স্বস্তি-অস্বস্তি

জীবের আজন্ম সংগ্রাম অমরত্বের। এই সংগ্রামের ভিতরে দিয়ে আদিম জীবকণিকা নানাভাবে বিবর্তিত হয়ে বিশাল জীবজগতের সৃষ্টি করেছে। ক্ষুদ্রাকার জীবকণিকা থেকে জীবজগতের যে কোনো প্রজাতিই নিরন্তর এই প্রচেষ্টার ভিতর দিয়েই তার জীবনচক্রটি পূর্ণ করে। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে যতদিন সে টিকে থাকে, ততদিনই তার বেঁচে থাকার সার্থকতা। যে কোনো জীবের জন্মের পর থেকেই মৃত্যু তার কোলে টেনে নেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। আর জীব তার সহজাত ক্ষমতার মধ্য দিয়ে তার প্রতিরোধ করতে থাকে। দেহের শক্তি রক্ষার জন্য, স্বাভাবিক ক্ষয় রোধের জন্য, দেহের ক্ষতিকারক জড় ও অন্য জীবের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রজাতি মাত্রেই সামর্থ অনুসারে সক্রিয় থাকে। তারপরেও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে জীবের মৃত্যু হয়।

অনুকূল পরিবেশে জীব ভ্রূণ দশা থেকে এক সময় পূর্ণতা লাভ করে। এরপর পূর্ণদশার ক্ষয় হতে হতে তার বিলুপ্তি ঘটে। স্বাভাবিক এই জীবনচক্রে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়াটা জীব অনুভবও করতে পারে না। স্বাভাবিক জীবনযাপনে জীব প্রতিমুহূর্তে বেঁচের থাকার স্বস্তিতে থাকে। কিন্তু স্বস্তির পাশাপাশি যতটুকু অস্বস্তি থাকে, জীব তা গ্রাহ্যেই আনতে চায় না। ভাবে এটা সাময়িক বিষয়। কিন্তু সাময়িক অস্বস্তিই জীবকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়। বোধ করি মানুষ ছাড়া অন্যকোনো প্রজাতি মৃত্যুকে দূরদর্শিতা দিয়ে ভাবে না। মানবেতর প্রাণীর প্রধান লক্ষ্য তাৎক্ষণিক প্রতিকূলতাকে জয় করা। কিন্তু মানুষের ভাবনা যতনা বর্তমানের, তার চেয়ে বেশি ভবিষ্যতের। আর এই ভবিষ্যতের ভাবনায় তাড়িত হয়ে সে খাদ্য সঞ্চয় করে, স্বাস্থ্য-সম্মত বাসস্থান গড়ে তোলে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, স্বজাতির সাথে যুদ্ধ করে। এমনি আরও কত কিছু করতে হয়। উন্নত মস্তিষ্কের কারণে এসব সে করতে পারে এবং করে থাকে। মানুষের নিরন্তন ভবিষ্যৎ ভাবনার ভিতর দিয়ে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে।

প্রতিটি প্রজাতির মতই মানুষও সবচেয়ে ভালোবাসে সে নিজেকে। এই ভালোবাসাটা হলো ভালো থাকার ইচ্ছা। এই ইচ্ছার যখন ব্যাঘাত ঘটে, তখনই তৈরি হয় অস্বস্তি। মূলত মানুষের সকল আবেগের শুরু হয় স্বস্তি-অস্বস্তি বোধ থেকে।

ধরা যাক, কোনো একজন শহর থেকে দূরে, প্রায় নির্জনে, তাঁর স্বপ্নের বাড়ির বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে আছেন। বারান্দার সম্মুখভাগ স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এই মুহূর্তে তিনি কোনো সমস্যাক্রান্ত নন। এক কথায় তিনি বেশ সুখেই আছেন। স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা বারান্দা থেকে তিনি এখন বাইরের প্রকৃতিকে উপভোগ করছেন। এই অবস্থায় যদি কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করে− কেমন আছেন? তিনি হয়তো এক কথায় বলবেন− ভালো আছি।

কিন্তু, তিনি কি সত্যিই ভালো আছেন?

এবার তাঁর বসে থাকার দশাকে পর্যবেক্ষণ করা যাক। কোনো একটি মুহূর্ত থেকে তাঁর আচরণ লক্ষ্য করলে, দেখা যাবে তিনি পুরোপুরি স্বস্তিতে ছিলেন না। কিছু সময় পরপর তিনি নড়েচড়ে বসছেন, হয়তো পা-টা ছড়িয়ে দিয়েছেন বা গুটিয়ে নিয়েছেন। সোজা হয়েছেন, শরীরটাকে আরাম কেদারার গায়ে এলিয়ে দিয়েছেন। এসবই তিনি করছেন স্বস্তি-অস্বস্তির বোধ থেকে।

জীবজগতের কোনো প্রজাতিই নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বস্তি বা অস্বস্তিতে থাকতে পারে না। জীবের সহজাত প্রবৃত্তির ভিতরই রয়েছে এই স্বভাব। জীবের চৈতন্যলোকে প্রতিনিয়ত স্বস্তি থেকে অস্বস্তির খেলা চলেছে অবিরাম। জীবের সমগ্র জীবনচক্রকে যদি ছোটো ছোটো ভাগে ভাগ করা যায়, তা হলে দেখা যাবে অসংখ্য স্বস্তি বা অস্বস্তি। কোনো ক্ষুদ্র সময়ে জীব যে অবস্থায় থাকে, তাকে বলা যায়- দশা। জীব তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং তার দৈহিক অনুভুতি এবং জীববৈশিষ্ট্যের বিচারে দশাকে অনুভব করে। যেমন- কোনো জীবের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সহনীয় বা আরামের হলেও অন্য জীবের কাছে তা অসহনীয় হতে পারে। আবার কোনো জীবের কাছে যদি আলো-আঁধারের  আলাদা কোনো অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে আলোর তীব্রতা তাকে অস্বস্তি দশায় ফেলবে না। কিন্তু মানুষে কাছে এসবের বাইরে রয়েছে তীব্র সংবেদনশীল অনুভূতি। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং তার দৈহিক অনুভুতি ছাড়াও স্বস্তি-অস্বস্তির ভিতর দিয়ে জীবন-যাপন করতে হয়। অন্যের ভালো বা মন্দ আচরণ, কথা ইত্যাদি মানুষের মনে অনেক সময় স্বস্তি-অস্বস্তি দশার সৃষ্টি করে। দৈহিক বা মানসিক যে ধরনের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে জীবনযাপন করে, তার সবই শেষ পর্যন্ত মানসিক হয়ে পড়ে। তাই মানুষের 'আমি' নামক সত্তা'র অনুভূতি যাই হোক না কেন, তাকেই মানসিক দশাই বলা যেতে পারে।

এই দশার পরিবর্তন ঘটে স্বস্তি বা অস্বস্তির দিকে। ধরা যাক কোনো ব্যক্তি এমন একটি মানসিক দশায় রয়েছে- যেখানে কোনো স্বস্তি বা অস্বস্তি দশা নেই। দশা নিরপেক্ষ এবং নিরাসক্ত। এই অবস্থাকে ধরা যেতে পারে শূন্যমান। এই অবস্থা থেকে 'আমি' স্বয়ং কোনো দশার ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, আবার বাইরের কোনো অবস্থা দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে অন্য কোনো দশায় প্রবেশ করতে পারে। এই দুই দশার এক দিকে থাকে স্বস্তিদায়ক দশা, অপর দিকে থাকে অস্বস্তিদায়ক দশা। উভয়ের ভিতরে 'আমি' সব সময়ই স্বস্তিদায়ক দশায় থাকতে চায়। ঘটনাক্রমে তার কাছে কোনো অবস্থা অস্বস্তিদায়ক দশায় চলে গেলে, সে প্রথমে সে দশা থেকে নিরপেক্ষ বা শূন্য দশায় আসার চেষ্টা করে। এরপর সেটাকে স্বস্তিদায়ক দশায় উন্নীত করার চেষ্টা চালায়। এর পিছনে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষসমূহের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় (সিন্যাপ্স) অবস্থিত নিউরোট্রান্সমিটার
(Neurotransmitter) তথা কিছু রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ ভূমিকা রাখে। উপরে লিখিত আমাদের উদাহরণের মানুষটি প্রাথমিক অবস্থায় হয়তো স্বস্তিতে ছিল। একইভাবে সে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, তার অঙ্গের ভিতরে খুব সামান্য মাত্রায় অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছিল। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, সে একটু নড়ে চড়ে নিজেকে স্বস্তিদায়ক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

মূলত একভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার কারণে, তার আসন সংলগ্ন দেহাংশ এবং শরীরের অন্যান্য অংশে একধরনের অবসাদ তৈরি হয়েছিল। ফলে সিন্যাপ্স-এ নিউরোট্রান্সমিটার-এর এক বা একাধিক পদার্থের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল এবং সেই কারণে অস্বস্তি নামক অনুভবের সৃষ্টি হয়েছিল। একই কারণে সে যখন একটু নড়েচড়ে বসলো, তখন দেহের অবসাদ সাময়িকভাবে দূর হয়ে গেল। মূলত এই সময় সিন্যাপ্স-এ নিউরোট্রান্সমিটার-এ প্রয়োজনীয় উপাদানের আধিক্য ঘটেছিল। ফলে স্বস্তি নামক অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল।

একজন মানুষ যখন খুব আরামে থাকে, তখনও সে স্বস্তি-অস্বস্তির খেলার ভিতরে থাকে। সাধারণভাবে ভালো থাকা হলো স্বস্তি-অস্বস্তির গড় মানে থাকা। এই গড় মানটা গড়ে উঠে
, সময় অতিক্রমণ সময় রেখার অভিমুখে। ফলে স্বস্তি-অস্বস্তির বিষয়টি স্মৃতিতে স্থান পায়। প্রতিনিয়ত ভবিষ্যতের যে কোনো বোধ এর সাথে যুক্ত হয়ে একটি অখণ্ড গড় অনুভূতি-মান প্রদান করতে থাকে। এই কারণে মানুষের ভালোমন্দ থাকার বোধ একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভালো-মন্দ থাকার মধ্যবর্তী স্থানকে আমরা শূন্য দশা বলতে পারি। এই স্বস্তিদায়ক এবং অস্বস্তিদায়ক দশারেখা অনুসরণ করেই 'আমি' নামক সত্তা আনন্দ, বেদনা, রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি দশায় পৌঁছায়। ধরা যাক কেউ একজন একটি কাঁটার অগ্রভাগ দিয়ে অন্য কারো শরীরে স্পর্শ করলো মাত্র। ওই ব্যক্তির কাছে প্রাথমিকভাবে তা একটি স্পর্শের অনুভূতি হিসেবেই থাকবে। কিন্তু ওই ব্যক্তি যদি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, এই কাঁটা শরীরে প্রবেশ করলে কি হতে পারে। তাহলে ওই ব্যক্তি তথা 'আমি' একটি অস্বস্তিকর দশায় পৌঁছাবে। ধরা যাক এই দশা '-১' । এবার এই কাঁটার অগ্রভাগের অতি সামান্য অংশ, শরীরের ভিতর সত্যিই প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলো। এর ফলে একটি ভিন্নরকম তথ্য সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে। সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাত হয়ে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, 'আমি' তাকে একটি ভিন্নতর অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করবে। গাণিতিক বিচারে আমরা তাকে -১, -১.২৫, -১.৫০ ইত্যাদি যাই বলি না কেন, 'আমি' তাকে হয়তো বেদনার ভিন্ন ভিন্ন মান হিসেবে চিহ্নিত করবে। মূলত বেদনা এখানে একটি দশার নাম মাত্র। 'আমি' তার উপলব্ধির ভিতর দিয়ে নানা রকম দশায় পৌঁছায়। দশাকেই বলা হয় আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি।

