ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      বিধুরা পথিক-প্রিয়া

আজ     নলিন-নয়ান মলিন কেন বলো সখী বলো বলো।
           পড়ল মনে কোন্ পথিকের বিদায় চাওয়া ছলছল?
                                        বলো সখী বলো বলো

            মেঘের পানে চেয়ে চেয়ে বুক ভিজালে চোখের জলে,
            ঐ সুদূরের পথ বেয়ে কি দূরের পথিক গেছে চলে –
                                        আবার ফিরে আসবে বলে গো?
            স্বর শুনে কার চমকে ওঠ? আ-হা!
            ওলো ও যে বিহগ-বেহাগ নির্ঝরিণীর কল-কল।

            ও নয় লো তার পায়ের ভাষা, আ-হা,
            শীতের শেষের ঝরা-পাতার বিদায় ধ্বনি ও,
            কোন কালোরে কোন ভালোরে বাসলে ভালো, আ-হা!
            খুঁজছ মেঘে পরদেশি কোন পলাতকার নয়ন-অমিয়?
চুমছ কারে? ও নয় তোমার চির-চেনার চপল হাসির আলো-ছায়া,
ও যে গুবাক-তরুর চিকন পাতায় বাদল-চাঁদের মেঘলা মায়া।

                        ওঠো পথিক-পূজারিনি উদাসিনী বালা!
সে যে সবুজ-দেশের অবুঝ পাখি কখন এসে যাচবে বাঁধন,
                        কে জানে ভাই, ঘরকে চলো।
            ওকি? চোখে নামল আবার বাদল-ছায়া ঢলঢল?
                                চলো সখি ঘরকে চলো।

দৌলতপুর, কুমিল্লা
জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