১০০১. রাগ: লঙ্কাদহন সারং, তাল: ত্রিতাল
অগ্নি-গিরি ঘুমন্ত উঠিল জাগিয়া।
বহ্নি-রাগে দিগন্ত গেল রে রাঙিয়া॥
রুদ্র রোষে কি শঙ্কর ঊর্ধ্বের পানে
লক্ষ-ফণা ভুজঙ্গ-বিদ্যুৎ হানে
দীপ্ত তেজে অনন্ত-নাগের ঘুম ভাঙিয়া॥
লঙ্কা-দাহন হোমাগ্নি সাগ্নিক মন্ত্র
যজ্ঞ-ধূম বেদ-ওঙ্কার ছাইল অনন্ত।
খড়গ-পাণি শ্রীচণ্ডী অরাজক মহীতে
দৈত্য নিশুম্ভ-শুম্ভে এলো বুঝি দহিতে,
বিশ্ব কাঁদে প্রেম-ভিক্ষু আনন্দ মাগিয়া॥
*১০০২. রাগ: পিলু, তাল: কাহার্‌বা
অচেনা সুরে অজানা পথিক
নিতি গেয়ে যায় করুণ গীতি।
শুনিয়া সে গান দু’লে ওঠে প্রাণ
জেগে ওঠে কোন্ হারানো স্মৃতি॥
ঘুরিয়া মরে উদাসী সে সুর
সাঁঝের কূলে বিষাদ-বিধুর,
নীড়ে যেতে হায় পাখি ফিরে চায়,
আবেশে ঝিমায় কুসুম-বীথি॥
*১০০৩. রাগ: মূলতান-কানাড়া মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
অঝোর ধারায় বর্ষা ঝরে সঘন তিমির রাতে।
নিদ্রা নাহি তোমায় চাহি’ আমার নয়ন-পাতে॥
ভেজা মাটির গন্ধ সনে
তোমার স্মৃতি আনে মনে,
বাদ্‌লী হাওয়া লুটিয়ে কাঁদে আঁধার আঙিনাতে॥
হঠাৎ বনে আস্‌ল ফুলের বন্যা পল্লবেরই কূলে,
নাগকেশরের সাথে কদম কেয়া ফুট্‌ল দুলে দুলে।
নবীন আমন ধানের ক্ষেতে হতাশ বায়ু ওঠে মেতে,
মন উড়ে যায় তোমার দেশে ॥ পূব-হাওয়ারই সাথে॥
*১০০৪. নাটক: ‘সেতুবন্ধ’, রাগ: হাম্বীর, তাল: কাওয়ালি
অধীর অম্বরে গুরু গরজন মৃদঙ বাজে।
রুমু রুমু ঝুম্ মঞ্জীর-মালা চরণে আজ উতলা যে॥
এলোচুলে দু’লে দু’লে বন-পথে চল আলি,
মরা গাঙে বালুচরে কাঁদে যথা বন্-মরালী।
উগারি’ পাগরি ঝারি
দে লো দে করুণা ডারি
ঘুঙট উতারি’ বারি ছিটা লো গুমোট সাঁঝে॥
তালীবন হানে তালি, ময়ূরী ইশারা হানে,
আসন পেতেছে ধরা মাঠে মাঠে চারা-ধানে।
মুকুলে ঝরিয়া পড়ি’ আকুতি জানায় যূথী
ডাকিছে বিরস শাখে তাপিতা চন্দনা-তুলি।
কাজল-আঁখি রসিলি
চাহে খুলি ঝিলিমিলি,
চল, লো চল সেহেলি, নিয়ে মেঘ-নটরাজে॥
*১০০৫. নাটক: ‘মধুমালা’
অনেক জ্বালা দিয়েছ তার শাস্তি পাবে কালা।
বেঁধেছি তাই গলায় তোমার জড়িয়ে মধুমালা॥
আজ গায়ে পড়ে সাধতে হবে
পায়ে ধরে কাঁদতে হবে
শাপ্‌লা মধু পানের আগে
দেখব বঁধু কেমন লাগে বাব্‌লা কাঁটার জ্বালা॥
*১০০৬.
অনেক মানিক আছে শ্যামা তোর কালোরূপ-সাগরজলে
আমার বুকের মানিক কেড়ে রাখ্‌লি কোথায় দে মা ব’লে॥
কত লতার কোল ক’রে খালি, ফুলের অর্ঘ্য১ নিস্ মা কালি
(মোর) সারা বনের একটী কুসুম আছে কি ঐ চরণ-তলে॥
একখানি মুখ খুঁজি মাগো তোর কণ্ঠের মুণ্ডমালায়
একটিবার মা সে মুখ দেখা, আবার কেড়ে পরিস্ গলায়।
(না হয়) রাখি্‌স পূজার থালায়।
অনন্ত তোর রূপের মাঝে, সে কোন্ রূপে মা কোথায় রাজে?
মোর নয়ন-তারা তারা হয়ে দোলে কি তোর বুকের কোলে॥
*১০০৭.
অন্তরে প্রেমের দীপ জ্বলে যার,
ত্রিভুবন নাই তার কোথাও আঁধার॥
পথের ধূলি তারই চরণ যাচে
আকাশ কথা কয় তাহারি কাছে,
তা’রি তরে খোলা থাকে সকলের ঘর
সকলের হৃদয়-দুয়ার॥
কে বলে ভিখারিনী সে-কে বলে সে ভিখারি।
ভিক্ষা-ঝুলিতে তার বিশ্ব থাকে-ভগবান তাহার দ্বারী।
তার রীতি বোঝা যায় না
বুকে যার বহে নিতি পিরিতি-জোয়ার॥
*১০০৮.
অন্ধকারে এসে তুমি অন্ধকারে গেছ চ’লে।
তোমার পায়ের রেখা জাগে শূন্য গৃহের অঙ্গন-তলে॥
কেন আমায় জাগালে না
আঘাতে ঘুম ভাঙালে না,
দ’লে কেন গেলে না গো যাবার বেলা চরণ-তলে॥
কৃষ্ণা তিথির চাঁদের মত এসেছিলে গভীর রাতে,
আলোর পরশ বুলিয়ে দিলে ঘুমন্ত মোর নয়ন-পাতে;
তাই রজনীগন্ধা সুখে
চেয়ে আছে ঊর্ধ্ব মুখে,
ফুলগুলিরে জাগিয়ে গেলে নিঠুর আমায় গেলে ছ’লে॥
*১০০৯.
অন্ধকারে দেখাও আলো কৃষ্ণ নয়ন-তারা।
কালো মেঘে অন্ধ-আকাশ পথিক পথ-হারা॥
ভক্ত কাঁদে অকূল ভবে,
গোকুলে তায় ডাকবে কবে।
অশান্ত এ চিত্তে হরি বহাও শান্তি-ধারা॥
*১০১০.
অন্ধকারের তীর্থপথে ভাসিয়ে দিলাম নামের তরী
মায়া মোহের ঝড় বাদলে এবার আমি ভয় না করি।
যে নাম লেখা তারায় তারায়
যে নাম ঝরে অশ্রুধারায়
যাত্রা শুরু সেই নামেরি জপমালা বক্ষে ধরি॥
এই আঁধারের অন্তরালে লক্ষ রবি চন্দ্র জ্বলে
নিত্য ফোটে আলোর কমল জানি তোমার চরণ তলে।
এবার ওগো অশিব নাশন
থামাও তোমার ঢেউর নাচন
সেই ত অমর মরণ যদি ধ্যান সাগরে ডুবে মরি॥
*১০১১. নাটিকা: ‘সুরথ-উদ্ধার’
অন্নপূর্ণা মা এসেছে অন্নহীনের ঘর
উলু দে রে শঙ্খ বাজা প্রদীপ তুলে ধর॥
তপস্যাহীন পাপীর দেশে
মা এসেছে ভালোবেসে,
বিনা পূজায় মায়ের রূপে এলো বিধির বর॥
*১০১২. রাগ: মিঞাকি মল্লার, তাল: ত্রিতাল
অবিরত বাদর বরষিছে ঝরঝর
বহিছে তরলতর পূবালি পবন।
বিজুরী-জ্বালার মালা
পরিয়া কে মেঘবালা
কাঁদিছে আমারি মত বিষাদ-মগন॥
ভীরু এ মন-মৃগ আলয় খুঁজিয়া ফিরে,
জড়ায়ে ধরিছে লতা সভয়ে বনস্পতিরে,
গগনে মেলিয়া শাখা কাঁদে বন-উপবন॥
*১০১৩. রাগ: তিলক কামোদ
অবুঝ মোর আঁখি বারি, আমি রোধিতে নারি॥
গ’লেছে যে-নদী জল, কে তারে রোধিবে বল,
পাষাণের সে নারায়ণ তবু সে আমারি॥
*১০১৪. রাগ: কুকুভ বিলাবল, তাল: একতাল
অরুণ কিরণ সুধা-স্রোতে, ভাসাও প্রভু মোরে।
গ্লানি পাপ তাপ মলিনতা, যাক ধুয়ে চিরতরে॥
প্রশান্ত স্নিগ্ধ তব হাসি, ঝরুক অশান্তি প্রাণে বুকে১
প্রভাত আলোর ধারা, যেমন ঝরে সব ঘরে॥
যেমন বিহগেরা জাগি ভোরে, আলোর নেশার ঘোরে
আকাশ পানে..., বন্দে প্রেম-মনোহরে॥২
*১০১৫. রাগ: আহীর ভৈরব, তাল: ত্রিতাল
অরুণ-কান্তি কে গো যোগী ভিখারি।
নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে
প্রখর তেজ তব নেহারিতে নারি॥
রাস-বিলাসিনী আমি আহিরিণী
শ্যামল কিশোর রূপ শুধু চিনি,
অম্বরে হেরি আজ একি জ্যোতিঃপুঞ্জ
হে গিরিজাপ তি! কোথা গিরিধারী॥
সম্বর সম্বর মহিমা তব, হে ব্রজেশ ভৈরব,
আমি ব্রজবালা।
হে শিব সুন্দর, বাঘছাল পরিহর, ধর নটবর-বেশ
পর নীপ-মালা।
নব মেঘ-চন্দনে ঢাকি’ অঙ্গজ্যোতি
প্রিয় হয়ে দেখা দাও ত্রিভুবন-পতি
পার্বতী নহি আমি, আমি শ্রীমতী
বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরি-ধারী॥
*১০১৬. তাল: দাদ্‌রা
অরুণ-রাঙা গোলাপ-কলি
কে নিবি সহেলি আয়।
গালে যার গোলাপী আভা
এ ফুল-কলি তারে চায়॥
ডালিয়া ফুল যে শুকায়ে যায়
কোথায় লায়লী, শিরী কোথায়
কোথায় প্রেমিক বিরহী মজনু
এ ফুল দেব কাহার পায়॥
পূর্ণ চাঁদের এমন তিথি
ফুল-বিলাসী কই অতিথি
বুলবুলি বিনে এ গুল্ যে
অভিমানে মুরছায়॥
*১০১৭. নাটক: ‘অন্নপূর্ণা’
অশিব শক্তি হতে হে শঙ্কর
অষ্টসিদ্ধিরে কর ত্রাণ, ত্রাণ কর শঙ্কর॥
*১০১৮.
অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী।
নিভিয়া গেল চাঁদের মুখের হাসি॥
শোকের বাদল আছড়ে প’ড়ে
কাঁদছে মরুর বুকের পরে,
ব্যথার তুফানে আরব গেল ভাসি’ ॥
গোলাব-বাগে গুল্ নাহি আজ
কাঁদিছে বুল্‌বুলি,
ছাইল আকাশ অন্ধকারে
মরু সাহারার ধূলি।
তরুলতা বনের পাখি,
‘কোথায় হোসেন?’ কইছে ডাকি’,
পড়ছে ঝরে তারার রাশি॥
*১০১৯. রাগ: ভৈরবী, তাল: একতাল
অসুর-বাড়ির ফেরত এ মা
শ্বশুর-বাড়ির ফেরত নয়।
দশভুজার করিস পূজা
ভুলরূপে সব জগতময়॥
নয় গোরী নয় উমা
মেনকা যার খেতো চুমা
রুদ্রাণী এ, এযে ভূমা
এক সাথে এ ভয়-অভয়॥
অসুর দানব করল শাসন এইরূপে মা বারে বারে,
রাবণ-বধের বর দিল মা এইরূপে রাম-অবতারে।
দেব-সেনানী পুত্রে লয়ে মা
এই বেশে যান দিগ্বিজয়ে
সেই রূপে মা’র কর্‌রে পূজা
ভারতে ফের আসবে জয়॥
*১০২০.রাগ: ভৈরবী মিশ্র. তাল: কাহার্‌বা
আঁখি-বারি আঁখিতে থাক, থাক ব্যথা হৃদয়ে।
হারানো মোর বুকের প্রিয়া রইবে চোখে জল হয়ে॥
নিশি-শেষে স্বপন-প্রায়
নিলে তুমি চির-বিদায়,
ব্যথাও যদি না থাকে হায়, বাঁচিব গো কি ল’য়ে॥
ভালোবাসার অপরাধে
প্রেমিক জনম জনম কাঁদে,
কুসুমে কীট বাসা বাঁধে শত বাধা প্রণয়ে॥
আজকে শুধু করুণ গীতে
কাঁদিতে দাও দাও কাঁদিতে,
আমার কাঁদন-নদীর স্রোতে বিরহের বাঁধ যাক ক্ষয়ে॥
*১০২১. রাগ: ভৈরবী, তাল: কাহার্‌বা
আঁচলে হংস-মিথুন আঁকা
বলাকা-পে’ড়ে শাড়ি দুলায়ে।
চলিছে কিশোরী শ্যামা একা
রুমুঝুমু বাজে নূপুর মৃদু পায়ে॥
ভয়ে ভয়ে চলে আধো-আঁধারে
বিরহী বন্ধুর দূর অভিসারে,
পথ কাঁদে যেয়ো না যেয়ো না যেয়ো না ওগো
থামো ক্ষণেক এ ঠাঁয়ে॥
*১০২২.
আঁধার রাতে দেবতা মোর এসে গেছে চ’লে
রেখে গেছে চরণ-চিহ্ন শূন্য গৃহ-তলে॥
জেগে দেখি বুকের কাছে
পূজার মালা প’ড়ে আছে
ফেলে গেছে মালাখানি বুঝি খানিক প’রে গলে॥
তার অঙ্গের সুবাস ভাসে মন্দির-অঙ্গনে,
তাহার ছোঁওয়া লেগে আছে কুমকুম-চন্দনে।
অপূর্ণ মোর প্রণামখানি
দেবো কবে নাহি জানি,
সে আস্‌বে বুঝি বাসনা-ধূপ পুড়িয়া শেষ হলে’॥
*১০২৩.
আঁধারের এলোকেশ ছড়িয়ে এলে
তুমি ধূসর সন্ধ্যা।
তোমারে অর্ঘ্য দিতে বনে ফুটিল কি তাই
রজনীগন্ধা?
গোধূলির রং সম তব মুখ, হায়!
তরুণ হাসি কেন চকিতে মিলায়?
সহসা মহুয়া বনে চঞ্চল বায়
হ’ল নিথর সুমন্দা॥
বিষাদ-গভীর তব নয়ন যেন নিশীথের সিন্ধু;
মুদিত কমলের দলিত দলে তুমি শিশিরের বিন্দু।
তুমি সকরুণ প্রার্থনা বেলাশেষের,
পথ-হারা পাখি তুমি দূর বিদেশের,
স্নিগ্ধ-স্রোত তুমি দূর অমরার অলকানন্দা॥
*১০২৪. রাগ: শিবমত-ভৈরব, তাল: ত্রিতাল (ঢিমা)
আঁধার ভীত এ চিত যাচে মা গো১ আলো আলো।
বিশ্ববিধাত্রী আলোকদাত্রী নিরাশ পরানে আশার সবিতা জ্বালো
জ্বালো, আলো, আলো॥
হারায়েছি পথ গভীর তিমিরে
লহ হাতে ধ’রে প্রভাতের তীরে
পাপ তাপ মুছি’ কর মা গো২ শুচি, আশিস-অমৃত ঢালো॥
দশ৩ প্রহরণধারিণী দুর্গতিহারিণী দুর্গে মা অগতির গতি
সিদ্ধি-বিধায়িনী দনুজ-দলনী বাহুতে দাও মা শকতি।
তন্দ্রা ভুলিয়া যেন মোরা জাগি-
এবার প্রবল মৃত্যুর লাগি’,
রুদ্র-দাহনে ক্ষুদ্রতা দহ’ বিনাশ গ্লানির কালো॥
*১০২৫. গীতি আলেখ্য: ‘আকাশবাণী’, তাল:দাদ্‌রা
আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়।
আমার কথার ফুল গো,
আমার গানের মালা গো-
কুড়িয়ে তুমি নিও॥
আমার সুরের ইন্দ্রধনু
রচে আমার ক্ষণিক তনু,
জড়িয়ে আছে সেই রঙে মোর
অনুরাগ অমিয়॥
আমার আঁখির-পাতায় নাই দেখিলে
আমার আঁখি-জল,
আমার কণ্ঠের সুর অশ্রুভারে
করে টলমল।
আমার হৃদয়-পদ্ম ঘিরে
কথার ভ্রমর কেঁদে ফিরে,
সেই ভ্রমরের কাছে আমার
মনের মধু পিও॥
*১০২৬. নাটিকা: ‘কাফন-চোরা’
আকাশে ভাই চাঁদ উঠেছে
(আহা) দেখবি যদি আয় না!
রূপে পরান পাগল করে,
তারে হাতে ধরা যায় না।
হাতে ধরা যায় না-
আমার সাধের ‘আয়না’-
আমার বুকে ফুট্‌লো রে ভাই
কোন্ বাগিচার ফুল
কোন্ সে দেশের হাসনুহানা
কোন্ বসোরার গুল্,
ওরে গন্ধে পরান পাগল করে,
তারে গলায় পরা যায় না॥
*১০২৭.
আকাশের মৌমাছি-তারকার দল,
পিয়ে চৈতালি চাঁদের মধু, হ’ল বিহ্বল॥
মোর মাধবী বনে মৌমাছি আসে না
আমার আকাশে আর চাঁদ হাসে না।
ভালো লাগে না এ চাঁদের আলো
পুষ্পল পরিমল-ছাওয়া বনতল॥
দক্ষিণ সমীরণে বন বিঘোর গানে, মন ভরে না।
বিধুর বাঁশরী বাজে, মধু মঞ্জরী, তবু মুঞ্জরে না।
বুলবুলি এসেছিল, ভুল সে কি ভুল?