ধরা যাক, কোনো এক সময়ে আপনি স্বস্তি-দশায় ছিলেন। এটি আপনার জীবনকালের একটি সময়বিন্দু। এই বিন্দু থেকে আপনার অস্বস্তি বোধের শুরু হবে। এই পরিবর্তন প্রাথমিক অবস্থার অনুভূতি, আপনাকে ভালো বা মন্দ কোনো অর্থেই বিচলিত করবে না। ধরা যাক, ২০ সেকেন্ড পরে, আপনার বসে থাকায় কিছুটা অস্বস্তি বোধের সৃষ্টি হবে। তার অর্থ দাঁড়ালো, স্বস্তিবোধ ২০ সেকেন্ড আগে যে অনুভূতি ছিল, ২০ সেকেন্ড পরে তা আর থাকবে না। এখানে মস্তিষ্ক ২০ সেকেন্ড আগের দশাকে ভুলে যাবে না। বরং গভীরভাবে অনুভব করবে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার বিচারে সে সোজা হবে, বা পা ছড়িয়ে দেবে। এখানে অতিক্রান্ত সময় থেকে বর্তমানের সকল অংশ একটি অবিচ্ছিন্ন ধারায় গ্রথিত হবে। ৪০ সেকেন্ডের অনুভূতির এই প্রবহমানতাকে আপনি একনিষ্ঠতার সাথে বলতে পারবেন না, আপনি ঠিক কখন স্বস্তি বা অস্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু গত ৪০ সেকেন্ডের স্বস্তি-অস্বস্তির গড়মানে আপনি বলতে পারবেন 'ভালোই ছিলাম' বা 'ভালোই আছি'।

পুরোটাই ঘটে মনে, তাই স্বস্তি-অস্বস্তি বোধ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। যে কোনো মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দ্বারা 'আমি'  কিছু অবগত হয় বা জানে। এর ভিতর দিয়ে 'আমি' জ্ঞান লাভ করে। এই জ্ঞান তথ্য হিসেবে মস্তিষ্কে গৃহীত এবং সংরক্ষিত হয়। এই তথ্য মস্তিষ্কে থাকে বলেই 'আমি' একটি তুলনামূলক ধারণার ভিতর দিয়ে নিজের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এই তথ্যের দ্বারা 'আমি' উদ্দীপনা পায়। যদি 'আমি'র কাছে এই উদ্দীপনা অগ্রহণযোগ্য হয়, তা হলেই অস্বস্তিবোধের জন্ম দেয়। আর যদি উদ্দীপনাটি গ্রহণযোগ্য হয়, তবে তা স্বস্তিবোধের জন্ম দেয়।

প্রতিটি স্বস্তি-অস্বস্তি দশা সৃষ্টির পিছনে কারণ থাকে। সেটা দেহগত বা মনোগত হতে পারে। 'আমি' ওই কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। 'আমি' স্বস্তি-অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে নানা কারণে। যেমন

স্বস্তি-অস্বস্তি বোধে সময়ের ভূমিকা
স্বস্তি-অস্বস্তি বোধের সাথে সময়ের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি একটি স্বল্প সময়ের বিচারে স্বস্তি-অস্বস্তির অনুভবকে। সেই বিচারে যে সাধারণভাবে 'ভালো আছি'র অনুভবটা কাজে লাগে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের বিচারে এই 'ভালো আছি'র অনুভবই অস্বস্তি সৃষ্টি করে থাকে। ধরা যাক, একটি গানের আসরে আপনি এক ঘণ্টা ধরে বসে আছেন এবং বসে থাকার দৈহিক স্বস্তি-অস্বস্তির অনুভবটা অগ্রাহ্য করেই গান শুনছেন। অনুষ্ঠান শেষে হয়তো আপনি বলবেন, বেশ ভালই লাগলো। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটা যদি, বিরামহীনভাবে চলতেই থাকতো, তাহলে এই ভালোলাগা বোধটাই অস্বস্তিত্বে পরিণত হবে। দীর্ঘসময়ের কারণে দেহের ক্লান্তি আসে, মনেও অবসাদের জন্ম নেয়। এর জন্য বিরতি দরকার। আপনার প্রিয় গানটি ক্রমাগত শুনতে থাকলে, অচিরেই আপনি ওই গানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু বিরতি দিয়ে দিয়ে শুনলে তা আপনার কাছে প্রিয়ই থাকবে। যেকোন উপভোগ্য বিষয় উপভোগের সাথে সাথে থামতে জানতে হয়। নইলে পুরো জীবনটাই অস্বস্তিতে ভরে যাবে।

