১
এলাহী
আলামীন গো আল্লা বাদশা আলমপানা তুমি
ডুবায়ে ভাসাইতে পার,
ভাসায়ে কিনার দাও কার
রাখ মার হাত তোমার,
তাইতো তোমায় ডাকি আমি॥
নু্হু
নামে এক নবীরে,
ভাসালে অকূল পাথার
আবার তারে মেহের করে, আপনি লাগাও কিনারে
জাহের আছে ত্রিসংসারে আমায় দয়া কর স্বামী॥
নিজাম
নামে বাটপার সে ত,পাপেতে
ডুবিয়া রইত
তার মনে সুমতি দিলে,কুমতি তার গেল চলে,
আউলিয়া নাম খাতায় লিখিলে,
জানা গেল রহমে
॥
নবী না
মানে যারা,
মোয়াহেদ কাফের তারা
সেই মোয়াহেদ দায়মাল হবে,
বেহিসাব দোজখে যাবে
আবার তারা খালাস পাবে,
লালন কয় মোর কি হয় জানি
॥
২
বল বল কে দেখেছ গৌর চাঁদেরে
গোপীনাথ মন্দিরে গেলে,
আর ত এলনা ফিরে
যার লেগে কুল গেল,
সে আমাদের ফাঁকি দিল,
কলঙ্কে জগত ঘিরিল,
কেবল গো আজ আমারে
দরশনে দু্ঃখ হরে,
পরশিলে পরশ করে,
হেন চন্দ্র হয়ে উদয়,
লুকাল কোন শহরে
শুধু গৌর নয় গৌরাঙ্গ,
ধরিয়া সে সোনার অঙ্গ,
লালন বলে এবার আমি পেলাম না,
না কর্মের ফেলে
৩
আয় দেখে যা নূতন ভাব এনেছে গোরা
মুড়িয়ে মাথা গলে কাঁথা,কোটিতে
কৌপিনী ধড়া
গোরা হাসে কাঁদে ভাবের অন্ত নাই,
সদা দীন দরদী বলিয়া ছাড়ে হাই,
জিজ্ঞাসিলে কয়না কথা,
হয়েছে কি ধন হারা
গোরা শাল ছেড়ে কৌপীন পরেছে;
আপনি মেতে জগৎ মাতিয়েছে,
মরি হায় কি লীলা কলিকালে,
বেদ বিধি চমৎকার
সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি হয়,
গোরা তার মাঝে এক দিব্য যুগ দেখায়;
লালন বলে ভাবুক হলে,
সে ভাব জানে তা’রা
৪
ব্রজনীলে একি নীলে
কৃষ্ণ গৌপীকারে জানাইলে
যারে নিজ শক্তিতে গঠলে নারয়ণ,
আবার গুরু বলে ভজলে তার চরণ,
এ কি
ব্যবহার,
শুনতে চমৎকার,
জীবের বোঝা ভার ভূমন্ডলে
নীলে দেখিয়ে কম্পিত ব্রজধাম,
নারীর মান ঘুচাইতে যোগী হল শ্যাম,
দুর্জ্জয় মানের দায়,
বাকা শ্যাম রায়,
নারীর
পাদপদ্ম মাথায় নিলে
এ জগতের চিন্তা শ্রী-হরি,
আজ কি নারীর চিন্তা হলেন গো হরি,
অসম্ভব বচন ভেবে কয় লালন,
রাধার দাসখতে সাঁই বিকালে
৫
আপ্ততত্ত্ব না জানিলে ভজন হবে না
পড়বি গোলে
আগে জানগা কালুল্লা, আনাল হক আল্লা
যারে মানু্ষ
বলে;
পড়ে ভূত এবার, হস্ নে মন আমার
একবার দেখ না প্রেম নয়ন খুলে
আপনি সাঁই ফকির, আপনি ফিকির
ওসে লীলার
ছলে;
আপনার আপনি, ভুলে সে রব্বানী
আপনি ভাসে আপন প্রেম-জলে
লাইলাহা তন ইল্লাল্লা জীবন
আছে প্রেম যুগলে
লালন ফকির কয়, যাবি মন কোথায়
আপনার আপনি ভুলে
৬
আগে জান না ওমুরায় বাজী হারিলে তখন,
লজ্জায় মরণ
শেষে আমার মিছে কান্দিলে কি হয়
খেল মন খেলারু ভাবিয়ে শ্রীগুরু
সামাল সামাল বাজী সামাল সর্বদায়
এ দেশেতে জুয়াচুরি খেলা,
টোটকা মেরে কটকায় ফেলে রে,
মন ভোলা তাইতে বলি বারে বারে
খেলিস্ খুব হুঁশিয়ারে,
নয়নে নয়নে বান্ধিয়ে সদায়
চোরের সঙ্গে নাহি খাটে ধর্মছাড়া
রাগ-অস্ত্র ধ’রে
দুষ্ট দমন ক’রে
স্বদেশেতে গমন করো ত্বরায়
চোয়ানি বান্ধিয়ে খেলে যেই জনা
কাহারো যে সাধ্য সেই অঙ্গে দেয় হানা
ফকির লালন বলে,আমি তিন তের না জানি
বাজী মেরে যাওয়া ভার হল আমার
৭
আমার মনেরে বোঝাই কিসে।
ভব যাতনা আমার জ্ঞানচক্ষু আঁধার
ঘিরলো রে যেমন রাহুতে এসে
যেমন বনে আগুন লাগে সবায় তাহা দেখে।
মন আগুন কে দেখে
যে আশাতে আমার ভবে আসা হ’লো
অসারো ভাবিয়ে জনম ফুরাইলো
পূর্বে যে সুকৃতি ছিল,
পেলাম, সেহি ফল,
না জানি কি আর হবে রে শেষে
আমি গুণে আনি দেওয়া হয়ে যায় রে কুও
আমার হ’ল
তেমনি সকল কর্ম ভুও
কারে বলব এসব কথা কে ঘুচাবে ব্যথা
মন-আগুনে মন দগ্ধ হতেছে
এ ভুবনে বিধি বড় বল ধরে
কর্মফাঁসে বেঁধে মারিল আমারে,
কেন্দে লালন ফকির সদায় দিচ্ছে গুরুর দোহাই,
আর যেন আসিনে এমন দেশে
৮
একি অনন্ত লীলা তার দেখ এবার
আলেক পুরুষ খাকে বারি
ক্ষণেক ক্ষণেক হয় নিরাকার
আছে সাঁই নৈরাকারে
ছিল কুদরতের জোরে
সংসার সৃজনের তরে
ধরিলে প্রকৃতি আকার
শুনি সাঁই করিম কয় তারে
কার অংশে তিন আকার
কারে ভজে কারে পাব
দিশে পাই নে তার
ভেবে পাই নে তার অন্বেষণ
মনে কিবা পাবি তখন
বিনয় করে বলছে লালন
ঘুচাও আমার ঘোর অন্ধকার
৯
এনে মহাজনের ধন বিনাশ করলি ক্ষ্যাপা
সদ্য বাকির দায়ে যাবি যমালয়ে
হবে রে কপালে দায়মাল ছাপা
কৃতিকর্মা সেহি ধনী
অমূল্য মানিক মণি
করিল কৃপা তোরে,
করিল কৃপা
সে ধন এখন হারালি রে মন
এমন কি তোর
কপাল বদওকা
আনন্দ-বাজারে এলে
ব্যপারের লাভ ক’রবো
ব’লে
এখন স্বর্ণ সেদকা সঙ্গেরি সঙ্গে
মজে রঙে
হাতের তীর হারায়ে হ’লি
ক্ষ্যাপা
দেখলিনে মন বস্তু ধু্ড়ে
কা্ঠের মালা নেড়ে চেড়ে
মিছে নাম জপা
লালন ফকির কয়,
কি হবে উপায়
বৈদিকে রইল জ্ঞান-চক্ষু ঝাঁপা
১০
কি বা রূপের পুলক ঝলক দিচ্ছে দ্বিদলে
সে রূপ দেখলে নয়ন যায় ভুলে
ফণি, মনি, সৌদামিনী জিনিয়ে
রূপ উজ্জ্বলে
অস্থি, চর্ম, শূণ্য রূপ
তাহে মহা রসের কূপ
বেগে ঢেউ খেলে
ও তার এক বিন্দু
অপার সিন্ধু
হয়রে এর ভূমন্ডলে
দেহের দ্বল পদ্মে যার
উপাসনা নাই তার
কথায় কি মেলে
তীর্থ, ব্রত যার জন্য
এই দেহে তার সব মিলে
রসিক যারা সচেতন
রসরতি টেনে উজান
রূপ উদয় পলে
লালন হবে নেংটি এড়া
মিছে বেড়ায় রূপ বলে
১১
করিয়ে বিবির নিহার রসুল আমার
কৈ ভুলেছেন রাব্বানা,
জাত ছিপাতে মিশে আছে, দুস্তি করেছে
কেউ কাহারে ভুলতে পারে না
খুদি তুই মর্ম্মকথা, পাবি কোথা
কৈ করেছে নবী চৌদ্দ নিকা,
চৌদ্দ ভুবনের পতি, চৌদ্দ বিবি
করেছে দেখ তার নমুনা
ছিপাতে এসে নবী, তিনজন বিবি
সুসন্তানের হয়েছে মা;
আলেফ লাম মীমে দেখ না, ও দিন-কানা
তিনে নবী ছৈঁয়া দেনা
আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজ লয়ে
সাত সমুদ্রের খবর জানা
না পেয়ে তার আদি অন্ত হয়ে শ্রান্তে
বসে আছে কতজনা
লালন কয় বুঝবার ভুল করে কবুল
দেখ না নবী ছাল্লেয়ালা,
আগমে নিগুম যিনি গুনমণি
তার সাথে আর কার তুলনা
১২
কানাই! কার ভাবে তোর এ ভাব দেখিয়ে
ব্রজের সে ভাবতো দেখি নারে
পরণ পীত ধরা
মাথায় ছিল মোহনচূড়া
করে বাঁশিরে
আজ দেখি তোমার করয়া কোপীন সার
ব্রজের সে ভাব কোথায় রাখলিরে
দাস দাসী ত্যজিয়ে কানাই
একা একা ফিরছেরে ভাই
কাঙালবেশ ধরে
ভিখারী হলি, কাঁথা সার করলি
কিসের অভাবেরে
ব্রজবাসীর হয়ে নিদয়
আসিয়ে ভাই নদিয়ায়
কি সুখ পালি রে
লালন বলে আর
কার রাজ্য কার
আমি সব দেখি মিছেরে
১৩
চিরকাল জল ছেঁচে,
আমার জল মানে
না এ ভাঙ্গা নায়
এক মালা জল ছেঁচেতে গেলে
তিন মালা জোগায় তেতলায়
ছুতোর বেটার কারসাজিতে
জনম-তরীর বাইন মারা নয়
আশেপাশে কষ্ট সরল
মেঝেল কাঠ গড়াইছে তলায়
আগা নৌকায় মন সর্বক্ষণ
বসে বসে হুকুম দেয়
আবার আমার দশা তলা-ফাঁসা
জল ছেঁচা সার গুদরি গলায়
মহাজনের অমূল্য ধন
মারা গেল ডাকনি জোলায়
ফকির লালন বলে, মোর কপালে
কি হবে নিকাশের বেলায়
১৪
চারি যুগে বারি তালা খেলছে খেলা
মন কমলে
মনের খবর মন জানেনা
এ বড় আজব কারখানা
মদ মত্তে জ্ঞান থাকেনা
হাত বাড়াই চাঁদ ধরব বলে
সব শাস্ত্রে আছে ঠেকা
মন দিয়া সব লেখা জোকা
কোথা মনের ঘর দরজা
কোথা সে মনের রাজা
বয়ে বেড়াই পুথির বোঝা
আপনার আপনি
ভূলে
মন মহলে খেলছে আসি
জোয়ার ভ দিবা নিশি
তথা অমাবস্যা পূর্ণমাসী
দেখা যায় কত কারসাজী
সেথা ধরছে সুধা রাশিরাশি
মন জানে না সেরূপ নিলে
রসের ভেয়ান যে করেছে
গুরু কৃপা তার হয়েছে
বহিছে লাবন্য করি
তাহেরে অটল
বিহারী
লালন বলে মরিমরি
মনেরে বুঝাই কি ছলে
১৫
জানব হে এই পাপী হইতে।
যদি এসেছে হে গৌর
জীবকে ত্বরাইতে
নদীয়া নগরে যতজন
সবারে বিলালে প্রেমধন
আমি নরাধম, না জানি মরম
চাইলে নাহে গৌর আমা পানেতে
তোমারি সুপ্রেমেরি হাওয়ায়
কাঠের পুতলি মলিন হয়
আমি দীনহীন, ভজন বিহীন
অপার হয়ে বসে আছি কুপথে
মলয়ও পর্বতের উপর
যতবৃক্ষ সকলই হয় সার
কেবল যায় জানা, বাঁশে সার হয় না
লালন পল তেমনি প্রেমশূন্য চিতে
১৬
তারে চিনবে কেরে এই মানুষে
মেরে সাঁই ফেরে যে রূপে সে
মায়ের গুরু পুত্রের শিষ্য
দেখে জীবের জ্ঞান নৈরাশ্য
কিবা তার মনের উদ্দেশ্য ভেবে বুঝা যায় কিসে
গোলকে অটল বিহারী
ব্রজপুরে বংশীধারি
হলো নদীয়াতে অবতারি
ভক্তরূপে প্রকাশে
আমি ভাবি সব নৈরেকার
কে গো ফেরে স্বরূপ আকার
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমার
কই হল রে সে
–দিশে
১৭
দেখ না এবার আপনারো ঘর ঠাওরিয়ে
