ার
৫. অশ্মমণ্ডল
৬. ভূত্বক

 

 
১. কেন্দ্রমণ্ডল (Core) :
পৃথিবীর সবচেয়ে কেন্দ্র অঞ্চলে এই মণ্ডল অবস্থিত। এই মণ্ডল দুটি ভাগে বিভক্ত। এই ভাগ দুটি হলো
 

১.১. মধ্য-কেন্দ্রমণ্ডল (Inner core) :
পৃথিবীর সবচেয়ে গড় উত্তপ্ত স্থান হলো এর কেন্দ্রমণ্ডল। তবে সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হলো কেন্দ্রমণ্ডলের নিকটস্থ ঊর্ধ্বমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় ৬১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর তাপমাত্রা প্রায় ৫৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫৭০০ কেলভিন)। পৃথিবীর উপরিতল থেকে এর দূরত্ব প্রায়  ৫১০০-৬৩৭৮ কিলোমিটার। এই অংশে রয়েছে কঠিন লৌহের গোলক। অনেকের মতে এই গোলকটি লোহা এবং নিকেলের সঙ্কর দশায় আছে। এর ব্যাস ১.২২০ কিলোমিটার (৭৬০) মাইল। এই আয়তন চাঁদের ৭০% -এর সমান।  এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ঊর্ধ্ব-কেন্দ্রের সঞ্চালিত হওয়ার কারণে, এই অঞ্চলের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল যে দুটি স্তরে বিভক্ত এবং অভ্যন্তর ভাগ তরল নয়, সে বিষয়ে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রখ্যাত ভূকম্প-বিজ্ঞানী Inge Lehmann একটি আভাষ দেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে অনুমান করা হয় যে, পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে কঠিন লোহ এবং অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বিষয়ে বিজ্ঞানীর নিশ্চিত হন।
 

১.২ ঊর্ধ্বকেন্দ্রমণ্ডল (outer core):
পৃথিবীর সবচেয়ে কেন্দ্রমণ্ডলের বাইরের দিকে অবস্থিত একটি স্তর। এই স্তরে রয়েছে গলিত লৌহ ও নিকেলর মিশ্রণ। ধারণা করা এই অংশে গন্ধক ও অক্সিজেন রয়েছে। এর পুরুত্ব ২,২৬৬ কিলোমিটার (১,৪০৮ মাইল)। পৃথিবীর ভূত্বক থেকে এর দূরত্ব ২,৯০০ কিলোমিটার (১,৮০০ মাইল)। এই অঞ্চলের একদম ভিতরে অর্থাৎ কেন্দ্রমণ্ডলের কঠিন লৌহ-অংশের কাছাকাছি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৬১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর বাইরে অংশের তাপমাত্রা ৪৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অঞ্চলের গলিত লৌহ বেশ চটচটে আঠালো তরল পদার্থের মতো। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরিতে এই অংশ মূখ্য ভূমিকা রয়েছে। এই অংশের চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তি প্রায় ২৫ গাউস। পৃথিবীর উপরিতলের চেয়ে উর্ধ্ব-কেন্দ্রমণ্ডলের এই চৌম্বক শক্তির পরিমাণ ৫০ গুণ বেশি। পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে পৃথিবীর জীবজগতের প্রকৃতি হয়তো অন্যরকম হতো। কারণ, পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডলে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাব পৃথিবীর বাইরের কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ফলে সূর্য থেকে আগত সৌর বাতাস সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে না। যা জীবজগতের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতো।

 
২. কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের সীমানা (Core–mantle boundary) :
কেন্দ্র মণ্ডল এবং গুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত একটি বিস্তৃত অঞ্চল। এই অঞ্চল দ্বারা উভ্য় মণ্ডল পৃথকভাবে অবস্থান করে। ভূত্বক থেকে এই সীমানার দূরত্ব এক রকম নয়। সাধারণভাবে ভূত্বক থেকে এর দূরত্ব ২৮০০-২৯০০ কিলোমিটারের ভিতর ধরা হয়। এর পুরুত্ব স্থান বিশেষে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই অঞ্চলে লৌহ-নিকেল, সিলিকাসমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে।
 
. গুরুমণ্ডল (Mantle):
এই মণ্ডলটি
ঊর্ধ্ব-কেন্দ্রমণ্ডলের উপরে অবস্থিত। একে বলা হয় অভ্যন্তরের পাথুরে আস্তরণ। তবে একে বলা হয়, অতি ঘন, চটচটে, আঠলো মণ্ডল। এই মণ্ডলটি শুরু হয়েছে
কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের সীমানার পর থেকে। এর ভিতরের শুরু স্থানের দূরত্ব  ২৯০০-২৮০০ কিলোমিটার (ভূত্বক থেকে)। এর পুরুত্ব প্রায় ২৯০০-২৮৫০ কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা ৫০০ থেকে ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই অংশটি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো- নিম্ন গুরুমণ্ডল ও ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল।

  ৩.১. নিম্ন গুরুমণ্ডল (lower mantle) :
এই মণ্ডলটি ঊর্ধ্ব-কেন্দ্রমণ্ডলের উপরে অবস্থিত। এর উপরের মণ্ডলটিকে বলা হয় ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল। এর বিস্তার ২৯০০-৬৬০ কিলোমিটার। এই মণ্ডলের নিম্নভাগ লৌহ ও নিকলের সমৃদ্ধ। ঊর্ধ্ব কেন্দ্রমণ্ডলের নিকটবর্তী স্থান থেকে এর শুরু বলে, এর তাপমাত্রাও অত্যধিক। ফলে এই মণ্ডলের যা কিছু আছে, তার সবই তরলাবস্থায় রয়েছে। এর উপরভাগের তারল্য অপেক্ষাকৃত কম। 
 
  ৩.২. ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল (outer mantle) :
এই মণ্ডলটি নিম্ন-গুরুমণ্ডলের উপরে অবস্থিত। এর উপরের মণ্ডলটিকে বলা হয় ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল। ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের উপরে রয়েছে এ্যাস্থোনোস্ফিয়ার। এই মণ্ডলের মণ্ডলের অন্যতম উপাদান হলো- অক্সিজেন এবং সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ, এ্যালমুনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের অক্সাইডসমূহ। নিম্ন গুরুমণ্ডলের চেয়ে এই মণ্ডলের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু তারপরেও মণ্ডলের উপাদানগুলোও তরলাবস্থায় থাকে। তবে এই অঞ্চলের তারল্য অত্যন্ত কম হওয়ায়, এর উপাদানগুলো চটচটে ঘন সুপের মতো হয়ে যায়।
 
. এ্যাস্থোনোস্ফিয়ার (asthenosphere):
এই মণ্ডলটি ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের উপরে অশ্মমণ্ডলের নিচে অবস্থিত। ভূত্বকের ২০০ থেকে ১০০ কিলোমিটার নিচে এই স্তরটি অবস্থিত। এই অংশটির উপাদানের তারল্য এতটাই কমে যায় যে, একে কঠিন ও তরলের মধ্যবর্তী স্তর বলা যেতে পারে। অত্যন্ত নমনীয় চটচটে পদার্থ সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের উপর থেকে শুরু হয় অশ্মমণ্ডলের কঠিন শিলা স্তর।
 
৫. অশ্মমণ্ডল (lithosphere):
এর অপর নাম শিলামণ্ডল। এই মণ্ডলটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার পুরু। এর উপরে রয়েছে ভূত্বক। এই অঞ্চলটি সুদৃঢ় পাথরে তৈরি। সাধারণভাবে যে কোনো পাথুরে গ্রহের উপরের স্তরকে পাথুরে স্তর (lithosphere) বলা হয়। পৃথিবীর ক্ষেত্রে পাথুরে স্তর শুধু গ্রহের উপরে পাথরের স্তর বুঝায় না। কারণ পৃথিবীর ভূত্বকের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মাটি। পৃথিবীর উপরের মাটি বা এই জাতীয় স্তর এবং এর নিচের কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত ভিত্তির উপরিভাগ একত্রে পাথুরে স্তর বা শিলামণ্ডল বলা হয়। তারপরেও এই মণ্ডলের উপরে একটি পাতলা স্তরকে ভূত্বক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
 
৬. ভূত্বক (crust) :
পৃথিবীর সবচেয়ে উপরে অংশ এবং সবচেয়ে পাতলা স্তরটি হলো ভূত্বক। ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের উপকরণ আর, ভূত্বকের উপকরণ একই। পার্থক্য একটাই। গুরুমণ্ডলের উপাদানগুলো উচ্চতাপে অতিঘন তরলাকারে থাকে। আর ভূত্বকের উপাদানগুলো থাকে অপেক্ষাকৃত শীতল এবং কঠিন। এই সকল উপাদান পৃথিবীর উপরিতলের নানা ধরনের পরিবর্তনশীল উপাদান দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে নানা রকমের পদার্থের জন্ম দেয়। এর ভিতরে রয়েছে পানি, জৈব উপাদান, নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা পরিবর্তিত পদার্থ  ইত্যাদি। ফলে ভূত্বকে পাওয়া যায়,  কঠিন পাথর বা ছোটো বড় পাথরের টুকরো, সিলিকা সমৃদ্ধ বালি, নানাভাবে পরিবর্তিত এবং মিশ্রিত পদার্থ হিসাবে মাটি এবং নানা রকমের খনিজ পদার্থ। 

 

ভূত্বকের প্রকৃতি অনুসারে এর উপাদানগুলোকে শিলা হিসাবে শনাক্ত করা হয়। গঠন প্রকৃতি অনুসারে প্রকৃতি শিলাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এইভাগ তিনটি হলো আগ্নেয়শিলা, রূপান্তরিক শিলা এবং পাললিক শিলা। তবে ভূত্বকের সকল জায়গায় একই রকম উপাদান পাওয়া যায় না।


ভূত্বকের গড় দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। স্থল ও জলভাগের বিশাল ব্যাপ্তীর বিচারে ভূত্বককে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো- মহাসাগরীয় ভূত্বক ও মহাদেশীয় ভূত্বক।