স্বস্তি-অস্বস্তি বোধ ও মানবিক আচরণ
'আমি'র স্বস্তি-অস্বস্তি'র অনুভূতিই হলো স্বস্তি-অস্বস্তিবোধ। মানুষের কিছু সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। এর দ্বারাই প্রতিটি মানুষ স্বাভাবিক স্বস্তি-অস্বস্তির অনুভূতি লাভ করে। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই মানুষ এই জাতীয় বোধের অধিকারী হয়। কোনো শিশুর চোখে তীব্র আলো ফেললে চোখ বন্ধ করে। দেহের স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতায় এটা ঘটে। কিন্তু বহু অস্বস্তি মানুষ অর্জন করে, অভিজ্ঞতার দ্বারা। মলমূত্র দেখে শিশু অস্বস্তি বোধ করে না, বরং অনেক শিশু খেলনা ভেবে হাত দেয়। কিন্তু বয়স্ক মানুষ মলমূত্রের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি বোধ করে। কেউ কেউ চলচ্চিত্রে বমন করার দৃশ্য দেখে নিজেই বমি করে।

স্বস্তিবোধের ক্রমোত্তরণে জন্ম নেয় ভালোলাগা, আনন্দ, সৌন্দর্য, আত্মতৃপ্তি, প্রশান্তি ইত্যাদি। আর অস্বস্তিবোধের ক্রমোত্তরণে জন্ম নেয় মন্দলাগা, বেদনা, অতৃপ্তি, অশান্তি ইত্যাদি। এসকল অনুভূতি ব্যক্তি বিশেষের সহজাত অনুভুতি, অভিজ্ঞতা, সহনশীলতা, ধৈর্য, সৌন্দর্যবোধ ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়। সাধারণভাবে আমরা প্রাত্যহিক জীবনের স্বস্তি-অস্বস্তির গড় মানে থাকাকে ভালো আছি বলি। কারণ জৈবিক বিবর্তনের সূত্রে এই অনুভূতি জিনের অন্তর্গত হয়ে গেছে। অবশ্যই জীবনের স্বস্তি-অস্বস্তিবোধ এভাবে গাণিতিক সূত্রকে অবলম্বন করে চলে না। একজনের এই গড় মান অন্য জনের সাথে নাও মিলতে পারে।  তাই একই বিষয়ে কেউ আনন্দ পায় কেউ বিরক্ত হয়। কেউ অল্পে সন্তুষ্ট হয়, কেউ আরও চাই বলে অস্থির হয়ে উঠে। একজন একটু শীতে যতটা কাতর হয়, অন্য জন তা নাও হতে পারে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে এটা দেখা যায়। ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কেউ শীতে কাতর হয়, অন্যজনের কাছে তা স্বস্তিদায়ক মনে হয়। ব্যক্তিবিশেষের স্বস্তি-অস্বস্তি বোধের পার্থক্যের কারণেই এটা ঘটে। স্বস্তি-অস্বস্তিতে সাড়া দেওয়া বা এর জন্য প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পিছনে, ব্যক্তি আচরণও বিশেষভাবে কাজ করে। কেউ সামান্য কিছুতেই হইচই করে হট্টগোলের সৃষ্টি করে, কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত শান্তভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করে এবং তার আচরণও অস্থির বলে মনে হয় না। কেউ কেউ অন্যের সামান্য ভুলকে অনেক বড় করে দেখে তার অন্য সকল ভালোগুণকে মন্দের তালিকায় ফেলে দেয়। কেউ বা এই সামান্য ভুলকে মেনে নিয়ে, তার ভিতর থেকে ভালোটা গ্রহণ করে। প্রাকৃতিক ঘটনাপ্রবাহ কিম্বা ব্যক্তি আচরণকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারলে অনেক অস্বস্তিকে স্বস্তিতে পরিণত করা যায়। বিবেচক মানুষ সেটা করেন এবং সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টাও করেন। যে যতটা যে কোনো পরিস্থিতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে, সে ততটা পরিস্থিতিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতেও পারে। শান্ত মাথা শান্তির সহায়ক, অশান্ত মাথা শান্তিবিনাশক।

