বাল গঙ্গাধর তিলক
(১৮৫৬-১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাল গঙ্গাধরের প্রকৃত নাম কেশব গঙ্গাধর।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম গঙ্গাধর তিলক ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মাত্র ১৬ বৎসর বয়সে, বাল গঙ্গাধরের পিতার মৃত্যু হয়। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পুনের ডেকান কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক শ্রেণিতে উত্তীরণ হন। এরপর এমএসসিতে ভর্তি হওয়ার পর, তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে এলএলবি-তে ভর্তি হন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন।

তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বেসরকারি কলেজে গণিতের শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। পরে সহশিক্ষকদের সাথে মতানৈক্য হলে- তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।  

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাল গঙ্গাধর ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গান্ধীজীর পূর্বে বাল গঙ্গাধর ছিলেন প্রধান রাজনৈতিক নেতা। তবে তাঁর রাজনীতি গান্ধীর অহিংস রীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তাঁর উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কয়েকবার কারাবরণ করেন।

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে বোম্বাই শহরে প্লেগের সূত্রপাত হয়েছিল। পরে তা পুনে শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্লেগ মহামারি আকার ধারণ করলে,প্লেগ নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশ সরকার র্যাণ্ড নামক জনৈক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। র্যান্ড প্লেগ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, তিনি ব্রিটিশ সরকারকে সেনাবাহিনী নিয়োগের পরামর্শ দেন। সেনাবাহিনী প্লেগ নিয়ন্ত্রণের নামে সাধারণ মানুষের উপর রীতিমতো অত্যাচার চালায়। বাল গঙ্গাধর 'মারাঠা' ও 'কেশরী' পত্রিকায় এর মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ করে। এর ফলে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ সোচ্চার হয়ে ওঠে। এই কারণে তাঁর দেড় বছরের জেল হয়।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বাল গঙ্গাধর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে, সংবাদপত্র ও গণপ্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মান্দালয় জেলে প্রেরণ করা হয়। এই জেলে থাকার সময় তিনি 'গীতা রহস্য' গ্রন্থ রচনা করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এই কারণে তাঁকে আবার কারাবরণ করতে হয়।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জিএস খপার্ডে এবং অ্যানি বেসান্তের সাথে মিলিত হয়ে 'অল ইন্ডিয়া হোম রুল লিগ' নামে একটি দল তৈরি করেন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা আগষ্ট বালগঙ্গাধর মৃত্যুবরণ করেন।

 

সূত্র: