ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, বাংলা ভাষা সংস্কারক ও গদ্য লেখক।
১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর (১২ আশ্বিন, ১২২৭ বঙ্গাব্দ), মঙ্গলবার তদানীন্তন হুগলি জেলার (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবিধ বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের পাণ্ডিত্যের জন্য 'বিদ্যাসাগর' উপাধি লাভ করেছিলেন।

পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। স্ত্রীর নাম  দীনময়ী দেবী। তাঁর পিতামহের নাম রামজয় তর্কভূষণ। পণ্ডিত হিসাবে রামজয়ের সুনাম থাকলেও, তিনি অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। ভাইদের সাথে মনমালিন্য হওয়ার জন্য রামজয় গৃহত্যাগ করলে, তাঁর স্ত্রী দুর্গাদেবী (বিদ্যাসাগরের পিতামহী) পুত্রকন্যা নিয়ে দুরবস্থায় পড়েন এবং তিনি তাঁর পিতার বাড়ি বীরসিংহ গ্রামে চলে আসেন। এই কারণে বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগরের মামার বাড়ি হলেও পরে সেটাই তাঁর আপন গ্রামে পরিণত হয়। আর্থিক অসুবিধার কারণে দুর্গাদেবী জ্যেষ্ঠ সন্তান ঠাকুরদাস কৈশোরেই উপার্জনের জন্য কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে তিনি অতি সামান্য বেতনে চাকুরি গ্রহণ করেন। পরে তেইশ-চব্বিশ বৎসর বয়সে তিনি গোঘাট নিবাসী রামকান্ত তর্কবাগীশের কন্যা ভগবতী দেবীকে বিবাহ করেন। আর্থিক অনটনের জন্য তাঁর পক্ষে সপরিবার শহরে বাস করা সাধ্যাতীত ছিল। তাই শৈশব ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুরমা দুর্গাদেবীর কাছেই প্রতিপালিত হন।

পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভর্তি হন। এই পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে সংখ্যাচিহ্ন শিখেছিলেন। এই সময় ঠাকুরদাশ এবং বিদ্যাসাগর কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে আশ্রয় নেন। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন সোমবার, কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ও নদিয়া নিবাসী মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায় মোট সাড়ে তিন বছর তিনি ওই শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেছিলেন।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি পান এবং 'আউট স্টুডেন্ট' হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা উপহার পান। উল্লেখ্য তৎকালীন সংস্কৃত কলেজে মাসিক বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের 'পে স্টুডেন্ট' ও অন্য ছাত্রদের 'আউট স্টুডেন্ট' বলা হত। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাব্য শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই সময় তিনি শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'পে স্টুডেন্ট' হিসেবে মাসিক ৫ টাকা পেতেন। ১৮৩৪-৩৫ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য তিনি ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক উপহার পান। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অলঙ্কার শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানে তিনি শিক্ষক হিসাবে পান পণ্ডিত প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশকে। এই শ্রেণিতে তিনি এক বৎসর শিক্ষালাভ করেন। ১৯৩৫-৩৬ বৎসরের বাৎসরিক পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ সংখ্যক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এই কারণে তিনি কলেজ থেকে রঘুবংশম্, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতী মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্বশী ও মৃচ্ছকটিক গ্রন্থসমূহ উপহার পান।

১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণিতে। সেই যুগে স্মৃতি পড়তে হলে আগে বেদান্ত ও ন্যায়দর্শন পড়তে হত। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মেধায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরাসরি স্মৃতি শ্রেণীতে ভর্তি করে নেন। এই পরীক্ষাতেও তিনি অসামান্য কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন এবং  ত্রিপুরায় জেলা জজ পণ্ডিতের পদ পেয়েও পিতার অনুরোধে, তা প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণীতে। ১৮৩৮ সালে সমাপ্ত করেন বেদান্ত পাঠ। ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল মাসে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে, ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি ব্যবহৃত হয়।

এরপর তিনি কৃতিত্বের সাথে 'ন্যায় শ্রেণী' ও 'জ্যোতিষ শ্রেণী'তে শিক্ষালাভ করেন।  ১৮৪০-৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'ন্যায় শ্রেণী'তে পাঠ করেন। এই শ্রেণীতে দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে তিনি পারিতোষিক পান। ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় কোম্পানির রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা – সর্বসাকুল্যে ২৩৩ টাকা পারিতোষিক পেয়েছিলেন।

