লক্ষ্মী ছেলে তাই তোলে

ঘরের আড়াল ভেঙে এবার বাহির ভুবন লুটতে চাই,
জীবন হলো জেল-কয়েদি আড়াল টেনে সর্বদাই।
নিষেধ বাধা মেনে মেনে বুকের ভিতর ধরল ক্ষয়,
প্যাঁচার চেয়েও হলাম অধম, সন্ধেরাতে চলতে ভয়।

তেঁতুল গাছে জোনাক জ্বলে, মা বলে, “দেখ্‌ দেখ্‌ খোকন,
“সত্‌র-চোখির মা” তাকায় ঐ, হালুম করে ধরবেখন।
তাল-তলাতে যাসনে বাবা, 'একানোড়ে ভূত থাকে,
বেল গাছে রয় বেন্ধদোত্যি- ঘাড় ভেঙে খায় পায় যাকে!'

মা বলে, ঐ বাচ্চা ভূতের, শুনেই বাছার কাবার ঘুম!
দুপুরবেলা ঝুলি-কাঁধে ছেলে-ধরার দল বেড়ায়,
জুজুতে সে যেখান-সেখান, একলা পেলেই গিলতে চায়।
জলের ভিতর? বলিসনে আর ! মালসা-মাথা জল-দানো,
নামলে জলে অমনি গপাস্‌ ! তারপরে ঘাড় মটকানো।
গোরস্থানের পাশ দিয়ে যাস- মামদো-ভূতের আড্ডা যে!
শ্মশান-ঘাটার প্রেত পেত্মি মানুষ ধরে মাছ ভাজে !

মাঠের পথে যাসনে বাবা, একটু একা দেখবে যেই
শ্যাওড়াগাছের শাঁক-চুন্নি ধরবে ঠেসে, রক্ষে নেই!
উপর পানে তাকাসনে বাপ, উড়ছে সদাই জিন-পরী,
খাটিয়া-সমেত উড়িয়ে নেবে কন্ধ-কাটা কিন্নরী!
ভূত-পেরেত আর পিশাচ খবিস ষক্ষি দানব দশটা দিক
অলক্ষ্যে সব আগলে আছে, ভাগলে বাঁচাও নেই মানিক !

এমনি করে মোদের মহৎ জীবন শুরু ; চলতে তাই-
এক পা যেতেই দু'পা পিছোই, তিনবার তায় হোচট খাই।
সিজার খালেদ প্রতাপ কামাল নেপোলিয়াঁ ওয়াশিংটন
এই করে কি জন্ম নেবে? করবে দেশে বীর সৃজন?
খোকার বুকে বাসা বাঁধে যে ভূত, তাহার সিংহাসন
অক্ষয় হয়, রাজ্য চালায় খো্শ্‌হালে সে ভর-জীবন !

খোকার গণ্ডি পেরিয়ে যখন হলাম বালক, আরেক ভূত
পণ্ডিত মশাই রক্তনেত্র ধরেন বেত্র-যমের দূত।
মারের চোটে জ্ঞান যা হলো তার চাপে হায় সব সাহস
শরীর ছেড়ে বিদায় নিল, শুষ্ক হলো প্রাণের রস।
যেমনি হলো কিশোর বয়েস, অমনি অভিভাবক দল
বকেন যত বাধেন তত নানান ছাঁদে দেন আগল।

ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে নয়ন তাদের নিদ্রাহীন,
ছেলের শরীর চুপসে গেল ! দেখোই বাপু, রও দু'দিন;
দেখবে ছেলে লক্ষ্মী কেমন, হোক না এখন হাড্ডি সার,
আস্তে কথা, নেইকো হাসি, বধূর মতো লজ্জা তার!
যেই দেখে সে গুরুজনে, অমনি মাথা হয় নিচু,
মারামারির ধার ধারে না--গোলমালে রয় সব পিছু।
পুরুষই হায় পায় না দেখা, এমন ছেলে কজন পায়।

যৌবনে সে বীর হলো না দেশের গরব? মার কোলে
বিশ বছরে তৃলছে পটল? লক্ষ্মী ছেলে তাই তোলে।

'শিশুমহল
প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, ১৩৩৪