নারদীয় শিক্ষা
প্রথম প্রপাঠক
দ্বিতীয় কণ্ডিকা
সামবেদেতু বক্ষ্যামি স্বরাণাং চরিতং যথা।
অল্প গ্রন্থং প্রভূতার্থং শ্রব্যং বেদাঙ্গমুত্তমম্ ॥১॥
শব্দার্থ:
- সামবেদেতু (সামবেদে + তু)। সামবেদে, কিন্তু / সামবেদের বিষয়ে
- বক্ষ্যামি। আমি বলবো/ব্যাখ্যা করবো
- স্বরাণাং। স্বরসমূহের (সপ্তস্বর বা সঙ্গীতের স্বর)
- চরিতং। আচরণ, বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি
- যথা। যেরূপ, যেভাবে
- অল্প। সামান্য, ছোট
- গ্রন্থং। গ্রন্থ, রচনা
- প্রভূতার্থং। প্রচুর অর্থ/ভাব/বিষয়বস্তু সমন্বিত
- শ্রব্যং। শোনার যোগ্য, যা শুনতে ভালো লাগে
- বেদাঙ্গম্। বেদের অঙ্গ (শিক্ষাদি বেদাঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম)
- উত্তমম্। শ্রেষ্ঠ, ভালো
ভাবার্থ:
আমি সামবেদের প্রসঙ্গে স্বরসমূহের চরিত্র বা প্রকৃতি ব্যাখ্যা করব। এটি এমন একটি শ্রেষ্ঠ বেদাঙ্গ যা ছোট্ট একটি রচনা হলেও এর অর্থ বা ভাব অত্যন্ত গভীর, এবং যা শ্রবণের যোগ্য বা শুনতে সুমধুর।
ব্যাখ্যা:
১. প্রতিজ্ঞা: প্রথম চরণে বক্তা প্রতিজ্ঞা করছেন যে তিনি সামবেদ-এর সাপেক্ষে স্বর-এর অর্থাৎ সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য বা প্রয়োগপদ্ধতি আলোচনা করবেন। সামবেদ যেহেতু সঙ্গীতের বেদ নামে পরিচিত, তাই স্বরের আলোচনা তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
২. গুরুত্ব: পরের চরণে তিনি তাঁর রচনার (যা নারদীয় শিক্ষা বা ঐ জাতীয় কোনো গ্রন্থ) বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছেন। তিনি বলছেন- এটি একটি বেদাঙ্গ (বেদের সহায়ক শাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম), এবং এটি উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। এই গ্রন্থটি আয়তনে ছোট (অল্প গ্রন্থ) হলেও এর অর্থ বা বিষয়বস্তু অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক (প্রভূতার্থম্)। অর্থাৎ, কম কথায় অনেক তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটি শ্রব্য—যার অর্থ এটি শুধু পাঠ্য নয়, এটি শুনতেও ভালো লাগে বা এর বিষয়বস্তু শ্রবণযোগ্য (যেমন মন্ত্রপাঠের স্বর বা সঙ্গীতের স্বর)।
