নাথুরাম বিনায়ক গোডসে
ভারত নামক রাষ্ট্রের জনক হিসাবে স্বীকৃত ' মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর হত্যাকারী।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯মে তারিখে তৎকালীন বোম্বাইয়ের পুনা জেলার বড়মাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিনায়ক বামনরাও গোডসে (ডাকঘর কর্মী) এবং মায়ের নাম লক্ষ্মী। জন্মের পরপর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল রামচন্দ্র। নাথুরামের জন্মের আগে, তাঁর পিতামাতা তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যার জন্মদান করেন। তিনটি ছেলেই শৈশবে মৃত্যুবরণ করে। ফলে পারিবারিকভাবে ধরে নেওয়া হয় যে, এই পরিবারে পুত্র সন্তানের উপর অভিশাপ আছে। এই কারণে নাথুরামকে শৈশবে মেয়েদের পোশাক ও সাজসজ্জায় প্রতিপালন করা হয়। এই সময় তার নাক ছিদ্র করে নাকফুল পর্যন্ত পরানো হয়েছে। মারাঠি ভাষায় নাথু শব্দের অর্থ নাকে পরানো বলয়। এই অর্থে শৈশবে তাকে ডাকা হতো নাথুরাম (নাকছাবি-ওয়ালা রাম)। নাথুরামের পরে তাঁর আরও একটি ভাই জন্মেছিল, তবে তাকে পুত্ররূপেই লালন পালন করা হয়েছিল।

নাথুরাম বড়মাটিতে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ শেষ করে, পুনেতে তার চাচার বাড়িতে আসে এবং এখানে ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। যতদূর জানা যায় এই সময় সে গান্ধীজীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতো। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে নাথুরামের বাবা রত্নগিরিতে বদলি হয়। এই সময় নাথুরাম স্কুলের লেখাপড়া বন্ধ করে হিন্দু জাতীয়তাবাদী কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হিন্দু মহাসভা এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এদের মূল লক্ষ্য ছিল সর্বভারতীয় মুসলিম লিগের বিরোধিতা।

কর্মজীবনের শুরুতে নাথুরাম হিন্দু মহাসভার মারাঠি ভাষার পত্রিকা অগ্রণীতে কাজ করা শুরু করেন। পরে এই পত্রিকাটি হিন্দু রাষ্ট্র নামে প্রকাশিত হতো। হিন্দু মহাসভা প্রথমদিকে গান্ধীজীকে সমর্থন করতো। বিশেষ করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আইন অমান্য কার্যক্রমে এদের সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল।

নাথুরাম উগ্র হিন্দুবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল হিন্দু মহাসভা'র সূত্রে। বিভিন্ন বিষয় উপলক্ষে গান্ধীজীর উপবাস করার কৌশলকে নাথুরাম অপকৌশল হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করে। একই সাথে হিন্দু মহাসভার অন্যান্য সভ্যদের মতো সেও বিশ্বাস করতো যে, গান্ধীজী মুসলমানদের স্বার্থকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ বিভাজিত হওয়ার জন্য এরা গান্ধীজীকেই দায়ী করে। সে গান্ধীজীর অহিংস নীতির ঘোর বিরোধী ছিল। তার মতে- অহিংস নীতির ফলে হিন্দুরা ক্রমান্বয়ে তাদের আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলছে। এই কারণেই সে গান্ধীজীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি তারিখে, দিল্লীর বিরলা ভবনে (বিরলা হাউস) সান্ধ্যা প্রার্থনাসভায় গান্ধীজী শান্তির বাণী প্রচারের জন্য উপস্থিত হওয়ার প্রাক্কালে, নাথুরাম গান্ধীজীকে খুব নিকট থেকে তিনবার গুলি করে। এবং গান্ধীজী ঘটনাস্থলেই মৃত্যবরণ করেন।

এরপর নাথুরামকে গ্রেফতার করা হয়। এবং বিচারে মৃত্যদণ্ড হয়, ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বরে। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করা হয় ১৫ নভেম্বরে।

সূত্র :