বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম

        পাগল পথিক
            [গান]

এ কোন্‌     পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মা'র আঙ্গিনায়।
                ত্রিশ কোটি ভাই মরণ-হরণ গান গেয়ে তাঁর সঙ্গে যায়॥
           
                        অধীন দেশের বাঁধন-বেদন
                        কে এলো রে করতে ছেদন?
                শিকল-দেবীর বেদীর বুকে মুক্তি-শঙ্খ কে বাজায়॥

                মরা মায়ের লাশ কাঁদে ঐ অভিমানী ভা'য়ে ভা'য়ে
                বুক-ভরা আজ কাঁদন কেঁদে আনল মরণ-পারের মায়ে।
           
            পণ করেছে এবার সবাই
                        পর-দ্বারে আর যাব না ভাই!
                মুক্তি সে তো নিজের প্রাণে, নাই ভিখারির প্রার্থনায়॥

            শাশ্বত যে সত্য তাঁরি ভুবন ভ’রে বাজলো ভেরী,
            অসহ্য আজ নিজের বিষেই মরলো ও-তার নাইকো দেরী।
           
                        হিংসুকে নয়, মানুষ হ'য়ে
                        আয় রে, সময় যায় যে ব'য়ে!
             মরার মতন মরতে, ওরে মরণ ভীতু! ক’জন পায়॥

             ইস্‌রাফিলের শিঙ্গা বাজে আজকে ঈশান-বিষাণ সাথে,
             প্রলয় রাগে নয় রে এবার ভৈরবীতে দেশ জাগাতে।
                    পথের বাধা স্নেহের মাথায়
        
            পায় দ'লে আয় পায় দ'লে আয়!
রোদন কিসের? আজ যে বোধন-
                    বাজিয়ে বিষাণ উড়িয়ে নিশান আয় রে আয়॥
রচনাকাল: গানটি 'মোসলেম ভারত' পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩২৮' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৬ই শ্রাবণ প্রকাশিত 'বিষের বাঁশী' গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গানটির শিরোনাম 'পাগল পথিক'।  এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২২ বৎসর মাস।