এই শ্লোকটি স্বর বা সঙ্গীতের শিক্ষার উপর একটি শ্রেষ্ঠ, সংক্ষিপ্ত, ও গভীর অর্থবহ গ্রন্থ রচনার প্রারম্ভিক ঘোষণা হিসেবে কাজ করছে।
তান-রাগ-স্বর-গ্রাম-মুর্চ্ছনানাং তু লক্ষণম্।
পবিত্রং পাবনং পুণ্যং নারদেন প্রকীর্তিতম্ ॥২॥
শব্দার্থ:
- তান। স্বরসমষ্টির সম্প্রসারণ বা আলাপন (তান)
- রাগ। সুরের বিশেষ বিন্যাস (রাগ)
- গ্রাম। স্বর-গোষ্ঠী বা মূল স্বরস্থান (গ্রাম)
- মুর্চ্ছনানাং। মূর্ছনার (স্বরারোহ-অবরোহের বিশেষ ক্রম)
- লক্ষণম্। বৈশিষ্ট্য, সংজ্ঞা, পরিচয়
- তু। কিন্তু, এবং
পবিত্রং যা শুদ্ধ করে
- পাবনম্। পবিত্রতা দান করে
- পুণ্যম্। ধর্মীয় ফলদায়ক
- নারদেন। নারদ কর্তৃক (নারদ মুনি দ্বারা)
- প্রকীর্তিতম্। প্রকৃষ্টরূপে কথিত বা ব্যাখ্যাত হয়েছে
ভাবার্থ: তান, রাগ, স্বর, গ্রাম এবং মূর্ছনা-এর লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নারদ কর্তৃক পবিত্র, পাবন এবং পুণ্যদায়ক রূপে ব্যাখ্যাত হয়েছে।
ব্যাখ্যা: এই শ্লোকটি 'নারদীয় শিক্ষা' গ্রন্থের নিজস্ব গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। বলা হচ্ছে— সঙ্গীতের যে মৌলিক উপাদানগুলি, যেমন—তান (বিস্তার), রাগ (সুর-বিন্যাস), স্বর (সুর), গ্রাম (স্বরস্থান) এবং মূর্ছনা (আরোহণ-অবরোহণ), সেগুলির সঠিক সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নারদ মুনি এখানে বর্ণনা করেছেন। এই জ্ঞানকে কেবল জাগতিক জ্ঞান হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং পবিত্রতা দানকারী, শুদ্ধকারী এবং ধর্মীয় ফলদায়ক (পুণ্য) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে সঙ্গীতের এই বিদ্যা সাধারণ নয়, এটি আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম।
শিক্ষামাহুর্দ্বিজাতীনাং ঋগ্যজুঃ সামলক্ষণম্।
নারদীয়মশেষেণ নিরুক্তং মনু পূর্বশৈঃ ॥৩॥
শব্দার্থ:
- শিক্ষাম্। শিক্ষা শাস্ত্রকে (বেদাঙ্গ)
- আহুঃ। বলা হয়
- দ্বিজাতীনাং। দ্বিজদের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য)
- ঋগ্যজুঃ। সামলক্ষণম্। ঋক্, যজুঃ ও সাম এই তিন বেদের প্রকৃতি বা পরিচয় স্বরূপ
- নারদীয়ম্। নারদের দ্বারা রচিত (নারদীয় শিক্ষা)
