ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      স্তব্ধ বাদল

ঐ         নীল-গগনের নয়ন-পাতায়
                    নামল কাজল-কালো মায়া।
            বনের ফাঁকে চমকে বেড়ায়
                    তারই সজল আলোছায়া॥

ঐ         তমাল তালের বুকের কাছে
            ব্যথিত কে দাঁড়িয়ে আছে
                            দাঁড়িয়ে আছে।
            ভেজা পাতায় ওই কাঁপে তার
                            আদুল ঢলঢল কায়া॥

যার       শীতল হাতের পুলক-ছোঁয়ায়
                            কদমকলি শিউরে ওঠে,
             জুইকুঁড়ি সব নেতিয়ে পড়ে
                            কেয়া-বধূর ঘোমটা টুটে।
আহা!     আজ কেন তার চোখের ভাষা
            বাদল-ছাওয়া ভাসা-ভাসা –
                            জলে-ভাসা?
            দিগন্তরে ছড়িয়েছে সেই
                    নিতল আঁখির নীল আবছায়া॥

ও কার     ছায়া দোলে অতল কালো
                        শালপিয়ালের শ্যামলিমায়?
              আমলকি-বন থামল ব্যথায়
                        থামল কাঁদন গগন-সীমায়।

আজ       তার বেদনাই ভরেছে দিক,
                        ঘরছাড়া হায় এ কোন পথিক,
                                এ কোন পথিক?
এ কি     স্তব্ধতারই আকাশ-জোড়া
                        অসীম রোদন-বেদন-ছায়া।

কুমিল্লা
আষাঢ় ১৩২৯