থেলিস
গ্রিক
জীবনের শুরুতে তিনি জলপাই তেলের ব্যবসা করতেন। এই ব্যবসার দ্বারা তিনি বেশ ধনী হয়ে উঠেছিলেন। ব্যবসা উপলক্ষে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো এবং এই সূত্রে তাঁর বিভিন্ন দেশ এবং জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। কথিত আছে মিশর ভ্রমণের সময় তিনি সেখানকার পুরোহিতদের কাছে তিনি জ্যামিতি শিখেন এবং তিনি মিশরীয় জ্যামিতিবিদ্যা গ্রিসে নিয়ে আসেন। পরে তিনি জ্যামিতি নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এরই সূত্রে তিনি যুগান্তকারী ৫টি জ্যামিতিক উপপাদ্যে তৈরি করেছিলেন। এই উপপাদ্যগুলো হলো ―
১. একটি বৃত্ত তার যেকোনও ব্যস দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়।
২. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান সমান বাহুগুলোর বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান।
৩. অর্ধবৃত্তস্থ কোণের পরিমাণ এক সমকোণ বা ৯০o।
৪. পরস্পরছেদী দুটি সরলরেখা দ্বারা উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণদ্বয় পরস্পর সমান।
৫. যদি কোনও ত্রিভুজের ভূমি এবং ভূমিসংলগ্ন কোণ দুটি দেয়া থাকে, তবেই কেবল ত্রিভুজটি আঁকা যাবে।
জ্ঞানস্পৃহার জন্য তিনি
ব্যবসা থেকে ক্রমে ক্রমে নিজেকে গুঁটিয়ে নেন। এরপর মৃত্যুর পূর্বকাল পর্যন্ত, তিনি
দর্শন ও গণিত চর্চা করে কাটান। তিনি তাঁর চিন্তায় এতটাই আত্মমগ্ন থাকতেন যে, অনেক সময় তিনি নিজের অবস্থান
সম্পর্কে আত্মবিস্মৃত হতেন। কথিত আছে একদিন সান্ধ্য ভ্রমণকালে আকাশের তারকারাজি
দেখতে দেখতে তিনি গর্তে পরে গিয়েছিলেন। পরে বহুকষ্টে তিনি সেখান থেকে উদ্ধার পান।
কবি এবং দার্শনিক জেনোফেনিসের মতে, থেলিস খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৫ অব্দের ২৮ মে তারিখে
সংঘটিত সূর্যগ্রহণ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণী করেন এবং তা পুরোপুরি ফলে গিয়েছিল। কিন্তু হিরোডাটাস-এর মতে থেলিসের সূর্যগ্রহণ বিষয়ে
ভবিষ্যৎবাণী করার কোন ক্ষমতা ছিল না। হিরোডাটাসের মতে থেলিস একজন রাষ্ট্রীয়
কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি অ্যাজিয়ান অঞ্চলের আইওনিয়ান নগররাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি
ফেডারেশন গড়ে তোলার ব্যাপারে সালিশী সভা তৈরি করেছিলেন।
এ্যারিস্টোটল-এর মতে,
থেলিস সমস্ত বিশ্ব পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং পানিতেই তা বিলীন হয়ে যাবে। এই কারণে
পানিকে তিনি পৃথিবীর আদি বস্তু হিসাবে বিবেচনা করে নিয়েছিলেন।
তিনি তারকারাজি পর্যবেক্ষণের দ্বারা সমুদ্রে অবস্থানরত কোন জহাজের দূরত্ব নির্ণয়ের
পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। মিশরীয়দের জ্যামিতিক ধারণা ছিল শুধুমাত্র তল সংক্রান্ত।
কিন্তু থেলিস উপযুক্ত যুক্তির সাহায্যে কোন চিত্রের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক
নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সাহায্যে কয়েকটি অংশের সাহায্যে অপর
অংশগুলো সঠিকভাবে নিণর্য় করা যায়।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৭-৫৪৬ অব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।