মোজাফ্ফর আহমদ, অধ্যাপক

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের জন্ম ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৭ মার্চ। বাবার নাম নাজির আহমেদ এবং মা জাহানারা বেগম।  ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্নাতক (সম্মান-সহ) এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার্স পাশ করেন। হরগঙ্গা কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তখনো তাঁর মাস্টার্সের ফল বের হয়নি। এরপর পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেছিলেন। পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উল্লেখ্য অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বব লুকাস তাঁর সহপাঠী ছিলেন এবং তাঁর শিক্ষকদের ভিতর ৮ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ছিলেন। দেশে ফিরে ইনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেন কিন্তু কিছুদিন পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেন।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপিকা রওশন জাহানের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এঁদের দুই ছেলে সিরাজুল আমিন ও মমতাজুল করিম এবং একমাত্র মেয়ে সোহেলা নাজনীন। এরপর ইনি যোগ দেন ইপিআইডিসিতে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক জিয়াউর রহমান সরকারের শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।

দীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক পান অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর। দেশ-বিদেশে তাঁর একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। তিনি ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাবেক সভাপতি। সবশেষ তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি অর্থনীতিবিদ হলেও স্বাস্থ্য ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থান উন্নয়নে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। এই সব বিষয়ের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি সক্রিয় ছিলেন পরিবেশ আন্দোলন, মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তিনি ছিলেন নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনি পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠক ছিলেন। এসব কাজের জন্য তিনি রাজনীতিবিদদের কাছে সমালোচিত ও নিন্দিত হলেও, তিনি তাঁর লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। কারণ, দেশের মানুষের জন্যই তিনি এসব করতেন, নিজের জন্য নয়। সৎ ও নির্লোভ ব্যক্তি হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল।

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ২০১২খ্রিষ্টাব্দের ২২শে মে রাত ১১টা ২২ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর মায়ের কবরের ওপরই সমাহিত করা হয়।