- অশেষেণ। সম্পূর্ণভাবে, নিঃশেষে
- নিরুক্তম্। ব্যাখ্যা করা হয়েছে (অথবা নিরুক্ত বেদাঙ্গ)
- মনু পূর্বশৈঃ। মনু ও তাঁর পূর্ববর্তী ঋষিদের দ্বারা
ভাবার্থ: শিক্ষাকে দ্বিজাতিদের জন্য ঋক্, যজুঃ ও সাম এই তিন বেদের পরিচয় স্বরূপ বলা হয়। নারদীয় এই গ্রন্থটি সম্পূর্ণভাবে মনু এবং তাঁর পূর্ববর্তী ঋষিদের দ্বারা নিরুক্ত (ব্যাখ্যাত) হয়েছে।
ব্যাখ্যা: এই শ্লোকটি 'শিক্ষা' নামক বেদাঙ্গের গুরুত্ব ও তার ঐতিহ্যের উপর আলোকপাত করছে।
১. শিক্ষার উদ্দেশ্য: শিক্ষা বেদাঙ্গটি (যে শাস্ত্রে বর্ণ ও স্বর-উচ্চারণের সঠিক নিয়ম শেখানো হয়) দ্বিজাতিদের (যারা বৈদিক পাঠের অধিকারী,
দ্বিজ ব্রাহ্মণ) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন যে, শিক্ষা জানা থাকলে তবেই ঋক্, যজুঃ ও সামবেদের সঠিক লক্ষণ বা স্বরূপ বোঝা সম্ভব। অর্থাৎ, বিশুদ্ধ বৈদিক উচ্চারণের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।
২. ঐতিহ্য: নারদীয় এই শিক্ষা গ্রন্থটি কোনো নতুন রচনা নয়। বরং মনু (প্রথম মানব ও ধর্মশাস্ত্র প্রণেতা) এবং তাঁর পূর্ববর্তী মহান ঋষিদের দ্বারা এই জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যাত (নিরুক্ত) হয়েছে। এর মাধ্যমে নারদ মুনি এই রচনার প্রাচীনতা, প্রামাণিকতা এবং গভীর জ্ঞানমূলক ঐতিহ্যের উপর জোর দিচ্ছেন।
সপ্ত-স্বরাস্ত্রয়ো গ্রামা মূর্চ্ছনাস্ত্বেক-বিংশতিঃ।
তানা একোনপঞ্চাশদ্-দ্বিত্যেতৎস্বর
মণ্ডলম্ ॥৪॥
শব্দার্থ:
- সপ্ত-স্বরাঃ। সাতটি স্বর (সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি)
- ত্রয়ঃ। তিনটি
গ্রামাঃ গ্রাম (স্বরগোষ্ঠী বা স্বরস্থান-সাধারণত ষড়জ, মধ্যম ও গান্ধার গ্রাম)
- মূর্চ্ছনাস্-তু (মূর্চ্ছনাঃ + তু)। মূর্ছনাগুলি (স্বর-আরোহণ-অবরোহণের বিশেষ ক্রম) কিন্তু
- এক-বিংশতিঃ। একুশ (২১)
- তানাঃ। তানগুলি (স্বর-বিপর্ষয় বা স্বরবিন্যাস)
- একোনপঞ্চাশদ্। ঊনপঞ্চাশ (৪৯)
- স্বরমণ্ডলম্। স্বরমণ্ডল
ভাবার্থ: সাতটি স্বর, তিনটি গ্রাম এবং একুশটি মূর্ছনা
ও ঊনপঞ্চাশটি (৪৯) তানের সমবেত নাম স্বরমণ্ডল।
ষড়্জশ্চ ঋষভশ্চৈব গান্ধারো মধ্যমস্তথা।
পঞ্চমো ধৈবতশ্চৈব নিষাদঃ সপ্তমঃ স্বরঃ ॥৫॥
শব্দার্থ:
- ষড়্জশ্চ। ষড়্জ (সা), চ এবং
- ঋষভশ্চৈব। ঋষভ (রে)
চৈব (চ + এব) এবং, নিশ্চয়ই
- গান্ধারো। গান্ধার (গা)
- মধ্যমস্তথা। মধ্যম (মা)
+তথা সেইরকম
- পঞ্চমো। পঞ্চম (পা)
- ধৈবতশ্চৈব ধৈবত (ধা)
চৈব (চ + এব) এবং, নিশ্চয়ই
- নিষাদঃ নিষাদ (নি)
- সপ্তমঃ।সপ্তম (সাত নম্বর)
- স্বরঃ। স্বর
ভাবার্থ: ষড়্জ,
ঋষভ, গান্ধার মধ্যম পঞ্চম,
ধৈবত, নিষাদ হলো সপ্তম স্বর।
ষড়্জ-মধ্যম-গান্ধারাঃ ত্রয়ো গ্রামাঃ প্রকীর্তিতাঃ।
ভূর্লোকাজ্জায়তে ষড়্জো ভূবর্লোকাচ্চ মধ্যমঃ ॥৬॥
ভাবার্থ:
- ষড়্জ-মধ্যম-গান্ধারাঃ। ষড়্জ, মধ্যম এবং গান্ধার
- ত্রয়ো গ্রামাঃ। তিনটি
গ্রাম
- প্রকীর্তিতাঃ। প্রকৃষ্টরূপে কথিত বা পরিচিত
- ভূর্লোকাৎ (ভূর্লোকাৎ + জ্) ভূলোক থেকে
জায়তে উৎপন্ন হয়, জন্ম নেয়
- ভূবর্লোকাৎ (ভূবর্লোকাৎ + চ) এবং ভূবর্লোক থেকে
ভাবার্থ: ষড়্জ, মধ্যম এবং গান্ধার-এই তিনটি গ্রাম রূপে পরিচিত। ভূলোক থেকে ষড়্জ এবং ভূবর্লোক
(অন্তরীক্ষা) থেকে মধ্যম উৎপন্ন হয়।
ব্যাখ্যা:
- ভূর্লোকাৎ জায়তে ষড়্জঃ:। ভূলোক (পৃথিবী বা জাগতিক স্তর) থেকে ষড়্জ স্বরের উৎপত্তি।
- ভূবর্লোকাচ্চ মধ্যমঃ:। ভূবর্লোক (অন্তরীক্ষ বা মধ্যবর্তী স্তর) থেকে মধ্যম স্বরের উৎপত্তি।
স্বর্গান্নান্যত্র গান্ধারো নারদস্য মতং
যথা।
স্বররাগবিশেষেণ গ্রামরাগা ইতি স্মৃতাঃ ॥৭॥
শব্দার্থ:
- স্বর্গান্নান্যত্র। স্বরগাৎ+চ++অত্র। স্বর্গলোক থেকে
অন্যত্রৱ
- গান্ধারঃ গান্ধার স্বর (গা)
- নারদস্য। নারদ মুনির
- মতং
যথা। মত, অভিমত যেরূপ, অনুসারে
- স্বররাগ
বিশেষেণ। স্বর এবং রাগের বিশেষত্বের কারণে, বৈশিষ্ট্যের জন্য
- গ্রাম রাগ। গ্রাম রাগ
- ইতি। এইরূপ
- স্মৃতাঃ স্মরণ করা হয়
ভাবার্থ: স্বর্গলোকে গান্ধার গ্রাম প্রচলিত আছে। ব্যাখ্যা: আগের শ্লোকে
বলা হয়েছে ভূলোক থেকে ষড়্জ এবং ভূবর্লোক (অন্তরীক্ষা) থেকে মধ্যম উৎপন্ন হয়।
এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এই
শ্লোকে বলা হয়েছ- গান্ধার গ্রামের উৎস স্বর্গ
এবং তা স্বর্গলোকে প্রচলিত আছে।
রাগ প্রকারানবধার্যত্বাদ্বঃ
বিংশতিং মধ্যমগ্রামে ষড়্জগ্রামে চতুর্দশ ।
তানান্ পঞ্চদশোঁচ্ছন্তি গান্ধারগ্রামমাশ্রিতান্ ॥৮॥
শব্দার্থ:
- রাগপ্রকারানবধার্যত্বাদ্বঃ। মূল শ্লোকের অংশ নয়, শ্লোকের বা অধ্যায়ের শিরোনামের অংশ।
যার অর্থ হতে পারে - 'রাগের প্রকারভেদ নির্ধারণের জন্য' বা 'রাগের প্রকারভেদ না জানা হেতু'।)
- বিংশতিং। বিশ (২০) টি।
- মধ্যমগ্রামে। প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতে তিনটি প্রধান
গ্রামেরি।
- ষড়্জগ্রামে। প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতে তিনটি প্রধান
গ্রামেরি।
- চতুর্দশ চৌদ্দ (১৪)টি।
- তানান্। প্রাচীন সঙ্গীতের
বিভিন্ন সুরের দ্বারা বিভিন্ন বিন্যাস)
- পঞ্চদশ পনের (১৫) টি।
- উচ্ছন্তি। বলেন বা ইচ্ছা করেন বা উল্লেখ করেন।
- গান্ধারগ্রামমাশ্রিতান্। গান্ধার গ্রামকে অবলম্বন করে বা আশ্রয় করে
রচিত তানগুলি।
ভাবার্থ। মধ্যম গ্রামে ২০টি,
ষড়্জ গ্রামে ১৪টি এবং গান্ধার গ্রামে
১৫টি তান হয়।
নন্দী বিশালা সুমুখী চিত্রা চিত্রবতী সুখা।
বলা যা চাথ বিজ্ঞেয়া দেবানাং সপ্ত মূর্চ্ছনাঃ॥৯॥
শব্দার্থ:
- নন্দী বিশালা সুমুখী চিত্রা চিত্রবতী সুখা বলা ।
মূর্ছনার নাম
- যা চ। এবং যা।
- অথ। এরপর, তারপর
- বিজ্ঞেয়া। জানা উচিত/জ্ঞাতব্য।
- দেবানাং। দেবতাদের। এখানে "দেবতাদের" মানে স্বর্গের বা স্বর্গীয় সঙ্গীত)।
- সপ্ত। সাত (৭) টি।
- মূর্চ্ছনাঃ মূর্ছনা (স্বর-বিন্যাস বা স্বরের আরোহণ-অবরোহণ)।
ভাবার্থ: নন্দী, বিশালা, সুমুখী, চিত্রা, চিত্রবতী, সুখা এবং বলা — এই সাতটি মূর্ছনা-কে দেবতাদের (বা স্বর্গীয়) বলে জানা উচিত।
আপ্যায়িনী বিশ্বভূতা চন্দ্রা হেমা কপর্দিনী।
মৈত্রী বার্হতী চৈব পিতৃণাং সপ্ত মূর্চ্ছনাঃ॥১০॥
ভাবার্থ। আপ্যায়িনী, বিশ্বভূতা, চন্দ্রা, হেমা, কপর্দিনী, মৈত্রী এবং বার্হতী — এই সাতটি মূর্ছনা হলো পিতৃপুরুষদের (বা প্রেতাত্মাদের)।
ষড়্জে তূত্তর মন্দ্রা স্যাদৃষভে চাভিরুদ্গতা।
অশ্বক্রান্তা তু গান্ধারে তৃতীয়া মূর্চ্ছনা স্মৃতা ॥১১॥
শব্দার্থ:
- ষড়্জে। ষড়্জ (সা) স্বরের ক্ষেত্রে বা ষড়্জ গ্রাম-এ।
- তু । কিন্তু/এবং।
- উত্তর মন্দ্রা। উত্তর মন্দ্রা (একটি মূর্ছনার নাম)।
- স্যাৎ। হয়/থাকে।
- ঋষভে। ঋষভ (রে) স্বরের ক্ষেত্রে।
- চ । এবং।
- অভিকদ্গতা । অভিরুদ্গতা।
একটি মূর্ছনার নাম)।
- অশ্বক্রান্তা। অশ্বক্রান্তা। একটি মূর্ছনার নাম।