আঁখির কোনে পাখির বাসা যায় আসে হতের কাছে দিয়ে
ঘরে সব তো পাখি একটা
তায় সহস্র কুঠরী কোঠা
আছে আড়া পাতিয়ে ও তার নিগুমে তার
মূল একটি ঘর অচিন হয় সেথা যেয়ে
ঘরের আয়না আঁটা চৌপাশে
মাঝখানে পাখি বসে আছে
আনন্দিত হয়ে
তোরা দেখনা রে তাই ধরার জো নাই
সামান্য হাত বাড়ায়ে
পাখি দেখতে যদি সাধ কারো,
সন্ধানী চিনে ধর
দিবে দেখায়ে
১৮
দয়াল নিতাই কারে ফেলে যাবে না
চরণ ছেড়েনা রে ছেড়ো না।
দৃঢ় বিশ্বাস করিয়া মন
ধর নিতাই চাঁদের চরণ
এবার পার হবি পার হবি তুফান
অপারে কেউ থাকবে না
হরি নামের তরী লয়ে
ফিরছে নিতাই নেয়ে হয়ে
এমন দয়াল চাঁদকে পেয়ে
স্মরণ কেনে নিলেনা
কলির জীবকে হয়ে সদায়
পারে যেতে ডাকছে নিতাই
অধীন লালন বলে মন চল যাই
এমন দয়াল মিলবে না
১৯
প্রেম পাথারে যে সাঁতারে
তার মরনের ভয় কি আছে
স্বরূপ মরণে সদা মত্ত যারা
ঐ কাজে
শুদ্ধ প্রেম রসিকের ধর্ম
মানে না বেদ বিধির কর্ম
রসিক বৈ আর
কে জেনেছে
শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ
এই পঞ্চে হয় নিত্যানন্দ
যার অন্তরে সদা আনন্দ
নিরানন্দ জানে না সে
পাগল পায় পাগলের ধারা
দুই নয়নের বহে ধারা
যেন সুরধুনীর ধারা
লালন কয় ধারায় ধারা মিশে আছে
২০
মন আমার তুই করলি একি ইতরপানা।
দুগ্ধেতে যেমন রে মন তোর মিশলো চোনা
শুদ্ধ রাগে থাকতে যদি
হাতে পেতে অটল নিধি
বলি মন তাই নিরবধি
বাগ মানে না
কি বৈদিকে ঘিরলো হৃদয়
হল না সু-রাগে উদয়
নয়ন থাকিতে সদয় হলিরে কানা
বাপের ধন তোর খেলো সর্পে
জ্ঞান-চক্ষু নাই দেখবি কারে
লালন বলে, হিসাব কালে
যাবে জানা
২১
মন বিবাগী বাগ মানে না রে।
যাতে অপমৃত্যু হবে তাই সদাই করে
কিসে হবে আমার ভজন সাধন,
মন হ’ল
না আমার মনেরি মতন,
দেখে শিমুল ফুল, সদাই বেয়াকুল
(মনকে) বুঝাইতে নারি জনম ভরে
মনের গুণে কেহ মহাজন হয়,
ঠাকুর হয়ে কেহ নিত্য পূজা খায়,
আমার এই মনে ত আমায় করলে হত দুকূলো,
হারালাম মনেরি ফেরে
মনের মত মনকে পেলাম না,
কিরূপে আজ করি সাধনা,
লালন বলে, আমি হ’লাম
পাতালগামী
কি কর’তে
এসে,গেলাম
কি ক’রে॥
২২
মানুষ লুকাইল কোন শহরে।
এবার মানুষ খুঁজে পাইনে গো তারে॥
ব্রজ ছেড়ে নদেয় এলো,
তার পূর্বান্তরে খবর ছিল,
এবে নদে ছেড়ে কোথা গেল,
যে জানো বল মোরে॥
স্বরূপে সেই রূপ দেখা
যেমন
চাঁদের আভা
এমনি মতো থেকে কোথা
প্রভু ক্ষণেক ক্ষণেক বারাম দেয় রে॥
কেউ বলে তার নিজ ভজন,
করে নিজ দেশে গমন,
মনে মনে ভাবে লালন,
এবার নিজ দেশে বলি কারে॥
২৩
মনের মানুষ নাই রে দেশে
সেই দেশে কেমনে থাকি।
সখি এই দেশে থেকে
ঝরে যে আমার আঁখি॥
দেশের লোকের মন ভাল না
কৃষ্ণের কথা কইতে দেয় না
সদায় আমার মন উতালা
ঘরে মন বা কেমনে রাখি॥
আমার হয়েছে কপাল মন্দ
জানো না রে প্রাণ-গোবিন্দ
প্রাণ আমার করছে উড়ি উড়ি,
হায় কি করি
লালন বলে আপন ছেড়ে পলাম পরের চোখি॥
২৪
মন আমার আজ পলি ফেরে
দিনে দিনে পিতৃধন তোর
গেল চোরে॥
মায়ামদ খেয়ে মনা
দিবানিশি ঝোঁক ছোটে না
পাছ বাড়ির উল্ হল না
কে কী করে॥
ঘরের চোরে ঘর মারে মন
যায় না ঘোর জানবি কেমন
একদিন দিলে না নয়ন
আপন ঘরে॥
ব্যাপার করতে এসেছিলে
আসলে বিনাশ হলে
লালন কয় হুজুরে গেলে
বলবি কী রে॥
২৫
শাঁইর লীলা বুঝবি ক্ষ্যাপা কেমন করে
লীলার যার নাইরে সীমা
কোন ছলে সে কোন রূপ ধরে॥
গঙ্গায় গেলে গঙ্গাময় হয়
গর্তে গেলে কূপজল হয়
ভেদবিচারে
এমনি সাঁই অনন্ত ধারা
জানায় পাত্র অনুসারে॥
আপনে ঘুরায় আপনি ঘুরি
আপনি করেন রসের চুরি
ঘরে ঘরে
আপনি করেন ম্যাজেষ্টারি
শাঁই আপন পায়ে বেড়ী পরে॥
এক হইতে অনন্ত ধারা
তুমি আমি নামে বেওর
ভবের পরে
লালন বলে আমি কি রে
তাই জানলে ধাঁধাঁ যেত দূরে॥
২৬
সাদা সোহাগিনী ফকীর সাদা যে হয়
তবে কেহ কেহ কেন বেদাত বেদাত কয়॥
যার নাম সাদা সেই তো গাহাস
কোরানে তার বলছে
‘লাহাস’
তা হলে হাদিস কেতাবে
রাগ রাগিনী দেয়॥
সব গান যদি বেদাত হতো
তবে কি ফেরেস্তায় সে তো
দেখো নবীকে মেহরাজ পথে
নৃত্য গীতে লয়॥
আদ্খোট্টা পৌনঃ বাঙালী ভাই
যত গোল বাধায়
গানের ভাব বিশেষে ফল দেবেন শাঁই
লালন ফকির কয়॥
২৭
সোনার মান গেল রে ভাই
বেঙ্গা এক পিতলের কাছে॥
শাল পটকের কপালের ফের
কুষ্টার বানাতে দেশ জুড়েছে॥
বাজিলো কলির আরতি
প্যাঁচ পল ভাই মানীর প্রতি
ময়ুরের নৃত্য দেখি
প্যাঁচায় পেকম ধরতে বসে॥
শালগ্রামকে করে নোড়া
ভূতের ঘরে ঘন্টা নাড়া
কলির তো এমনি দাঁড়া
স্থূল কাজে সব ভুল পড়েছে॥
সবাই কেনে পিতল দানা
জ্হরের তো উল হল না
লালন কয় গেল জানা
চটকে জগৎ মেতেছে॥
২৮
বিনা কর্মে ধন উপার্জন
কে কর’তে
পারে॥
বাঙ্লা কেতাব সকলে পড়ে
আরবী পার্সী নাগ্রী বুলি
বাঙ্লা নিগে পাশ ক’রে॥
এক ইস্কুলের দশ জনা পড়ে
গুরুর মনে এই বাসনা
সব সমান করে!
কেউ পাছে এস আগে গেলে
পরীক্ষায় চেনা যায় তারে॥
বিশ্বম্ভর সে বিষ পান করে
তাড়োয় করে বিছে হজম
কাকে কি পারে?
লালন বলে সাধক যারা
বিষ খেয়ে জীর্ণ করে॥
২৯
প্রেম পরশ রতন
লভিবারে হেন ধন
কর হে যতন॥
প্রেমে রত যত জন
নাহি তাদের কুবচন
দ্বেষ হিংসা কদাচন
না লয় মনে কখন॥
প্রেমে সহিষ্ঞুতা করে
পর হিতে সদাই ফেরে
শত্রু মিত্রের মঙ্গল করে
সবাই তার সম জন॥
প্রেমে লোভ ক্রোধ হরে
অহংকার বিনাশ করে
দয়ামায়া গুণ ধরে
সুখ-প্রস্রবণ॥
সিরাজ শাঁইয়ের প্রেমধন
করিবারে বিতরণ
ধর লালন তাঁর চরণ
সঁপে প্রাণ-মন॥
৩০
কারে
কারে
ব’লছ
মাগী
মাগী।
মাগীর
হাত
এড়াতে
পারে
কোন্
বা
মহাযোগী।
ম’লো
মাগীর
বোঝা
টেনে
তাই
না
বুঝে
আম
