বিজয় চাঁদ মহতাব, মহারাজাধিরাজ বাহাদুর স্যার
(১৮৮১-১৯৪১)
ব্রিটিশ ভারতে বর্ধমান রাজ্যের শাসক

৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বনকাপুর।

মহারাজা আফতাব চাঁদ মহতাব তরুণ বয়সে বর্ধমান এস্টেটের অধিকার লাভ করেন। অল্প বয়সে তাঁর মৃত্যু হলে- কিন্তু কোনো উত্তরাধিকার ছাড়াই মৃত্যুবরণ করণ। এরপর তাঁর বিধবা স্ত্রী বর্ধমান এস্টেটের অতীতের শাসক মাহতাব চাঁদ বাহাদুরের জনৈক আত্মী বনবিহারী কাপুরের পুত্র বিজয় চাঁদ মহতাবের দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুলাই বিজয় চাঁদ মহতাব বর্ধমান এস্টেটের আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ-সিংহাসনের অধিকার লাভ করেন।

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে, পূর্ণ ক্ষমতা লাভ করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লী থেকে তিনি রাজাধিরাজ উপাধি লাভ করেন। সে সময়ে বর্ধমান প্রাসাদে তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়েছিল।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনকে বর্ধমান প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান। এই সময় তিনি গথিক শৈলীতে একটি ফটক নির্মাণ করেন। এই ফটকটি কার্জন গেট নামে পরিচিত। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর ম্যালকম্যান্ট কর্তৃক বাংলার তদানীন্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজারকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে রক্ষা করেছিলেন। এই কারণে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে- কে.সি.আই.ই এবং ইন্ডিয়ান অর্ডার অফ মেরিট (ক্লাস III)-এর শিরোনামে সম্মান লাভ করেন।।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড মিন্টো তাঁকে 'মহারাজাধিরাজ্' উপাধিতে ভূষিত করেন। এই বছরে তিনি ইংল্যান্ড ও ইউরোপ সফর করেন এবং পরে ডায়েরির অফ অ্যান ইউরোপীয় ট্যুর নামে একটি বই রচনা করেন। এই বছরে তিনি রাঁচি আর্ট কলেজ, রাঁচি জন্য হোস্টেল এবং অন্যান্য সুবিধা নির্মাণের জন্য ৪০,০০০/ - দান করেন।

তিনি ১৯০৭ থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য এবং ১৯০৯ থেকে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। এবং ১৯১২-১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯১১-১৯১৮ এবং ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।  

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বজবজ ও কোমাগাটা মারু দাঙ্গার তদন্ত কমিটির একজন সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে স্যার চার্লস টডহান্টার পরিচালিত একটি কমিটিতে তিনি একজন সদস্য ছিলেন এবং ১৯২৪ সালের ভারতীয় পুনর্গঠন তদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন।

ব্রিটিশদের প্রতি তার আনুগত্য সত্ত্বেও, মহাত্মা গান্ধী ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমানে এলে তাঁকে সম্বর্ধনা দেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে পৌর নির্বাচনে প্রচারের জন্য সুভাষচন্দ্র বসু যখন বর্ধমান গেলে তখন তাঁকে তিনি স্বাগত জানান। এতে ব্রিটিশ শাসকবর্গ সন্তুষ্ট না হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। পরে তাঁর বিরুদ্ধে
শাসনের অব্যবস্থা এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এই অজুহাতে ব্রিটিশ প্রশাসন বর্ধমান রাজের সম্পূর্ণ পরিচালনা গ্রহণ করে এবং ১৯২৯-১৯৩৬ পর্যন্ত বিজয় চাঁদ ক্ষমতাহীন শাসকে পরিণত হন।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে বাধ্যবাধকতার মধ্যে তাঁকে এস্টেটের পরিচালনার দায়িত্ব পুনরায় দেওয়া হয় ।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগষ্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।