মিন সো মোন
Min Saw Mon
মুসলিম নাম: সুলেইমান শাহ
১৩৮০-১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দ।

আরাকান রাজ্য এর ম্রায়ুক উ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা।

১৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে লাঙ্গিয়েত রাজ্যের যুবরাজ রাজাথুর ঔরসে রাজকন্যা সো নিয়েৎ হ্ৎওয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যুবরাজ রাজাথু রাজত্ব লাভ করলেও ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে শিকারে পদচ্যুত হন। শেষ পর্যন্ত ১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনের দাবী ত্যাগ করেন। এই সময় রাজাথুর ছোট ভাই থেইনখাথু রাজত্ব লাভ করেন। ১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দে থেইনখাথুর মৃত্যুর পর, ১৪ই এপ্রিল সিংহাসন লাভ করেন মিন সো মোন।

এই সময় মিন সো মোন-এর রাজ্যের পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী আভা এবং পেগু রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। এদের দ্বারা প্রভাবিত রাজ্যের আমত্যবর্গ রাজ্যের অবস্থা অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। এই অবস্থার ভিতরে আভা রাজ্যের রাজা 'মিনখায়ুং প্রথম'  ১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মিন সো মোন-এর রাজ্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সেনাবাহিনী পাঠান। ২৯শে নভেম্বর এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে, মিন সো মোন বঙ্গদেশে পালিয়ে যান। এই সময় বঙ্গের শাসক ছিলেন রাজা গণেশ- এর পুত্র জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহ। নানা পথ ঘুরে মিন সো মোন ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে জালালউদ্দীন মুহম্মদ শাহের দরবারে সেনাবাহিনীতে চাকরি পান। তিনি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দক্ষতার পরিচয় দিলে, সুলতান তাঁকে পছন্দ করা শুরু করেন। পরে মিন সো মোন-এর রাজ্য হারানোর কাহিনী শুনে, তিনি তাঁকে রাজ্য উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য দান করেন। জনশ্রুতি রয়েছে, মিন সো মোন- গৌড়ে এসে সুফী হযরত মুহম্মদ জাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক একজন বিখ্যাত কামিল ব্যক্তির দরবার শরীফ-এ আশ্রয় নেন। এই সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সুলেইমান শাহ নামগ্রহণ করেন।

১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারির/মার্চ মাসের দিকে রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য যাত্রা করেন। এই যুদ্ধে জয় লাভ করে তিনি রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। এরপর সুলতানের সেনাপ্রধান ওয়ালি খানের সাথে তাঁর বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরেন। এই সূত্রে ওয়ালি খান তাঁকে গ্রেফতার করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল মিন সো মোন-এর পালিয়ে থাকা ভাই মিন খায়ই-এর এলাকার কাছে। এই ভাইয়ের সহায়তায় মিন সো মোন কৌশলে পালিয়ে সুলতানের কাছে ফিরে যান। এরপর সুলতান দ্বিতীয় বার রাজ্য উদ্ধারের জন্য সৈন্য দেন। ১৪২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল সিংহাসন উদ্ধারে সক্ষম হন। এরপর তিনি ধীরে শক্তি বৃদ্ধি করেন। তিনি রাজ্য পরিচালনার সুবিধার্থে ল্যাঙ্গিয়েৎ থেকে রাজধানী সরিয়ে আনেন এবং নতুন নগরী ম্রায়ুক উ-কে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। এই নগরী তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে এবং শেষ হয়েছিল ১৪৩২-৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে। এই বছরেই তিনি রাজধানী স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করেন। এর কিছু পরে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর মৃত্যুর পর, ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে তাঁর ছোট ভাই মিন খায়ই রাজ-সিংহাসনে বসেন।

১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলিত আরকানি মুদ্রা

বাংলার প্রতি কৃ্তজ্ঞতা স্বরূপ তিনি রাকানে বাংলার ইসলামি স্বর্ণমুদ্রা চালু করেছিলেন। গৌড়ের মুসলমানদের অনুকরণে মুদ্রা প্রথার প্রবর্তন হয়। মুদ্রার একপিঠে রাজার মুসলিম নাম ও অভিষেক কাল এবং অপর পিঠে মুসলমানদের কালিমা শরীফ আরবী হরফে লেখা হয়। পরবর্তীতে মিন সো মোনা নতুন মুদ্রা চালু করেন যার একপাশে ছিল বর্মি বর্ণ এবং অপরপাশে ছিল ফার্সি বর্ণ। এই ধারা অনুসরণে আরাকানের রাজার বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণমুদ্রা চালু করতেন। ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলিত এরূপ আরকানি মুদ্রার নমুনা দেওয়া হলো।

মিন সো মোনের তিনজন স্ত্রীর কথা জানা যায়। এঁরা হলেন সো সিৎ, সো পু নাইয়ো এবং সো পাইয়ায়ুক। এই তিন স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিল তিন পুত্র ও দুই কন্যা। পুত্ররা হলেন- মিন কায়য়ো, মিন মানাদাত এবং মিন মোন থিন। কন্যারা ছিলেন- সো পু শোউই এবং সো পিয়ো।


সূত্র: