লর্ড মিন্টো, প্রথম
Lord Minto
(১৭৫১-১৮১৪)

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনধীন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল। পুরো নাম গিলবার্ট মুরি কিনিনিমাউন্ট ইলিয়ট, প্রথম আর্ল অব মিন্টো
(Gilbert Elliot-Murray-Kynynmound, 1st Earl of Minto)। ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জন একিয়ট এবং মায়ের নাম এগ্বেস। ইনি ছিলেন পিতামাতার প্রথম সন্তান।

১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মিন্টো এবং তাঁর ভাই হগকে লেখাপড়ার জন্য প্যারিসে পাঠানো হয়। এখানে এঁরা স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হুম-এর তত্ত্বাবধানে শিক্ষা শুরু করেন। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফনটেনব্লুস্থ পেনশন মিলিটারিতে ভর্তি হন। পরে অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চে শিক্ষা লাভ করেন। এরপর ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে লিঙ্কনস্ ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন।

১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মিন্টো সংসদ সদস্য হিসবে পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। থেকে ১৭৮৪ সাল এবং ১৭৮৬ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। প্রথম দফায় ১৭৮৬ পর্যন্ত এবং ১৭৮৪ থেকে ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। এই সময় থেকে তিনি হাউস অব কমন্সের স্পীকার হওয়ার উদ্যোগ নেন। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে নন্দকুমারের বিচারের দায়ে কলকাতার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে তিনি একটি নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু প্রস্তাবটি অগ্রাহ্য হয়। তাঁর হাউস অব কমন্সের স্পীকার হওয়ার প্রচেষ্টাও সফল হয়নি।

১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিভি কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এ্যাঙ্গলো-কোরসিয়কান রাজ্যের ভাইসরয় হিসেবে যোগদান করেন।   

১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে মিন্টো বোর্ড অব কন্ট্রোল এর প্রেসিডেন্ট হন

১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অস্থায়ী গভর্নর জেনারেল জর্জ বারলো পদত্যাগ করলে, তাঁকে ভারতের গভর্নর জেনারেলের পদ দেওয়া হয়। তিনি স্থানীয় রাজাদের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে কূটনৈতিক কৌশলের দ্বারা কোম্পানির ভৌগোলিক সীমা বৃদ্ধির দিকে নজর দেন।

 ১৮১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। তিনি শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি পিন্ডারীদের নেতা আমীর খানকে বেরার-এ হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখেন। যুদ্ধ এড়ানোর জন্য, তিনি পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংয়ের সঙ্গে ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদন করেন। চুক্তি দ্বারা রণজিৎ সিং শতদ্রু নদীকে তাঁর রাজ্যের সীমানা মেনে নিতে সম্মত হন এবং চুক্তির ধারাসমূহ বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেন। এ চুক্তির মাধ্যমে পাঞ্জাবে স্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে পূর্ব দিকে কোম্পানির অবস্থান নিরাপদ অবস্থায় পৌঁছায়।

এই সময় ভারতে ফরাসিরা পুনরুত্থিত ফরাসি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই অবস্থা নিরসনের জন্য, মিন্টো একাধিক দূতদল প্রেরণের মাধ্যমে ফরাসি প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেন। তিনি জন ম্যালকমকে পারস্যে এবং মাউন্ট স্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনকে আফগান আমীর শাহ সুজার কাছে পাঠান। উভয়ই ফরাসিদের বাধা দান করতে অঙ্গীকার করে। এরপর সিন্ধুর আমীরদের নিকটও দূত পাঠান। সিন্ধুর আমির অবশ্য ফরাসিদেরকে তাঁদের ভূখন্ডে প্রবেশ করতে দেবে না বলে তাঁকে আশ্বস্ত করে। ফরাসি ভীতির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য, লর্ড মিন্টো পশ্চিম দিকে ফরাসি দ্বীপ বুরঁবো ও মরিশাস দখল করেন এবং ওলন্দাজদের দখলকৃত অ্যামবয়না অধিকারে আনেন। ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ দখল করেন।

একই সাথে তিনি ভারতে প্রশাসনের উন্নতি বিধানের দিকেও মিন্টো নজর দেন। বিশেষ করে প্রকাশনা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রবর্তনের চেষ্টা করেন।তাঁর শাসনামলের শেষের দিকে
চার্টার অ্যাক্ট ১৮১৩
(Charter Act of 1813) প্রণত হয়েছিল এর ফলে ভারতে ফ্রি ট্রেড প্রবর্তিত হয়।

 ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গভর্নর জেনারেলের পদ থেকে অব্যবহতি নেন এবং ডিসেম্বর মাসে তিনি ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ওই বছরেই তাঁকে ‘আর্ল’ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।

১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন লর্ড মিন্টোর মৃত্যু হয় এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-তে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

পরিবার:
তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল:
Anna Maria Amyand
সন্তানাদি: