হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী
(১৯০৬- ১৯৬৬)
রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ফেণী মহকুমার গুথুমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী মুন্সেফ । মায়ের নাম আসিয়া খাতুন চৌধুরানী।

মাত্র আড়াই বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। এরপর তিনি তাঁর মাতামহ খান বাহাদুর আব্দুল আজিজের চট্টগ্রামের তামাকুণ্ডস্থ বাড়িতে তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শামসুন নাহার মাহমুদ প্রতিপালিত হন। এখানই তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। এরপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এই কলেজে থাকার সময় তিনি ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি এই কলেজের ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ তার নেতৃত্বে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব "এ" দলে উন্নীত হয়।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পুলিশ সার্ভিস বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মাষ্টার দা সূর্যসেনের সশস্ত্র সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে, তাঁকে পুলিশ বিভাগে নেওয়া হয় নি।

১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা থেকে হবীবুল্লাহ্ বাহার ও তাঁর ছোট বোন শামসুন নাহার মাহমুদ যুগ্ম সম্পাদনায় বুলবুল পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই সময় তিনি আনোয়ারা বাহার চৌধুরীকে বিবাহ করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম সন্তান আনোয়ার বাহার চৌধুরীর জন্ম হয়।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান রেনেসা সোসাইটি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক এবং বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি'র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফেনীর পরশুরাম থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী দাঙ্গার সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নোয়াখালী সফরে তিনি তার সফরসঙ্গী ছিলেন। তবে পূর্ব-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এই সূত্রে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং সাহিত্যচর্চা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  

স্ত্রীর নাম: আনোয়ারা বাহার চৌধুরী।
সন্তান: ইকবাল বাহার চৌধুরী, সেলিনা বাহার জামান, নাসরিন সমাস, তাজিন চৌধুরী।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ-পাকিস্তান, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ওমর ফারুক, আমীর আলী।