আবেগ ও প্রক্ষোভ
্বস্তি-অস্বস্তির সূত্রে সৃষ্টি হয়, মানুষের মনের ভিতরে নানা ধরনের আবেগ।
মানুষের মনোজগতের অবিচ্ছদ্য অংশ হলো আবেগ। মানুষ তার জীবনযাপনের মধ্যে প্রতিনিয়ত কিছু বোধের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই বোধ মানুষের মনে নানা ধরনের উপলব্ধির জন্ম দেয়। এই উপলব্ধির ফলে মনোজগতে নানা ধরনের অবস্থার সৃষ্টি করে। এই মানসিক অবস্থাই হলো আবেগ। আর এই আবগের কারণে মানুষ যে ক্রিয়াত্মক প্রকাশ ঘটে, তাই হলো প্রক্ষোভ। ধরা যাক হঠাৎ করে কেউ একটি সাপ দেখলো। এর ফলে তার মনে একটি বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হলো। এই বিশেষ অবস্থাকে যদি আমরা ভয় বলি, তাহলে সেটা হবে আবেগ। এই আবেগ থেকে কেউ চিৎকার করতে পারে, পালাতে চেষ্টা করে, কাঁপতে থাকে কিম্বা জড় পদার্থের মতো স্তম্ভিত দাঁড়িয়ে থাকে। এই জাতীয় প্রতিটি আচরণ হবে প্রক্ষোভ।

আবেগ মনোজগতের আর প্রক্ষোভ শরীরের ক্রিয়াত্মক অংশের। প্রক্ষোভ মানুষের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হতে পারে। এই বিচারে প্রক্ষোভের প্রকাশ নানা ভাবে হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। যেমন-

১. স্বয়ংক্রিয় প্রক্ষোভ: আবেগের প্রকারভেদে শরীরে অভ্যন্তরে নানা ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে, সেটা আমরা বাইরে থেকে দেখি না। প্রক্ষোভের প্রকৃতি অনুসারে, শরীরের অভ্যন্তরে গ্রন্থিজাত রসের ক্ষরণ হয়, হৃদপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি পায়, স্নায়ু ও পেশীঘটিত নানাধরনের কার্যক্রম সংঘটিত হয়। এর ফলে মানুষের বাহ্যদর্শন বা কার্যকলাপে কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ভয়ে কারো মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যায়, কেউ কাঁপতে থাকে। এই জাতীয় বাহ্যদর্শনের কারণ যাই থাকে, মানুষ নিজ ইচ্ছায় করতে পারে না। আবেগজাত অনুভূতি থেকে আপনাপানি উৎপন্ন হয়। তাই কেউ যখন ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তখন কোনোভাবে তার ভয়কে দূর করতে পারলে, আপনাআপনি প্রক্ষোভ দূর হয়ে যায়।  এসকল ক্ষেত্রে সরসারি প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, কিন্তু আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করলেই প্রক্ষোভ দূর হয়ে যায়। কিছু কিছু স্বয়ংক্রিয় প্রক্ষোভ তৈরি হয়, শারীরিক স্বাভাবিক চাহিদা থেকে। যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি।