লোকে
বাধালো
ঠক্ঠকি॥
মাগীর
দায়
নন্দের
বেটা
বাধালো
লটাপটা
মাগীর
দায়
মুড়িয়ে
মাথা
হাল্ছে
বেহাল
গোপী॥
মহেশ্বর
মাগীর
দাসী
মাগীর
দায়
শিব
শ্মশানবাসী
সিরাজ
শাঁ
কয়
লালন
তুমি
কিসের
বৈরাগী॥
৩১
গুণে
প’ড়ে
সারলি
দফা
ক’রলি
রফা
গোলেমেলে॥
একদিন
ভাবলিনে
মন
কোথায়
সে
ধন
ভাজলি
বেগুন
পরের
তেলে॥
ক’রলি
বহু
পড়াশুনা
কাজের
বেলায়
ঝ’ল্সে
কানা
কথায়
চিঁড়ে
ভেজে
না।
জল
কিম্বা
দুধ
না
দিলে॥
আর
কি
হবেএমন
জনম
লুট্বি
মজা
মনের
মতন
বাবার
হোটেল
ভাঙ্বে
যখন
থাকবি
তখন
কার
বা
শালে॥
হায়
কি
মজা
তিলে
ভাজা
খেয়ে
দেখলিনে
মন
কেমন
মজা
লালন
ফকির
বেজাতিয়ের
রাজা
হ’য়ে
আছে
কালে
কালে॥
৩২
চাষার
কর্ম
হালে
রে
ভাই
লাঙ্গল
বইতে
মানা।
জমির
চাষ
না
দিলে
ঘাস
মরে
না
ফলে
কা’শে
বেনা॥
অনুরাগের
চাষা
হ’য়ে
প্রেমের
কর
চাষ
তাতে
শুকাইবে
ঘাস
(জমিতে)
নীর
পড়িবে
কৃষি
হবে
ফ’লে
যাবে
সোনা॥
সাগু
কাঠের
লাঙ্গল
বান্ধ
ক্ষ্যান্ত
কাঠের
ইশ
তাতে
থা’কবে
নাকো
বিষ
লালন
বলে
ওরে
চাষা
চাষের
কাম
ছেড়’
না॥
৩৩
মণি
তুই
হ’স্নে
শ্মশানবাসী-
কাম
লীলা
কর্না
সাধন
মনের
মতন
পাবি
হারাধন
পূ্র্ণ
শশী॥
কস্তুরীর
গন্ধ
অতি
ঐ
ভাবে
ভূমন্ডে
সতী
ক্ষিন্ন
হয়ে
নারীর
রতি
ভক্তি
করে
অতি।
(তারা)
পুরুষেরে
ভাল
বাসে
দিয়ে
মিষ্ট
হাসি-
সতী
নারীর
পতি
যেমন
আকাশেতে
উদয়
শশী॥
কস্তুরী
সুধা
মিলে
যাও
ভবে
হেসে
খেলে
পরশে
পরশ
মিলে
পূর্ণ
হলে
শশী।
(মণি)
তুই
রে
আমার
কামের
শিষ্য
হস্তে
লয়ে
বসি
কাম
রূপেতে
আছে
সে
কাম
রে
আয়না
এবার
দেখে
আসি॥
সিরাজ
শাঁ
কয়
লালনেরে
শোন্
লালন
কই
রে
তোরে
আর,
কিছু
ক’স
না
মোরে
তোরে
ভালবাসা
(তোরে)
বিনা
কামে
ভাল
বেসে
যৌবন
হ’ল
বাসি।
(আমি)
আর
তোরে
বাসবনা
ভাল
করিস্
না
তুই
দ্বেষাদেষি॥
৩৪
সত্য
বল
সুপথে
চল
ওরে
আমার
মন
সত-সুপথ
না
চলিলে
পাবেনা
মানুষ
দরশন॥
খরিদ্দার
মহাজন
যে
জন
তার
বাট্
খারাতে
মন
সে
আসলে
করে
ক’ম।
(আবার)
গদীয়ান
মহাজন
যে
জন
(সে)
ব’সে
কেনে
প্রেম-রতন॥
পরের
দ্রব্য
পরনারী
হরণ
ক’রো
না
কখন
পারে
যেতে
পারবে
না
মন
মহাজনের
বচন।
যতবার
করিবে
হরণ
ততবার
লইবে
জনম॥
লালন
ফকীর
আসলে
মিথ্যে
ঘুরে
বেড়ায়
তীর্থে
তীর্থে
না
চিনে
আপন
ভুবন।
সই
পারলে
না
এক
মন
দিতে
আসলেতে
প’ল
ক’ম॥
৩৫
আজব
রং
ফকিরী
সদা
সোহাগিনী
শাঁই
(তার)
চুড়ি
শাড়ী
ফকিরী
ভেক
কে
বুঝিয়ে
তাই॥
সর্বকেশী
মুখে
দাঁড়ি
পরণে
তার
চুড়ি‒শাড়ী
কোথা
হইতে
এল
সিঁড়ি
জেন্তে
উচিত
চাই॥
ফকিরী
গোরোর
মাঝার
দেখ
হে
করিয়ে
বিচার
সদা
সোহাগী
সবার
আধ্
গোরো
শুনতে
পাই॥
সদা
সোহাগীর
ভাবে
প্রকৃতি
হইতে
হবে
লালন
কয়
মন
পাবি
তবে
ভব‒সমুদ্রে
ঠাঁই॥
৩৬
ভজিতে
উচিত
বটে
ছড়ার
হাঁড়ি
যাতে
পবিত্র
করে
ঠাকুর
বাড়ী॥
ঐ
ছড়ার
হাঁড়ির
জল
কখনো
