ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      আলতা-স্মৃতি

ঐ     রাঙা পায়ে রাঙা আলতা প্রথম যেদিন পরেছিলে,
        সেদিন তুমি আমায় কি গো ভুলেও মনে করেছিলে –
                                    আলতা যেদিন পরেছিলে?

        জানি, তোমার নারীর মনে নিত্য-নূতন পাওয়ার পিয়াস
        হঠাৎ কেন জাগল সেদিন, কণ্ঠ ফেটে কাঁদল তিয়াস!
                    মোর আসনে সেদিন রানি
                    নূতন রাজায় বরলে আনি,
আমার রক্তে চরণ রেখে তাহার বুকে মরেছিলে –
                        আলতা যেদিন পরেছিলে॥

মর্মমূলে হানলে আমার অবিশ্বাসের তীক্ষ্ম ছুরি,
সে-খুন সখায় অর্ঘ্য দিলে যুগল চরণ-পদ্মে পুরি।
                    আমার প্রাণের রক্তকমল
                    নিঙড়ে হল লাল পদতল,
সেই শতদল দিয়ে তোমার নতুন রাজায় বরেছিলে –
                            আলতা যেদিন পরেছিলে॥
আমায় হেলায় হত্যা করে দাঁড়িয়ে আমার রক্ত-বুকে
অধর-আঙুর নিঙড়েছিলে সখার তৃষা-শুষ্ক মুখে।
                আলতা সে নয়, সে যে খালি
                আমার যত চুমোর লালি!
খেলতে হোরি তাইতে, গোরি, চরণ-তরী ভরেছিলে –
                            আলতা যেদিন পরেছিলে॥

জানি রানি, এমনি করে আমার বুকের রক্তধারায়
আমারই প্রেম জন্মে জন্মে তোমার পায়ে আলতা পরায়!
                এবারও সেই আলতা-চরণ
                দেখতে প্রথম পায়নি নয়ন!
মরণ-শোষা রক্ত আমার চরণ-ধারে ধরেছিলে –
                            আলতা যেদিন পরেছিলে॥

কাহার পুলক-অলক্তকের রক্তধারায় ডুবিয়ে চরণ
উদাসিনী! যেচেছিলে মনের মনে আমার মরণ?
                আমার সকল দাবি দলে
                লিখলে ‘বিদায়’ চরণতলে!
আমার মরণ দিয়ে তোমার সখার হৃদয় হরেছিলে –
                            আলতা যেদিন পরেছিলে।

বহরমপুর জেল
অগ্রহায়ণ ১৩৩১

ছায়ানট কাব্যে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে 'বহরমপুর জেল/অগ্রহায়ণ ১৩৩১'। সম্ভবত তারিখটি হবে অগ্রহায়ণ/১৩৩০। কারণ 'অগ্রহায়ণ/১৩৩০'-এ নজরুল বহরমপুর জেল-এ ছিলেন।