২. স্বেচ্ছা প্রক্ষোভ: আবেগজাত বোধ, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ইত্যাদির দ্বারা মানুষ আবেগ দূর করতে পারে বা জাগ্রত করতে পারে। ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়া, রাগে-দুঃখে কাউকে আঘাত করা ইত্যাদি মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে করে। এর পিছনেই শরীরের  ঐচ্ছিক ও স্বয়ংক্রিয় উপকরণগুলো কাজ করে। মানুষ যখন পালিয়ে যায়, তখন তার পেশীঘটিত কার্যকলাপ, গ্রন্থিঘটিত রসসঞ্চারের মতো ঘটনা ঘটে, কিন্তু পালানোর জন্য দৌড়ানোটা ইচ্ছা শক্তির মধ্যেই ঘটে।

৩. স্মৃতিকাতরতাজনীত প্রক্ষোভ: এই জাতীয় প্রক্ষোভ ঘটে থাকে অতীতের কোনো বিশেষ ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। বহু আগে কারো সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। যখনই এই কথা মনে পড়ে, তখনই তার মনে বেদনার অনুভব সৃষ্টি হয়। এই অনুভবের ভিতর দিয়ে তার মন বেদনা-ভারাক্রান্ত হয়। এর ফলে সে হয়তো কাঁদে বা বিলাপ করে।

৪. রস প্রক্ষোভ: এই জাতীয় প্রক্ষোভ ঘটে থাকে মানুষের সৃষ্ট কোনো শিল্পকর্ম থেকে। এই প্রক্ষোভের কারণে নাটক বা কাহিনিচিত্র দেখে মানুষ কাঁদে হাসে। রসের প্রকৃতি অনুসারে এই জাতীয় প্রক্ষোভ প্রকরণের প্রকারভেদ ঘটে।

৫. মিশ্র প্রক্ষোভ: মানুষের বহু প্রক্ষোভ সৃষ্টি হয় একাধিক অনুভূতির সংমিশ্রণে। মানুষ রেগে গিয়ে যখন কাউকে আঘাত করে বসে, তখন তা স্বেচ্ছা প্রক্ষোভ। কিন্তু বেদনায় চোখের জল পড়ে, তা স্বয়ংক্রিয়। অনেকক্ষেত্রেই দুটো একই সাথে ঘটে। শিশুরা অনেক সময় বেদনায় কাঁদে এবং একই সাথে কাছের কাউকে আঘাত করে। যৌনকামনার ক্ষেত্রে মিশ্র প্রক্ষোভ ঘটে। যৌনকর্মে কামের ভাব দ্বারা মনোগত প্রক্ষোভের জন্ম হয় এবং দেহের সক্রিয়তায় দ্বারা ঐচ্ছিক প্রক্ষোভ প্রকাশ পায়।

সকল মানুষের প্রক্ষোভ এক রকম হয় না। কেউ কেউ প্রবল শোককে শক্তিতে পরিণত করেন, কেউ বা অল্প শোকে কাতার আর অধিক শোকে পাথর হয়ে যান। সামান্য কথায় কেউ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান, কেউ বা প্রবল আপত্তিজনক কথাতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারেন। প্রক্ষোভের ভিতর দিয়ে মানুষের আবেগের তীব্রতা অনুভব করা যায়। মনোবিজ্ঞানীরা প্রক্ষোভের ভিতর দিয়ে মনের সন্ধান করে থাকেন। একালের মনোবিজ্ঞানীরা প্রক্ষোভের প্রক্রিয়াগুলোকে পরিমাপ করার জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। যেমন প্রক্ষোভের কারণে নাড়ির স্পন্দন মাপার জন্য ব্যবহার করেন স্ফিগমোগ্রাফ (Sphygmograph) যন্ত্র, রক্তের চাপ মাপার জন্য স্ফিগমোমানোমিটার (Sphygmomanometer) যন্ত্র, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস মাপার জন্য নিউমোগ্রাফ (Pneumograph) যন্ত্র। এই সকল যন্ত্রের মাধ্যমে মূলত শরীরের ভিতরে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াকে অনুধাবন করার চেষ্টা করা হয়। আবার প্রক্ষোভের মাপার জন্য ব্যবহার করা হয় সাইকোগ্যালনোমিটার (Psychogalvanometer) স্বাভাবিকভাবে মানুষ মৃদু বিদ্যুৎ প্রবাহ সহ্য করতে পারে। এই সহ্যক্ষমতা সবার সমান হয় না। মানুষের প্রক্ষোভের সময়, শরীরের বিদ্যুৎ প্রবাহের সহ্যক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। সাইকোগ্যালনোমিটার দিয়ে মূলত প্রক্ষোভের সময় শরীরের বিদ্যুৎ প্রবাহের সহ্যক্ষমতাকে পরিমাপ করা হয়।  মনোবিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষার নাম দিয়েছেন সাইকোগ্যালনো প্রতিক্রিয়া (Psychogalvanic Response বা P.G.R)।