- গান্ধারে। গান্ধার (গা) স্বরের ক্ষেত্রে বা গান্ধার গ্রাম-এ।
- স্মৃতা। স্মরণ করা হয়/বিবেচনা করা হয়।
ভাবার্থ: ষড়্জ (স্বর বা গ্রাম)-এ উত্তর মন্দ্রা মূর্ছনা থাকে, এবং ঋষভ (স্বর)-এ অভিরুদ্গতা (মূর্ছনা থাকে)।
আর গান্ধার (স্বর বা গ্রাম)-এ অশ্বক্রান্তা-কে তৃতীয় মূর্ছনা বলে বিবেচনা করা হয়।
মধ্যমে খলু সৌবীরা হৃষ্যকা পঞ্চমে স্বরে।
ধৈবতে চাপি বিজ্ঞেয়া মূর্চ্ছনা তূত্তরায়তা ॥১২॥
শব্দার্থ:
- মধ্যমে। মধ্যম (মা) স্বরের ক্ষেত্রে।
- খলু। নিশ্চয়ই/বস্তুত।
- সৌবীরা। একটি মূর্ছনার নাম)।
- হৃষ্যকা। একটি মূর্ছনার নাম)।
- পঞ্চমে। পঞ্চম (পা) স্বরের ক্ষেত্রে।
- স্বরে। স্বরের মধ্যে।
- ধৈবতে। ধৈবত (ধা) স্বরের ক্ষেত্রে।
- চ। এবং।
- অপি। ও, আরও।
- বিজ্ঞেয়া। জানা উচিত/জ্ঞাতব্য।
- তু। কিন্তু/এবং।
- উত্তরায়তা। একটি মূর্ছনার নাম
ভাবার্থ: মধ্যম (মা) স্বরের ক্ষেত্রে সৌবীরা (মূর্ছনা) নিশ্চয়ই (থাকে), এবং পঞ্চম (পা) স্বরের ক্ষেত্রে হৃষ্যকা (মূর্ছনা থাকে)।
এবং ধৈবত (ধা) স্বরের ক্ষেত্রে উত্তর আয়তা মূর্ছনাকেও জানা উচিত।
নিষাদাদর্জনো বিদ্যাদৃষিণাং সপ্ত মূর্চ্ছনাঃ।
উপজোহ্বান্ত গন্ধর্ব্বো দেবানাং সপ্ত মূর্চ্ছনা ॥১৩॥
শব্দার্থ:
- নিষাদাদর্জনো। নিষাদ (নি) স্বর থেকে উৎপন্ন. অর্জনী একটি মূর্ছনার নাম।
- বিদ্যাৎ। জানা উচিত।
- ঋষিণাং। ঋষিদের (মুনি-ঋষিদের)।
- সপ্ত মূর্চ্ছনাঃ সাতটি মূর্ছনা
- উপজোহ্বান্ত। একটি মূর্ছনার নাম)।
- গন্ধর্ব্বো। ন্ধর্ব।
- দেবানাং। দেবতাদের।
ভাবার্থ: নিষাদ (নি) স্বর থেকে উৎপন্ন অর্জনী (মূর্ছনা) পর্যন্ত ঋষিদের সাতটি মূর্ছনা জানা উচিত। (এবং) উপজোহ্বান্তী (মূর্ছনা) হলো গন্ধর্বদের বা দেবতাদের সাতটি মূর্ছনার মধ্যে (একটি)।
পিতৃণাং মূর্চ্ছনাঃ সপ্ত তথা যক্ষা ন সংশয়ঃ।
(মনুষ্যাণাং) ঋষীণাং মূর্চ্ছনাঃ সপ্ত যাস্ত্বাস্মা লৌকিকাঃ স্মৃতাঃ ॥১৪॥
শব্দার্থ:
- পিতৃণাং। পিতৃপুরুষদের
- মূর্চ্ছনাঃ সপ্ত। সাত (৭) টি মূর্ছনা।
- তথা। সেইরূপে/তেমনি।
- যক্ষা। যক্ষদের (স্বর্গীয় বা আধ্যাত্মিক সত্তা)।
- ন সংশয়ঃ। কোনো সন্দেহ নেই।
- ঋষীণাং মূর্চ্ছনাঃ সপ্ত। ঋষিদের সাত (৭) টি মূর্ছনা।