বিবাহ : আনুমানিক ১১ বৎসর বয়সে তিনি ক্ষীরপাই নিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের কন্যা দীনময়ী দেবীকে বিবাহ করেন।

কর্মজীবন :  ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত শেষ করার পর, ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। সে সময় তাঁর বেতন ছিল মাসে ৫০ টাকা। সংস্কৃত কলেজের রামমাণিক্য বিদ্যালঙ্কারের মৃত্যুতে একটি পদ শূন্য হলে, তিনি ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় তিনি ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই তারিখে সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর এই বছরের ১ মার্চ পাঁচ হাজার টাকা জামিনে, মাসিক ৮০ টাকা বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এই বৎসরেই তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধু ও হিতৈষীদের সহযোগিতায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে স্থাপনা করেন 'সর্ব্বশুভকরী সভা'। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহযোগিতায় তিনি সর্ব্বশুভকরী নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে ইস্তফা দেন এবং ৫ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তারিখে তিনি সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ ছাড়াও কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারির কার্যভারও গ্রহণ করেন। ২২ জানুয়ারি ১৫০ টাকা বেতনে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এই সময় থেকেই সংস্কৃত কলেজে সেক্রেটারির পদটি বিলুপ্ত হয়। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিয়ে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। ৯ জুলাই, পূর্বতন রীতি বদলে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থদের সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন। ২৬ জুলাই প্রবর্তিত হয় রবিবারের সাপ্তাহিক ছুটির প্রথা। উল্লেখ্য এর আগে প্রতি অষ্টমী ও প্রতিপদ তিথিতে ছুটি থাকত। ডিসেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজকে সকল বর্ণের সম্ভ্রান্ত হিন্দু সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ২৬ অনুচ্ছেদ সম্বলিত নোটস অন দ্য সংস্কৃত কলেজ প্রস্তুত হয়।

১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নিজের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে তিনশো টাকা হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের প্রাচ্য ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভেঙে বোর্ড অফ একজামিনার্স গঠিত হয়। বিদ্যাসাগর এইবোর্ডের সদস্য মনোনীত হন।

১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মফস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পাল্কিতে বসে তিনি বর্ণপরিচয়-এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। ১লা মে-তে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়াও মাসিক অতিরিক্ত ২০০ টাকা বেতনে দক্ষিণবঙ্গে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে নিযুক্ত হন। ১৭ই জুলাইতে বাংলা শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সংস্কৃত কলেজের অধীনে, ওই কলেজের প্রাতঃকালীন বিভাগে নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করেন। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন অক্ষয়কুমার দত্ত। এই বছরেই দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় একাধিক মডেল স্কুল বা বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে নদিয়ায় পাঁচটি, আগস্ট-অক্টোবরে বর্ধমানে পাঁচটি, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে হুগলিতে পাঁচটি এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় চারটি বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। অক্টোবর মাসে বিধবা বিবাহ বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করার পর্যাপ্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণসহ 'বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব' – দ্বিতীয় পুস্তক প্রকাশ করেন। বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহুসাক্ষর সম্বলিত এক আবেদনপত্রও পাঠান। ২৭ ডিসেম্বর আরেকটি আবেদনপত্র পাঠান বহু বিবাহ নিবারণ বিধির জন্য।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি মেদিনীপুরে পঞ্চম বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়। ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম বিধবা বিবাহ আয়োজিত হয় ১২, সুকিয়া স্ট্রিটে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। পাত্র ছিলেন প্রসিদ্ধ কথক রামধন তর্কবাগীশের কণিষ্ঠ পুত্র তথা সংস্কৃত কলেজের কৃতি ছাত্র ও অধ্যাপক, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। পাত্রী ছিলেন বর্ধমান জেলার পলাশডাঙা গ্রামের অধিবাসী ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দ্বাদশ বর্ষীয়া বিধবা কন্যা কালীমতী।

১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জানুয়ারিতে স্থাপিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য তথা ফেলো মনোনীত হন। এই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হুগলি জেলায় সাতটি ও বর্ধমান জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরের বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে হুগলিতে আরও তেরোটি, বর্ধমানে দশটি, মেদিনীপুরে তিনটি ও নদিয়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর মহাশয় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। মোট ১৩০০ ছাত্রীসম্বলিত এই বিদ্যালয়গুলির জন্য তাঁর খরচ হতো মাসে ৮৪৫ টাকা। এই ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করেন।

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত হয় সোমপ্রকাশ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনার নেপথ্যে তিনি ছিলেন। দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত এটিই প্রথম পত্রিকা, যাতে রাজনৈতিক বিষয় স্থান পেয়েছিল। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ১ এপ্রিল পাইকপাড়ার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুর্শিদাবাদের কান্দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি-বাংলা স্কুল। কিছুকাল এই প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন তিনি।

২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটান থিয়েটারে উমেশচন্দ্র মিত্র রচিত নাটক বিধবা বিবাহ প্রথম অভিনীত হয়। ২৩ এপ্রিল রামগোপাল মল্লিকের সিঁদুরিয়াপট্টির বাসভবনে সেই নাটকের অভিনয় দেখেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। মে মাসে তত্ত্ববোধিনী সভা ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে মিশে গেলে উক্ত সভার সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর গণশিক্ষার প্রসারে সরকারি অনুদানের জন্য বাংলার গভর্নরের নিকট আবেদন করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে বোর্ড অফ একজামিনার্সের পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি।

১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কলিকাতা ট্রেনিং স্কুলের সেক্রেটারি মনোনীত হন। এই বছর ডিসেম্বর মাসে হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকালপ্রয়াণে, তিনি  তাঁর সম্পদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার পরিচালনভার গ্রহণ করেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণদাস পালকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করেন। এই বছর তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বাণভট্টের কাদম্বরী। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁকে উৎসর্গ করেন স্বরচিত বীরাঙ্গনা কাব্য

১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকার তাঁকে ওয়ার্ডস ইনস্টিটিউশনের পরিদর্শক নিযুক্ত করেন। উল্লেখ্য, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী নাবালক জমিদারদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে এই ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা ট্রেনিং স্কুলের নাম পরিবর্তন করে কলিকাতা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন রাখা হয়। ৪ জুলাই ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁকে সাম্মানিক সদস্য নির্বাচিত করে। ২রা আগস্ট ফ্রান্সে ঋণগ্রস্থ মাইকেল মধুসূদনের সাহায্যার্থে ১৫০০ টাকা প্রেরণ করেন তিনি। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি ওয়ার্ডস ইনস্টিটিউশনের পরিদর্শক হিসেবে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁর প্রথম রিপোর্টটি পেশ করেন।

১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি বহুবিবাহ রদের জন্য দ্বিতীয়বার ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভার নিকট আবেদনপত্র পাঠান। ১৮৬৭ সালের জুলাই মাসে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা হেমলতার সঙ্গে গোপালচন্দ্র সমাজপতির বিবাহ হয়। এবছর অনাসৃষ্টির কারণে বাংলায় তীব্র অন্নসংকট দেখা দিলে তিনি বীরসিংহ গ্রামে নিজ ব্যয়ে একটি অন্নসত্র স্থাপন করেন। ছয় মাস দৈনিক চার-পাঁচশো নরনারী ও শিশু এই অন্নসত্র থেকে অন্ন, বস্ত্র ও চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিল। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি মাসে তিনি বেথুন বালিকা বিদ্যালয়ের সেক্রেটারির পদ ত্যাগ করেন। এপ্রিল মাসে তাঁর সম্পাদনায় কালিদাসের মেঘদূতম্ প্রকাশিত হয়। এই বছরে বীরসিংহ গ্রামে তাঁর পৈত্রিক বাসভবনটি ভস্মীভূত হয়। এরপর তিনি চিরতরে জন্মগ্রাম বীরসিংহ ত্যাগ করেন।

১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের বিজ্ঞান সভায় এক হাজার টাকা দান করেন। ১১শে আগস্ট তাঁর বাইশ বছর বয়সী পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগর নিবাসী শম্ভুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্দশবর্ষীয়া বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল কাশীতে তাঁর মা ভগবতী দেবী মৃত্যবরণ করেন।

