অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮৭-১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ

প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, নন্দনতাত্ত্বিক এবং লেখক।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রপৌত্র এবং মহর্ষি
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভ্রাতা গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র।

১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নর্মাল স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। ১৮৮১- ৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সুহাসিনী দেবীর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খামখেয়ালী সভার সদস্য হন। এই বছরে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষা না দিয়েই। কলেজ ত্যাগ করেছিলেন। এরপর তিনি ইংরেজি, ফরাসি, সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করেন। তবে তাঁর বিশেষ ঝোঁক ছিল চিত্রকলার প্রতি। চিত্রকলার পাঠ শুরু করেছিলেন তৎকালীন আর্ট স্কুলের শিক্ষক ইতালীয় শিল্পী গিলার্ডির কাছে। এই শিক্ষকের কাছে তিনি ড্রয়িং, প্যাস্টেল ও জলরং শেখেন। এরপর তিনি ইংরেজ শিল্পী সি এল পামারের কাছে লাইফ স্টাডি, তেল রঙ ইত্যাদি শেখেন।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অবনীন্দ্রনাথ প্রথম নিরিক্ষাধর্মী চিত্র অঙ্কন শুরু করেন। ভারতীয় রীতিতে তার আঁকা প্রথম 'কৃষ্ণলীলা-সংক্রান্ত' চিত্রাবলী বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল।

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পাশ্চাত্য রীতির সাথে ভারতীয় রীতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি করেন 'শুক্লাভিসার' নামক ছবি অঙ্কন করেন। এই ছবিতে তিনি 'রাধা'র ছবি মাঝে গীতগোবিন্দ-এর পংক্তিমালা যুক্ত করেন। এই সময় কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ স্যার জন উডরফ হ্যাভেল তাঁকে শিক্ষক হওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন। অবনীন্দ্র প্রথমে রাজি হন নি। পর হ্যাভেল-এর পীড়াপীড়িতে ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর শিল্পাদর্শ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, ভগিনী নিবেদিতা, স্যার জন উডরফ হ্যাভেল এবং অন্যান্য সুধীজনের উদ্যোগে 'ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ ও রাণী মেরি ভারত ভ্রমণে এলে আর্ট গ্যলারী পরিদর্শনের সময় তাদেরকে ওরিয়েন্টাল আর্ট সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব পান তিনি। এই সময় কলকাতা অনুষ্ঠানের জন্য তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা মণ্ডপ সাজান। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন এবং প্যারিসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের চিত্রপ্রদর্শনী হয়। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর চিত্র প্রদর্শনী হয় জাপানে। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে জাপানি চিত্রশৈলী অনুসারে অঙ্কন করেন ওমর খৈয়াম

১৯৪২ সালে শিল্পীপত্নীর মৃত্যু হয়। এই বৎসরে তিনি বিশ্বভারতীর আচার্য-পদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।

চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি তিনি ছোটো ও বড়দের জন্য অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল নবযুগ পত্রিকার ১৩১১ শ্রাবণ সংখ্যায়। প্রবন্ধটির নাম ছিল নবদুর্ব্বা

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর অঙ্কিত বিখ্যাত চিত্রাবলী
সাহাজাদপুরের দৃশ্যাবলী
আরব্যপোন্যাসের গল্প
কবিকঙ্কন চণ্ডী
প্রত্যাবর্তন
জারনিস এন্ড
সাজাহান
কৃষ্ণলীলাবিষয়ক চিত্রাবলী
বজ্রমুকুট
ঋতুসংহার
বুদ্ধ
সুজাতা

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী
শকুন্তলা (১৮৯৫)
ক্ষীরের পুতুল (১৮৯৬)
রাজকাহিনী ও ভারতশিল্পী (১৯০৯)
ভূত পত্রীর দেশ (১৯১৫)
নালক (১৯১৬)
বাংলার ব্রত (১৯১৯)
খাজাঞ্জির খাতা ও প্রিয়দর্শিকা (১৯২১)
চিত্রাক্ষর (১৯২৯)
বুড়ো আংলা (১৯৪১)
জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪)
সহজ চিত্র শিক্ষা (১৯৪৬)
ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৭)
আলোর ফুলকি (১৯৪৭)
ভারত শিল্পে মূর্তি (১৯৪৭)
মাসি (১৯৫৪)
একে তিন তিনে এক (১৯৫৪)
শিল্পায়ন (১৯৫৫)
মারুতির পুঁথি (১৯৫৬)
রং বেরং (১৯৫৮)
কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬০)
বাদশাহী গল্প (১৯৭৬)


সূত্র :