আইনস্টাইন, আলবার্ট
ইংরেজি: alberts einstain
জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী।

১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই মার্চ, তৎকালীন জার্মান সাম্রাজ্যের
Württemberg  রাজ্যের মিউনিখ শহর থেকে ১৩৪ কিলোমিটার দূরে উল্‌ম শহরের এক মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আইনস্টাইনের বাবার নাম হেরমান আইনস্টাইন (Hermann Einstein) এবং মায়ের নাম পলিন আইনস্টাইন (Hermann Einstein)। তাঁর ছিলেন প্রকৌশলী। তিনি অবশ্য এই সময় একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়-কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই পরিবার মিউনিখ শহরে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি একটি তড়িৎযন্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে মোটামুটি সফলতা পান। এই কোম্পানির নাম ছিল Elektrotechnische Fabrik J. Einstein & Cie। এই কোম্পানি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি করতো এবং বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থাও করে দিত। এই সময় তাঁর মা পলিন পরিবারের অভ্যন্তরীণ সব দায়িত্ব পালন করতেন। আইনস্টাইনের জন্মের দুই বছর পর তাঁর বোন মাজা'র জন্ম হয়।

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পাঁচ বৎসর বয়সে  ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এই স্কুলের সূত্রে তিনি  বেশ ধার্মিক হয়ে উঠেছিলেন।  মায়ের আগ্রহে মাত্র ৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন বেহালা হাতে নেন। তবে সে সময়ে তিনি বেহালা বাজানো খুব একটা পছন্দ করতে পারেন নি। তাই কিছুটা শেখার পর তা ছেড়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে স্কুল থেকে এনে  মিউনিখের লুইটবোল্ড জিমনেশিয়াম স্কুলে ভর্তি করা হয়। এই স্কুলে তিনি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এই স্কুলে থাকার সময় তাঁর বাবা তাঁকে একটি কম্পাস যন্ত্র উপহার দেন। এই যন্ত্র দেখে তিনি অনুভব করেন যে, কোনো অদৃশ্য শক্তি কম্পাসের কাঁটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তা শূন্যের ভিতর দিয়ে কার্যকর হচ্ছে।

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পোল্যান্ড থেকে আগত দরিদ্র ইহুদি পরিবারের মাক্স টালমুড-এর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। টালমুড ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র। টালমুড তাঁকে সেকালের জনপ্রিয় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বই উপহার দেন। এর ভিতরে ছিল অ্যারন বার্নস্টাইন লিখিত শিশু বিজ্ঞান সিরিজের
(Naturwissenschaftliche Volksbucher, ১৮৬৭-৬৮), ইউক্লিডের এলিমেন্টস, ইমানুয়েল কান্টের 'ক্রিটিক অফ পিওর রেজন'। ইউক্লিডের এলিমেন্ট্‌স পড়ে তিনি এতটাই মুগ্ধ হন যে, অনেক বড় হয়েও এই বইটিকে ভুলতে পারেন নি। তিনি এই বইটির নাম দিয়েছিলেন  "পবিত্র ছোট্ট জ্যামিতির বই"।

আইনস্টাইনের বাবা ব্যবসায় ক্ষতির শিকার হলে, ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বাবা জীবিকার সন্ধানে ইতালির মিলান শহরে চলে যান। এই সময় তাঁরা আইনস্টাইনকে লেখাপড়া শেষ করার জন্য স্কুল হোস্টেলে রেখে যান। কিছুদিন পর আইনস্টাইনের বাবা পাভিয়াতে এসে বাস করা শুরু করেন। সে বছর স্কুল পরীক্ষা শেষ পরে আইনস্টাইন নিজেই পাভিয়াতে বাবা-মায়ের কাছে চলে যান। এই সময় এখানকার কোনো স্কুলে তাঁকে ভর্তি করা সম্ভব না হলে, তিনি ঘরেই লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন সুইজারল্যান্ডের জুরিখের অবস্থিত
Eidgenössische Polytechnische Schule (সুইজ ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুল) -এ। ভর্তি পরীক্ষায় তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে ভাল করেছিলেন, কিন্তু অকৃতকার্য হয়েছিলেন ফরাসি ভাষা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে। গণিতে অনেক ভাল করার জন্য তাকে পলিটেকনিকে ভর্তি করে নেয়া হয় একটি শর্তে। শর্তটি ছিল তাঁকে সাধারণ স্কুলের পর্যায়গুলো অতিক্রম করে আসতে হবে। এই কারণে তিনি সুইজারল্যান্ডের আরাইতে জস্ট উইন্টেলার কর্তৃক পরিচালিত একটি বিশেষ ধরণের স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট লাভ করেন। এই সময় রাষ্ট্রীয় চাপে সামরিক দায়িত্ব পালন এড়ানোর জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে জুরিখের ইটিএইচ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি পাশ করেন। এই বৎসরে প্রকাশিত হয়, তাঁর "Folgerungen aus den Capillaritätserscheinungen" ("Conclusions from the Capillarity Phenomena") নামক প্রবন্ধ।

আইনস্টাইন, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ

১৮৯৬ থেকে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কোনো দেশেরই নাগরিক ছিলেন না। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি সুইজার‌ল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ করেন। জুরিখে লেখাপড়ার সময় সার্বিয়া থেকে আগত পদার্থবিজ্ঞানের ফেলো ছাত্রী  মিলেভা মেরিকের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। বিয়ের আগেই ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁদের প্রথম কন্যা সন্তান Lieserl Einstein-এর জন্ম হয়। অবশ্য এই সন্তান শৈশবেই মারা যায়।

স্নাতক হবার পর আইনস্টাইন প্রথমে কোনো চাকরি খুঁজে পান নি। দুই বৎসর পর তাঁর এক প্রাক্তন সহপাঠীর বাবা, তাঁকে বার্নের 'ফেডারেল অফিস ফর ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি' নামক একটি পেটেন্ট অফিসে সহকারী পরীক্ষকের চাকরি দেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল, আগত পেটেন্টগুলোকে তাড়িতচৌম্বক যন্ত্রের জন্য পরীক্ষা করা। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে এই অফিসে তাঁর এই চাকরি স্থায়ী হয়ে যায়। আইনস্টাইন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি মিলেভা মেরিককে বিয়ে করেন।

এই সময় এই অফিসে আইনস্টাইনের কলেজ সহপাঠী মিশেল বেসোও কাজ করতেন। কাজের বাইরে এঁরা "দ্য অলিম্পিয়া একাডেমি" নামক একটি শিক্ষামূলক সংঘ তৈরি করেন।

১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই মে আলবার্ট এবং মিলেভার প্রথম পুত্রসন্তান হ্যান্স আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম হয়। উল্লেখ্য তাদের দ্বিতীয় পুত্র এদুয়ার্দ আইনস্টাইনের জন্ম হয় ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে ২৮শে জুলাই।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে পেটেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে আইনস্টাইন
Annalen der Physik নামক জার্মান বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্র চারটির বিষয় ছিল

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার উপদেষ্টা ছিলেন পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলফ্রেড ক্লাইনার। তার পিএইডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল, "আ নিউ ডিটারমিনেশন অফ মলিক্যুলার ডাইমেনশন্‌স" তথা আণবিক মাত্রা বিষয়ে একটি নতুন নিরুপণ।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে পেটেন্ট অফিস আইনস্টাইনকে টেকনিক্যাল পরীক্ষকের পদে উন্নীত করে।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক (
privatdozent) হিসেবে যোগ দেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আরও দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। প্রথমটিতে তিনি বলেন, ম্যাক্স প্লাংকের শক্তি-কোয়ান্টার অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ভরবেগ থাকতে হবে এবং তা একটি স্বাধীন বিন্দুবৎ কণার মত আচরণ করবে। এই গবেষণাপত্রেই ফোটন ধারণাটির জন্ম হয়। অবশ্য ফোটন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন গিলবার্ট এন লুইস ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে। তবে আইনস্টাইনের গবেষণায়ই ফোটনের প্রকৃত অর্থ বোঝা যায় এবং এর ফলে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা বিষয়ক ধারণার উৎপত্তি ঘটে। এই বৎসরে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্রান্তীয় অনচ্ছতা বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এতে পরিবেশে একক অণু কর্তৃক বিচ্ছুরিত আলোর ক্রমপুঞ্জিত প্রভাব বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এর মাধ্যমেই আকাশ কেন নীল দেখায় তার রহস্য উন্মোচিত হয়। এই বৎসরে জন্ম গ্রহণ করে তাঁর তৃতীয় পুত্র এডুয়ার্ড।

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'চার্লস ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগ'-এর পূর্ণ অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। প্রাগে অবস্থানকালে আলোর উপর মহাকর্ষের প্রভাব বিশেষত মহাকর্ষীয় লাল সরণ এবং আলোর মহাকর্ষীয় ডিফ্লেকশন বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এর মাধ্যমে সূর্যগ্রহণের (
Solar eclipse) সময় আলোর ডিফ্লেকশনের বিষয়ে সমাধান পাওয়া যায়। এ সময় জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Erwin Freundlich বিজ্ঞানীদের প্রতি আইনস্টাইনের অভিমত প্রচার করতে শুরু করেন। এই সময় তিনি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার জুরিখ বিশ্বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
Kaiser Wilhelm Institute for Physics নামক প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। এই সূত্রে তিনি জার্মানির নাগরিকত্ব লাভ করেন। জার্মানিতে আসার পর, তিনি Humboldt University of Berlin-এ অধ্যাপক হিসেবেও যোগদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত বাধ্যবাধকতার জন্য, তিনি অধ্যাপনা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি 'প্রুশিয়ান এ্যাকডেমি অফ সায়েন্স' সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডন্ট হন। এই পদে তিনি ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানি সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে Weimar Republic গঠিত হয়। এই সূত্রে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই নতুন রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর এই নাগরিকত্ব বজায় ছিল। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মিলেভা মেরিকের-এর সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এই বৎসরে তিনি এলসা (Elsa Löwenthal)-কে বিবাহ করেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এই বৎসরের ২রা এপ্রিল তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর প্রভণ করেন।  এরপর তিনি কলাম্বিয়া এবং প্রিন্সটন বিশ্যাবিদ্যালয়ে কয়েকটি ভাষণ দেন। এই সময় হোয়াইট হাউসে তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তিনি ইংল্যান্ডের কিংস কলেজে ভাষণ দেন।


রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন

রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের মধ্যে মোট চারবার সাক্ষাৎ ঘটে। রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ ও ১৯২৬ সালে জার্মানী সফর করেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় জার্মানী সফরের সময় ১৯২৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আইনস্টাইনের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয় কাপুথে আইনস্টাইন ভিলায়।  রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের মধ্যে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ ঘটে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তাঁদের মধ্যে চতুর্থবার এবং শেষবার দেখা হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে।
দেখুন: রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন কথোপকথন

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে  তিনি সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা এবং জাপান ভ্রমণ করেন। এছাড়া তিনি প্যালেস্টাইন অঞ্চল ভ্রমণ করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এখানকার California Institute of Technology-এ তিনি দুই মাসের জন্য গবেষণাকর্মে সময় দেন।

এই বৎসরে ১৪ই জুলাই মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সাথে তাঁর দেখা হয়। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগষ্ট নিউইর্য়ক টাইম-এ এই আলোচনার অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়। আলোচনার পূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে জানুয়ারি মাসে মডার্ণ রিভিউ পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথের বন্ধু রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত এই সাক্ষাৎকারের বয়ানটি ছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অনুমোদিত। এই সাক্ষাৎকারের সময় কবির সঙ্গে ছিলেন অমিয় চক্রবর্তী। তার নোট থেকেই এটি মুদ্রিত হয়েছিল। []

সাক্ষ্যাৎকারের আলোচ্য বিষয় প্রকাশ হয়  এতে আলোচনার সম্পূর্ণ অংশ ছিল না। তবে আলোচনার পূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে জানুয়ারি মাসে মডার্ণ রিভিউ পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথের বন্ধু রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত এই সাক্ষাৎকারের বয়ানটি ছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অনুমোদিত। কাপুথে রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন এর সাক্ষাৎকারের সময় কবির সঙ্গে ছিলেন অমিয় চক্রবর্তী। তার নোট থেকেই এটি মুদ্রিত হয়েছিল। নীচে সেই অনুমোদিত বয়ানটিই বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুলাই জার্মানির প্রুশিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে। আর এর কয়েকদিন পরে জার্মানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে নাৎসি এবং কেডিপি দল ৫২% ভোট পায়। এর ভিতরে নাৎসি দল পায় ৩৭.৪% ভোট। ফলে নাৎসি দল নিজেদেরকে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়। এই নির্বাচনের জয়ের সূত্রে হিটলার জার্মানীর চ্যাঞ্চেলর হন। নাৎসি দলের ক্ষমতা লাভের জন্য আইনস্টাইন ইহুদি হিসেবে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আইনস্টাইন যখন তৃতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তখন চূড়ান্তভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আর জার্মানিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি তিন মাস California Institute of Technology-এ অতিথি শিক্ষক হিসেবে যুক্ত থাকেন। মার্চ মাসের দিকে জাহাজে করে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী এলসা বেলজিয়ামে আসেন। পথিমধ্যে তিনি জানতে পারেন যে, নাৎসিরা তাঁর বাসভবনে হানা দিয়েছে এবং তাঁর ব্যাক্তিগত পালতোলা জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করেছে। ২৮শে মার্চ জার্মান কনসুলেটরের কাছে, তিনি তাঁর পাসপোর্ট জমা দেন এবং জার্মান নাগরিত্ব ত্যাগ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে জার্মানিতে ইহুদের যে কোন ধরনের অফিসিয়াল পদ ধারণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সময় কোনো কোনো জার্মান পত্রিকায় তাঁকে জার্মানির শত্রু হিসেবেও উল্লেখ করে। জুলাই মাসে তিনি ব্রিটিশ নৌ- কমাণ্ডার অলিভার লকারের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডে যান। এই সূত্রে তাঁর সাথে উইনস্টন চার্চিলের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। এর পরবর্তী কয়েকটি মাস তিনি ইউরোপে রাজনৈতিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে কাটান। অক্টোবর মাসে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলে আসেন এবং নিউ জার্সির প্রিন্সটনে অবস্থিত Institute for Advanced Study-তে যোগদান করেন। এই সময় ইউরোপের অন্যান্য বিশ্বিদ্যালয়ে যোগদানের আমন্ত্রণ পান। কোথায় থাকবেন এ নিয়ে তিনি অনেকটাই অস্থির ভাবনার মধ্য দিয়ে কাটান। অবশেষে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্‌কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই কারণে তিনি মার্কিন সরকারের কাছে নাগরিকত্ব লাভের আবেদন করেন।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে হৃদপিণ্ড এবং বৃক্কের জটিলতায় তাঁর স্ত্রী এলসা মৃত্যবরণ করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। নাগরিকত্ব লাভের পর তিনি 
Institute for Advanced Study-তে থেকে যান এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সাথেই থেকে যান।

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল তিনি প্রিন্সটনে মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার লাভ


সূত্র: