ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      রৌদ্র-দগ্ধের গান

                এবার আমার জ্যোতির্গেহে তিমির প্রদীপ জ্বালো।
আনো         অগ্নিবিহীন দীপ্তিশিখার তৃপ্তি অতল কালো।
                                            তিমির প্রদীপ জ্বালো॥

                        নয়ন আমার তামস-তন্দ্রালসে
                        ঢুলে পড়ুক ঘুমের সবুজ রসে,
                রৌদ্র-কুহুর দীপক-পাখা পড়ুক টুটুক খসে,
আমার       নিদাঘদাহে অমামেঘের নীল অমিয়া ঢালো।
                                              তিমির প্রদীপ জ্বালো॥ 

                মেঘে ডুবাও সহস্রদল রবি-কমল-দীপ,
ফুটাও        আঁধার-কদম-ঘুমশাখে মোর স্বপন মণি-নীপ।
                                নিখিলগহন-তিমির তমাল গাছে
                                কালো কালার উজল নয়ন নাচে,
                আলো-রাধা যে কালোতে নিত্য মরণ-যাচে –
ওগো         আনো আমার সেই যমুনার জলবিজুলির আলো
                                তিমির প্রদীপ জ্বালো॥ 

                দিনের আলো কাঁদে আমার রাতের তিমির লাগি
সেথায়       আঁধার-বাসরঘরে তোমার সোহাগ আছে জাগি।
                                ম্লান করে দেয় আলোর দহন-জ্বালা
                                তোমার হাতের চাঁদ-প্রদীপের থালা,
                শুকিয়ে ওঠে তোমার তারা-ফুলের গগন-ডালা।
ওগো         অসিত আমার নিশীথ-নিতল শীতল কালোই ভালো।
                                তিমির প্রদীপ জ্বালো॥ 

সমস্তিপুরের ট্রেন-পথে
ফাল্গুন ১৩৩০