প্রক্ষোভের কারণে মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গের পরিবর্তন ঘটে। স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কে আলফা তরঙ্গ আবরতন হয় প্রতি সেকেণ্ডে ৭.৫ থেকে ১২.৫ বার। কিন্তু প্রক্ষোভের সময় এই তরঙ্গের পরিবর্তন ঘটে। মূলত যখন চিন্তা করে বা আবেগ-অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয়, তখন মানুষের মস্তিষ্ক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নানা ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করে। গবেষণাগারে মাথার খুলির উপর বহুমুখী ইলেক্ট্রোড লাগিয়ে ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি তথা ইইজি'র মাধ্যমে এসব তরঙ্গ সংকেত ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এসব সংকেতের মাত্রা বৃদ্ধি করে তা কম্পিউটারে পাঠিয়ে সেই ব্যক্তির ইচ্ছা কি সেটা কিছুটা অনুধাবন করা যায়। মস্তিষ্ক পাঠের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই।

বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এই তরঙ্গের বিভিন্ন স্তরকে শনাক্ত করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। নিচে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো।

প্রক্ষোভ সৃষ্টির ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি রস বিশেষভাবে কাজ করে। এর ভিতরে বিশেষ উল্লেখ করার মতো রসক্ষরণকারী গ্রন্থি হলো সুপ্রারেনাল। শরীরের অভ্যন্তরে বৃক্কের উপরে এই গ্রন্থির অবস্থান।  রাগ, ভয় ইত্যাদির কারণে শরীরে শর্করা জাতীয় উপাদান কমে গেলে, এই গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন এবং নরঅ্যাড্রেনালিন রস বের হয়ে আসে।  উভয়ের পারস্পরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, মানুষকে রাগ বা ভয়জনীত অস্থিরতা থেকে শান্ত দশায় ফিরিয়ে আনার জন্য। এই প্রক্রিয়ায় হৃদপিণ্ডের অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠে। এর ফলে হৃদকম্পন বেড়ে যায়। হৃদপিণ্ডের অতি-সক্রিয়তার কারণে অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এই সময় হৃদপেশীর সংকোচনও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এর ফলে হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহ ধমনীতে চাপের সৃষ্টি হয়। ফলে ভয় বা রাগের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই সময় হৃদযন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। অনেক সময় সংকুচিত ধমনী দিয়ে হঠাৎ অধিক বেগে রক্ত সঞ্চালনের ফলে, ধমনী ছিঁড়ে যায়। তাছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত রাগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয় কেন না রাগ বা মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুবই বিপদজনক।

মানুষের আবেগ এবং এর দ্বারা সৃষ্ট প্রক্ষোভের সংখ্যা অনেক। তবে আবেগের বিচারে মনের অবস্থাকে কয়েকটিকে মনুষ্যজাতি সরাসরি নাম দ্বারা প্রকাশ করে থাকে। এগুলো হলো আনন্দ, রাগ, ভয়, দুঃখ, অভিমান, ভালোবাসা।

স্বস্তি-অস্বস্তি হলো- অনুভবের প্রাথমিক দশা। স্বস্তির তীব্র দশায় সৃষ্টি হয় আনন্দ ও সুখবোধ। আবার অস্বস্তির তীব্র দশা থেকে উদ্ভব হয় বেদনা। আলোচনার এই সূত্রে আনন্দ-বেদনাকে দেখার চেষ্টা করবো পরবর্তী অধ্যায়ে।