১৮৭১-৭২ সাল নাগাদ তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। জলহাওয়া পরিবর্তনের জন্য তিনি কার্মাটারে (বর্তমানে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত) একটি বাগানবাড়ি কেনেন। সেখানে একটি স্কুলও স্থাপন করেন। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন হিন্দু বিধবাদের সাহায্যার্থে হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুয়িটি ফান্ড নামে একটি জনহিতকর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। স্বল্প আয়ের সাধারণ বাঙালির মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-পুত্র পরিবারবর্গ যাতে চরম অর্থকষ্টে না পড়েন, তার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছিল। বিদ্যাসাগর ছিলেন এর অন্যতম ট্রাস্টি। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে স্থাপিত হয় মেট্রোপলিটান কলেজ। সেযুগের এই বেসরকারি কলেজটিই বর্তমানে কলকাতার বিখ্যাত 'বিদ্যাসাগর কলেজ' নামে পরিচিত। ১৬ আগষ্ট মাইকেল মধুসূদনের নাটক শর্মিষ্ঠা অভিনয়ের মাধ্যমে উদ্বোধিত হয়েছিল বেঙ্গল থিয়েটার। বিদ্যাসাগর মহাশয় এই থিয়েটারের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র এক বছরেই ফার্স্ট আর্টস পরীক্ষায় মেট্রোপলিটান কলেজ গুণানুসারে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল।

১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মে-তে নিজের উইল প্রস্তুত করেন। পরের বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুয়িটি ফান্ডের ট্রাস্টি পদ থেকে ইস্তফা দেন। এপ্রিল মাসে কাশীতে পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। এই সময় তিনি কলকাতার বাদুড়বাগানে একটি বাড়ি তৈরি করেন। বর্তমানে এই বাড়ি সংলগ্ন রাস্তাটি বিদ্যাসাগর স্ট্রিট ও সমগ্র বিধানসভা কেন্দ্রটি বিদ্যাসাগর নামে পরিচিত। ১-২ আগষ্ট আদালতে উপস্থিত থেকে চকদিঘির জমিদার সারদাপ্রসাদ রায়ের উইল মামলায় উইল প্রকৃত নয় বলে জমিদার পত্নী রাজেশ্বরী দেবীর স্বপক্ষে সাক্ষী দেন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি থেকে বাদুড়বাগানে বাস করতে শুরু করেন। এপ্রিল মাসে গোপাললাল ঠাকুরের বাড়িতে উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেদের পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ছাত্রদের বেতন হয় মাসিক ৫০ টাকা। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রোপলিটান কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারিতে তিনি সিআইই উপাধি পান। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে ৫ই আগস্ট রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর বাদুড়বাগানের বাড়িতে আসেন। দুজনের মধ্যে ঐতিহাসিক এক আলাপ ঘটে। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। মার্চে বাণভট্টের হর্ষচরিতম্ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে কানপুরে বেড়াতে যান এবং সেখানে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত করেন।

১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ আগস্ট তাঁর পত্নী দীনময়ী দেবীর মৃত্যু হয়। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল বীরসিংহ গ্রামে তাঁর মায়ের নামে স্থাপন করেন ভগবতী বিদ্যালয়। 

১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ই জুলাই (১৩ শ্রাবণ, ১২৯৮ বঙ্গাব্দ) রাত্রি দুটো আঠারো মিনিটে তাঁর কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ১০ মাস ৩ দিন। মৃত্যুর কারণ, ডাক্তারের মতে, লিভারের ক্যানসার।

মৃত্যুর পর ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিদ্যাসাগর চরিত প্রকাশ করেন তাঁর পুত্র নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ৪০৮টি শ্লোকবিশিষ্ট ভূগোল খগোল বর্ণনম্ গ্রন্থটিও প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, পশ্চিম ভারতের এক সিভিলিয়ন জন লিয়রের প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর পুরাণ, সূর্যসিদ্ধান্ত ও ইউরোপীয় মত অনুসারে এই ভূগোল গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।
 