হয়
পরশ
ফল
কখনো
তায়
ছুঁস্নে
বলে
করে
আড়ি॥
চণ্ডীমণ্ডপালয়
সর্বদা
আসে
আর
যায়
ছড়ার
নুড়ি॥
কখনো
তায়
বা’র
বাড়ী
রাখিয়া
আসে
ছু’ড়ি॥
ঐ
ছড়ার
হাঁড়ির
মত
র’য়েছে
এক
বিষম
তত্ত্ব
ফকীর
লালন
বলে
জাগায়ে
দ্যাখ্
বুদ্ধির
নাড়ী॥
৩৭
খাঁচার
ভিতর
অচি্ন
পাখী
কেম্নে
আসে
যায়
ধরতে
পারলে
মন‒বেড়ী
দিতাম
তাহার
পায়॥
আট
কুঠরী
নয়
দরজা
আঁটা
মধ্যে
ঝরকা
আছে
কাটা
তার
উপরে
সদর
কোঠা
আয়না
মহল
তায়॥
কপালের
ফ্যার
নইলে
কি
আরপ
পাখিটর
এমন
ব্যবহার।
খাঁচা
ছেড়ে
পাখি
আমার
কোন
বনে
লুকায়॥
মন
তুই
রইলি
খাঁচার
আশে
খাঁচা
যে
তোর
কাঁচা
বাঁশে
কোন
দিন
খাঁচা
পড়’বে
খসে
লালন
ফকীর
কয়॥
৩৮
পাখী
কখন
জানি
উড়ে
যায়।
বদ্
হাওয়া
লেগে
খাঁচায়॥
খাঁচার
আড়া
প’ল
ঢ’সে
পাখি
আর
দাঁড়াবে
কিসে
ঐ
ভাবনা
ভাব্ছি
বসে
চমক-জরা
বইছে
গায়॥
ভেবে
অন্ত
নাহি
দেখি
কার
বা
খাঁচা
কেবা
পাখী
আমার
এই
আঙ্গিনায়
থাকি
আমারে
মজাতে
চায়॥
আগে
যদি
যেত
জানা
জঙলা
কভু
পোষ
মানে
না
তবে
উহার
প্রেম
ক’রতাম
না
লালন
ফকীর
কয়॥
৩৯
আমার
ঘরের
চাবি
পরের
হাতে।
কেমনে
খুলিয়ে
সে
ধন
দেখব
চ’ক্ষেতে॥
আপন
ঘরে
বোঝাই
সোনা
পরে
করে
লেনা-দেনা
আমি
হ’লেম
জন্মকানা
না
পাই
দেখিতে॥
রাজী
হ’লে
দারোয়ানী
দ্বার
ছড়িয়ে
দেবেন
তিনি
তারে
বা
কই
চিনি-শুনি
বেড়াই
কুপথে॥
এই
মানুষে
আছে
রে
মন
যারে
বলে
মানুষ
রতন
লালন
বলে
গেয়ে
সে
ধন
পারলাম
না
চিনতে॥
৪০
আমার
বাড়ীর
কাছে
আর্শী
নগর
সেথায়
প’ড়শী
বসত
করে
আমি
একদিনও
না
দেখিলাম
তারে॥
কি
ব’লব
সেই
প’ড়্শীর
কথা
(তার)
হস্ত
পদ
স্কন্ধ
মাথা
নাইরে‒
আমর
মনের
বান্জা
দেখব
তারে
ক্যামনে
যাই
ওপারে॥
পড়’শী
যদি
আমায়
ছুঁতো
(আমার)
যম-যাতনা
সকল
যেত
দূরে‒
সে আর লালন
একখানে রয়
তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে॥
৪১
অনেক ভাগ্যের ফলে
সে চাঁদ কেউ দেখতে পায়।
অমাবস্যা নাই সে চাঁদে
দ্বিদলে তার কিরণ ধায়॥
বিন্দু মাঝে সিন্ধু বারি
মাঝাখানে তার শূণ্য গিরি
অধর চাঁদের শূন্য পুরী
সেহি তো তিল প্রমান জা’গায়॥
যেথা রে সে চন্দ্র ভুবন্
দিবারাতের নাই আলাপন
কোটি চন্দ্র যিনি কিরণ
বিজলী সন্চার সদায়॥
দরশনে দুঃখ হরে
দরশনে হরষ করে
এমনি সে চাঁদের মহিমে
লালন ডুবে ডোবে না তায়॥
৪২
শাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা
জীবের কি সাধ্য আছে
গুনে-প’ড়ে
তাই বলা॥
কখনো ধরে আকার
কখনো হয় নিরাকার
(কেউ) বলে সাকার কেউ নিরাকার
অপার ভেবে হই ঘোলা॥
অবতার অবতারি
এ তো সম্ভবে তারি
দেখ্ রে জগৎ ভরি,
এক চাঁদে হ্য় উজ্জলা॥
ব্রহ্মাণ্ড ভাণ্ড মাঝে
শাঁই বিনে কি খেলা আছে
লালন কয় নাম ধরে সে
কৃষ্ণ করিম কালা॥
৪৩
খেলতেছে মনের মানুষ নীরে ক্ষীরে।
আপন আপন ঘর