- যাঃ তু অস্মা। যা, কিন্তু/অবশ্যই, আমাদের।
- লৌকিকাঃ। লৌকিক বা জাগতিক/সাধারণ।
- স্মৃতাঃ। মনে করা হয়/বিবেচনা করা হয়।
ভাবার্থ: পিতৃপুরুষদের সাতটি মূর্ছনা, এবং যক্ষদেরও সাতটি মূর্ছনা, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ঋষিদের সাতটি মূর্ছনা, যা আমাদের দ্বারা লৌকিক বা জাগতিক বলে বিবেচিত হয়।
ষড়্জঃ প্রীণাতীহ দেবান্ ঋষীন্ প্রীণতি চর্ষভঃ।
পিতৄন্ প্রীণাতীহ গান্ধারো গন্ধর্বান্ মধ্যমঃ স্বরঃ ॥১৫॥
শব্দার্থ:
- ষড়্জঃ। ষড়্জ স্বর (সা)।
- প্রীণাতীহ। এখানে (ইহ) সন্তুষ্ট করেন
- দেবান্। দেবতাদের।
- ঋষীন্। ঋষিদের।
- প্রীণতি চ। এবং সন্তুষ্ট করেন।
- ঋষভঃ। ঋষভ স্বর (রে)।
- পিতৄন্। পিতৃপুরুষদের।
- গান্ধার। গান্ধার স্বর (গা)।
- গন্ধর্বান্ গন্ধর্বদের (স্বর্গীয় সঙ্গীতজ্ঞ)।
- মধ্যমঃ স্বরঃ মধ্যম স্বর (মা)।
ভাবার্থ: ষড়্জ স্বর এখানে দেবতাদের সন্তুষ্ট করে, এবং ঋষভ স্বর ঋষিদের সন্তুষ্ট করে।
গান্ধার স্বর পিতৃপুরুষদের সন্তুষ্ট করে, এবং মধ্যম স্বর গন্ধর্বদের সন্তুষ্ট করে।
দেবান্ পিতৄনৃষীংশ্চৈব স্বরঃ প্রীণতি পঞ্চমঃ।
যক্ষান্ নিষাদঃ প্রীণাতি ভূতগ্রামং চ ধৈবতঃ ॥১৬
শব্দার্থ:
- দেবান্ পিতৄনৃষীংশ্চৈব। দেবতা, পিতৃপুরুষ ও ঋষিদেরকে এবং।
- স্বরঃ প্রীণতি পঞ্চমঃ। পঞ্চম স্বর (পা) সন্তুষ্ট করে।
- যক্ষান্। যক্ষদেরকে (ঐশ্বরিক ধন-সম্পদের রক্ষক)।
- নিষাদঃ। নিষাদ স্বর (নি)।
- পৃণাতি। সন্তুষ্ট করে।
- ভূতগ্রামং চ। এবং ভূতগ্রাম-কে (ভূতপ্রেত বা সমস্ত প্রাণীকুলকে)।
- ধৈবতঃ। ধৈবত স্বর (ধা)।
ভাবার্থ: পঞ্চম স্বর দেবতা, পিতৃপুরুষ এবং ঋষি — এই তিন জনকেই সন্তুষ্ট করে।
নিষাদ স্বর যক্ষদেরকে সন্তুষ্ট করে, এবং ধৈবত স্বর ভূতগ্রামকে (সমস্ত প্রাণীকুলকে) সন্তুষ্ট করে।
সূত্র:
- শ্রী নারদ মুনি কর্তৃক রচিত সামবেদের জন্য নারদীয় শিক্ষা (শিক্ষাশাস্ত্র)।
মঙ্গোশাকর কর্তৃক রচিত 'শিক্ষাবিবরণোপেতা' নামক টীকা (ব্যাখ্যা) সহ।
প্রকাশক: শ্রী পীতাম্বরাপীঠ সংস্কৃত পরিষদ, দতিয়া (মধ্যপ্রদেশ)।
প্রথম—২০২৯ (প্রথম সংস্করণ—২০২৯ বিক্রমাব্দ। ১৯৭২ বা ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ)।
দ্বারিকেশ মিশ্র, শ্রীরাম প্রেস, ঝাঁসি