বিদ্যাসাগরের রচনাসমগ্র

১. বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭)। লল্লুলাল কৃত বেতাল পচ্চীসী'র অনুবাদ।
২. বাঙ্গালা ভাষার ইতিহাস, দ্বিতীয় ভাগ (১৮৪৮),  মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল- অবলনে রচিত।
৩. জীবনচরিত (১৮৪৯)। উইলিয়াম ও রবার্ট চেম্বার্স রচিত খ্যাতিমান ইংরেজ মণীষীদের জীবনী অবলম্বনে রচিত গ্রন্থ।
৪. বোধদয়, শিশুশিক্ষা চতুর্থ ভাগ (১৮৫১)।  রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে তাঁর রচিত গ্রন্থ।
৫.নীতিবোধ : প্রথম সাতটি প্রস্তাব (১৮৫১) । রবার্ট ও উইলিয়াম চেম্বার্সের মরাল ক্লাস বুক অবলম্বনে রচিত।
৬. সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা (১৮৫১)।
৭. ঋজুপাঠ : প্রথম ভাগ (১৮৫১), দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫২), তৃতীয় ভাগ (১৮৫২)।
৮. ব্যাকরণ কৌমুদি : প্রথম ভাগ (১৮৫৩), দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫৩), তৃতীয় ভাগ (১৮৫৪), চতুর্থ ভাগ (১৮৬২)।
৯. সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৪)
১০. শকুন্তলা (১৮৫৪)। কালিদাসের অভিজ্ঞানম শকুন্তলম্ অবলম্বনে তাঁর রচিত গ্রন্থ।
১১. বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব – প্রথম পুস্তক (১৮৫৫)
১২. বর্ণপরিচয় : প্রথম ভাগ (১৮৫৫), দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫৫)
১৩. বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব – প্রথম পুস্তক (১৮৫৫)
১৪. কথামালা (১৮৫৬)। ঈশপের কাহিনি অবলম্বনে রচিত গ্রন্থ।
১৫. চরিতাবলী (১৮৫৬)। স্বরচিত গ্রন্থ।
১৬. মহাভারত- উপক্রমণিকা ভাগ (১৮৬০)।
১৭. সীতার বনবাস (১৮৬০)। ভবভূতির উত্তর রামচরিত অবলম্বনে তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ।
১৮. আখ্যানমঞ্জরী (১৮৬৩)
১৯. শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪)
২০. ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯)। উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত কমেডি অফ এররস্ অবলম্বনে রচিত গ্রন্থ।
২১. বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার (১৮৭১)
বামনাখ্যানম্ (১৮৭৩)। মধুসূদন তর্কপঞ্চানন রচিত ১১৭টি শ্লোকের অনুবাদ।
২২. বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার -দ্বিতীয় পুস্তক। (১৮৭৩)
২৩. পদ্যসংগ্রহ : প্রথম ভাগ (১৮৮৮), দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯০)
২৪. নিষ্কৃতিলাভ প্রয়াস (১৮৮৮)
২৫. সংস্কৃত রচনা (১৮৮৯)
২৬. শ্লোকমঞ্জরী (১৮৯০)
২৭. বিদ্যাসাগর চরিত [স্বরচিত] (১৮৯১)
২৮. ভূগোল খগোল বর্ণনম্ (১৮৯২)
২৯. অতি অল্প হইল (১৮৭৩)
৩০. আবার অতি অল্প হইল (১৮৭৩)
৩১. ব্রজবিলাস (১৮৮৪)। ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য’ ছদ্মনাম রচিত।
৩২.  বিধবা বিবাহ ও যশোহর হিন্দুধর্মরক্ষিণীসভা (১৮৮৪)। 'কস্যচিৎ তত্ত্বান্বেষিণঃ' ছদ্মনামে রচিত। দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি এর নামকরণ করেন বিনয় পত্রিকা।
৩৩. রত্ন পরীক্ষা (১৮৮৬)। ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোসহচরস্য’ ছদ্মনামে রচিত।

সম্পাদিত গ্রন্থ
অন্নদামঙ্গল (১৮৪৭)
কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ (১৮৫৩)
সর্বদর্শনসংগ্রহ (১৮৫৩-৫৮)
শিশুপালবধ (১৮৫৩)
কুমারসম্ভবম্ (১৮৬২)
কাদম্বরী (১৮৬২)
বাল্মীকি রামায়ণ (১৮৬২)
রঘুবংশম্ (১৮৫৩)
মেঘদূতম্ (১৮৬৯)
উত্তরচরিতম্ (১৮৭২)
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ (১৮৭১)
হর্ষচরিতম্ (১৮৮৩)
পদ্যসংগ্রহ প্রথম ভাগ (১৮৮৮ ; কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে সংকলিত)
পদ্যসংগ্রহ দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯০ ; রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত ।


সূত্র :
বিদ্যাসাগর রচনাবলী। তুলি কলম। জুন, ১৯৮৭ । জৈষ্ঠ্য ১৩৯৪।