অগ্রন্থিত কবিতা


আজান
অকাজের সে-কাজের মাঝে ডুবে যখন থাকি,
ভাবি নাকো কি যে ছিলুম, আবার হবোই বা কি।
শুধু মোহ চোখের কালো মায়ারই জাল বুনে,
কাচা বুকের 'খুন' পিয়ে নেয় বিষাক্ত কাম-ঘুণে।
বুঝেও বুঝি নাকো এ যে এক এক পা করে
পলে পলে গোরের দিকেই যাচ্ছি ক্রমে সরে।
শুনি তখন আজানের কি বজ্র-গভীর স্বর-
আল্লাহু আকবর- আল্লাহু আকবর!'

বুঝি আর সে নাই-বা বুঝি, তবু প্রাণের মাঝে
চঞ্চল সে গুম্‌রে মরে কী আকুলতা যে!
অবুঝ হিয়ায় উদাস-করা কি জানে এ ডাক,
প্রাণের মাঝে ফাকা বেদন খায় শুধু ঘুরপাক।
কি সে বেদন প্রাণই জানে, কইতে কিছু নারি,-
তবু বিয়োগ-ব্যথায় কিসের মন হয় হায় ভারি!
ছেড়ে যেতে হবে রে হায় এ-বিশ্ব সুন্দর,
আল্লাহু আকবর' শোনো- 'আল্লাহু আকবর!'
ওগো পাগল-উদাস-করা পবিত্র আহ্বান,
কেমন করে ভক্তি-ক্ষীরে ডুবিয়ে দাও জান্‌!
বক্ষে কিসে পাগল-ঝোরার উজান বয়ে যায়,
ভোরবেলাকার আবছায়া আর সাঁঝের ম্লানিমায়
দুপুরবেলার রোদ আর বৈকালের পূরবীয়
রাতের ডাকে ছড়াও বিশ্ব কতই সুরভিই!
মাটির মানুষ প্রভুর কাজে পাছে করি হেলা,
তাইতো তুমি ডেকে ডেকে জাগাও পাচই বেলা।

তোমার ডাকে একটি বেলা না দিলে যে সায়,
বক্ষ বিধে অনুতাপের তীক্ষ্ণ ছুরিকায় !
তুমি আছ 'ইসলাম' তাই তেমনি আজো জেগে,
ডুবেনিকো অবহেলার ঘোর ঝাপ্টা লেগে।
ওগো পত ! ওগো গভীর ! ওগো উদাস ডাক!
ওগো আজান ! তোমার বিষাণ বিশ্বে বেজে যাক-
যতদিন না ইসরাফিলের প্রলয়-বিষাণ বাজে,
এম্‌নি করে ব্যাকুল-স্বরে দিন-দুনিয়ার মাঝে।

সাধনা।  [বৈশাখ ১৩২৮ (এপ্রিল-মে ১৯২১)] সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই কবিতাটি কবির জীবদ্দশায় কোনো গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয় নি।