প্রলয়-শিখা
কাজী নজরুল ইসলাম


    প্রথম অশ্রু

এরি লাগি তুই পথ চেয়ে কি রে বসেছিলি মুসাফের
প্রথম অশ্রু দেখে যাবি চোখে নিরশ্রু আকাশের?
            রৌদ্র ধূসর ঊসর গগন
            হেরিল কখন মেঘের স্বপন,
দুলিয়া উঠিল অসীম রোদন কূলে নয়নের,
তত ঝরে জল-  চোখে অঞ্চল যত চাপে জলদের !

ডাকিয়াছে কুহু মুহুমূহু গো দিবসে যাহার বনে,
ফাগুন দিতেছে ফুল-ফরমাশ যার রাঙা অঙ্গনে,
            যাহার হাসির রোদ্দুর-তাতে
            শিশির শুকায়ে গিয়াছে প্রভাতে,
সে কেন আজিকে নিশুতি নিশীথে জাগিয়া সঙ্গোপনে-
চিকুর এলায়ে কাঁদিছে লুটায়ে, কি কথা করিয়া মনে?

তৃষিত চাতক ! এরি লাগি কি রে এতদিন বসেছিলি
চাহিয়া শুষ্ক গগনে- খুলিয়া নয়নের ঝিলিমিলি?
            এরি লাগি জাগি কাটালি অধীর!
            মধু-মাসে চাস বরষার নীর?
এই জল চাহি এতদিন ধরি এত আখি-জল দিলি?
কে জানে কাহার দুঃখে আকাশ কাঁদিতেছে নিরিবিলি !

কাদিছে আকাশ- সে যে তোরি তরে, কে বলিল তোরে বল!
এ জল চাহি কাদিছে কানন, মরা নদী, ধরাতল।
             শাখে শাখে কাদে কলিকা কৃসুম,
            ফটিক-জলের চোখে নাই ঘুম,
জাগে প্রান্তর তৃষায়-কাতর দগ্-তৃণাঞ্চলে,-
কে জানে কাহারে স্মরিয়া উহার নয়নে নেমেছে ঢল?

কাহার উপরে অভিমানে কার প্রণয়-অনাদৃতা
মেঘ-বেণী হতে ছিড়ে ছিঁড়ে ফেলে বিজলি-জরিন্‌ ফিতা!
            ঘন ঘন বহে পুবান বাতাস
            অভিমানিনীর দীরঘশ্বাস,-
নিভাইয়া সব তারা-দীপ, কাদে ধুলি-অবলুণ্ঠিতা !
হতাশ পথিক! তই কেন সেথা চাহিয়া আছিস বৃথা?

বন্ধ করে দে বাতায়ন তোর, ভেসে চল্‌ পথ টানে!
মিটা বক্ষের নিদারুণ তৃষ্ণা কণ্ঠের বিষপানে !
            তোর তরে নয় যে অশ্রুজল,
            তারে চেয়ে তোর কি হবে পাগল!
তোর বনে ফল মুঞ্জরিবে না * * *

            *   *  *
(অসমাপ্ত)

পাণ্ডুলিপিতে দেখা যাচ্ছে কৰি প্রথমে কবিতাটি রচনা শুরু করেছিলেন এভাবে_
এরি লাগি তুই পথ চেয়ে কিরে বসেছিলি মুসাফির,
নিরশ্রু তার চোখে দেখে যাবি প্রথম অশ্রু-নীর?
            রৌদ্র-ধূসর ঊষর গগন
            কুলে কূলে জলে হল নিমগন,
যত চাপে চোখে মেগের আঁচল, ...