খোঁজ মন আমার
কেন ঘুরে বেড়াও অন্ধকারে॥
নীর‒নদীতে
ডুবা বিষম দায়
ডুবলে কত আজব দেখা যায়
সেথা নীর ভাণ্ড
পূর্ণ ব্রহ্মণ্ড
কাণ্ড দেখে মোর নয়ন ঝরে॥
শূণ্য দেশে মেঘের উদয়
নীরদ বিন্দু বরিষণ হয়’
সেথায়
রঙ-বেরঙ ফল
আজব কুদরতি কল ভবের
‘পরে॥
ইন্দ্র-ডংকা নাই সে রাজ্যে
সহজ মানুষ ফিরছে সহজে
সিরাজ শাঁর চরণে
ভেবে কয় লালন
(তারে) দেখলে জীবের ধান্দা সারে॥
৪৪
এমন দিন কি হবে আর
খোদা সেই ক’বে
গেল
রসুল রূপে অবতার
আদমের রুহু সেই
কেতাবে শুনিলাম যেই
নিষ্ঠা যার হ’লরে
ভাই
মানুস মু্র্শীদ ক’রলে
সার॥
খোদ
সুরতে পয়দা আদম
কিসে জানা যায় সে মরম
আকার নাই তার সুরত কেমন
লোকে বলে তা’ও
আবার॥
আহ্মদের নাম লিখিতে
মিম্ নফি তার হয় করিতে
সিরাজ শাঁই কয় লালন তাতে
কিণ্চিৎ নজীর দেখ এবার।
৪৫
ঐ গোরা কি শুধুই গোরা
ওগো নাগরী।
থেকে থেকে চাইছে দেখ
কেমন ছিরি॥
নয়ন দুইটি বাঁকা বাঁকা
মনে যেন দিচ্ছে দেখা
ব্রজের হরি॥
না জানি কোন ভাব ল’য়ে
এসেছে শ্যাম গউর হ’য়ে
ক’দিন
বা দেখবে যারা
সৌভাগ্য তাদের-ই॥
৪৬
রাধার তুলনা পীরিত
সামান্য কেউ যদি করে।
মরে বা না মরে পাপী
অবশ্য যায় ছারে খারে॥
কোন্ প্রেমে সে ব্রজপুরী
বিভোর কিশোর কিশোরী
কে পাইবে গম্ভ তারি
কিঞ্চিৎ ব্যক্ত গোপীর দ্বারে॥
যায় না॥
আত্মা রূপে কর্ত্তা হরি
নিষ্ঠা হ’লে
মিলবে তারি
ঠিকানা
বেদ-বেদান্ত প’ড়বি
যত
বাড়বে তত লক্ষনা॥
দেহ অমৃত নদীতে সুধা
সেই সুধা পান করিল
ক্ষুধা তৃষ্ণা রয় না
ফকীর লালন ম’ল
জলে পিপাসায় রে
কাছে থাকতে নদী মেঘনা॥
৪৮
কার জন্যে ঘুরিস খ্যাপা
দেশ-বিদেশে।
আপন ঘর খুঁজলে রতন
পায় অনা’সে॥
দৌড়াদৌড়ি দিল্লী-লাহোর
আপনার কোলে রয় ঘোর
নীরূপ আলেক শাঁই মোর
আত্মা রূপ সে॥
যে লীলা ব্রহ্মাণ্ডের উপর
সে লীলে ভাণ্ড মাঝার
ঢাকা যেমন চন্দ্র আকার
মেঘের পাশে॥
আপনারে আপনি চেনা
সেই বটে উপাসনা
লালন কয় আলেক বেনা
যার হয় দিশে॥
৪৯
শুদ্ধ প্রেম রসিক বিনে
কে তারে পায়।
যার নাম আলেক মানুষ
আলেকে রয়॥
রসিক রস অনুসারে
নিগূঢ় ভেদে জান্তে পারে
রতিতে মতি ঝরে
মুল খণ্ড হয়॥
নীরে নিরঞ্জন আমার
অর্ধ্ব লীলা ক’রলেন
প্রচার
হ’লে
আপন জন্মের বিচার
সব জান যায়॥
আপনার জন্মলতা
খোঁজ তার মূলটি কথা
লালন বলে হবে সেথা
শাঁইর পরিচয়॥
৫০
সদাই সে নিরঞ্জন নীরে ভাসে।
যে জানে সেই নীরের খবর
নীর ঘাটায় সে খুঁজলে পাবে
অনায়াসে॥
বিনা মেঘে নীর বরিষণ
করিতে হয় তার অন্বেষণ
যাতে হ’ল
ডিম্বুর গঠন
থাকিয়া আবিম্ব স্তম্ভবাসে॥
যেথা নীরের হয় উৎপত্তি
সেই স্থানে জমে শক্তি
মিলন হ’লে
উভয় রতি
বসে তখন নৈরাকারে এসে॥
নীরে নীরঞ্জন অবতার
নীরেতে সব করে সংহার
সিরাজ শাঁই তাই কয় বারে বারে
দেখ না লালন আপ্ত-তত্ত্বে বসে॥