তেমনি তো ফোটে হেনা চম্পার ফুল।
বেণী বাঁধা বধূ লো ধূলায় লুটায়
কাঁদে এলো-কুন্তল॥
*১০২৮. রাগ: বেহাগ মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
আকুল হলি কেন বকুল বনের পাখি।
দেখেছিস তুইও নাকি প্রিয়ার ডাগর আঁখি॥
মধু ও বিষ মেশা
সেই সে আঁখির নেশা
তোরে ক’রেছে পাগল, তাই কি এ ডাকাডাকি॥
চোখে পড়িলে বালি জ্বালাতে জ্বলিয়া মরি,
চোখে যাহার পড়েছে চোখ, সে বাঁচে কেমন করি’।
ফিরাই আঁখি যেদিক পানে
তারি আঁখি মনে আনে,
বলিস্ পাখি দেখা হ’লে প্রাণ শুধু আছে বাকি॥
*১০২৯. রাগ:বসন্ত মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
আগের মত আমের ডালে বোল ধরেছে বউ।
তুমিই শুধু বদ্‌লে গেছ, আগের মানুষ নও॥
তেম্‌নি আজো তোমার নামে
উথলে মধু গোলাপ-জামে,
উঠ্‌ল পু’রে জামরুলে রস, মহুল ফুলে মউ॥
ডালিম-দানায় রং ধরেছে, ডাঁশায় নোনা আতা,
তোমার পথে বিছায় ছায়া ছাতিম তরুর ছাতা।
তেম্‌নি আজো নিমের ফুলে
ঝিম হয়ে ঐ ভ্রমর দুলে,
হিজল-শাখায় কাঁদছে পাখি বউ গো কথা কও॥
*১০৩০.
আজি ঈদ্ ঈদ্ ঈদ্ খুশির ঈদ্ এলো ঈদ্
(যাঁর) আসার আশায় চোখে মোদের ছিল না রে নিদ॥
শোন্ রে গাফিল, কি ব’লে তকবির ঈদ্‌গাহে,
(তোর) আমানতের হিস্‌সা সাদকা দে খোদার রাহে
নে সাদ্‌কা দিয়ে বেহেশ্‌তে যাবার রসিদ॥
ঈদের চাঁদের তশ্‌তরিতে জান্নাত হ’তে
আনন্দেরি শিরনি এলো আসমানি পথে,
সেই শিরনি নিয়ে নূতন আশায় জাগবে না উম্মদি॥
(তোর) পিরাহানের আতর গোলাব লাগুক রে মনে,
(আজ) প্রেমের দাওত্ দে দুনিয়ার সকল জনে,
দিলেন ঈদের মারগতে হজরত এই তাগিদ॥
*১০৩১.
আজ উদার আকাশে ছুটির শঙ্খ-ঘণ্টা বাজায় কে।
প্রবাসীর মন উচাটন, শোনে-‘দীপ জ্বাল্, উলু দে’॥
আর মন লাগে নাকো কাজে,
শ্রবণের কাছে চুড়ি-কঙ্কণ বাজে।
এলোমেলো বায়ে এলো, কবরীর সৌরভ এলো যে॥
কোথা আনন্দ-নন্দনী কার চন্দন বুঝি ঘষে;
মন মেতে ওঠে মৌমাছি-সম, নন্দন-মধু রসে।
তৃতীয়া চাঁদের রসকলি পরি’
বৈষ্ণবী সেজে এলো বিভাবরী;
বাউল-হৃদয়! চল্ রে বাহিরে, হাতে একতারা নে॥
*১০৩২.
বনের মনের কথা ফুল হয়ে জাগে।
কয় না সে কথা তবু তারে ভালো লাগে॥
শ্যাম পল্লবে তনু ছেয়ে যায়,
ভরে ওঠে সুরভিত সুষমায়।
ফুটে ওঠে তার না বলা বাণী রক্তিম অনুরাগে॥
বন মর্মরে সেই মৌনীর শুনি মৃদু গুঞ্জন
ললিতার মত তার ভালোবাসা, গভীর-চির গোপন।
যত সে নিজেরে লুকাইতে চায়,
তত মধু তার উছলিয়া যায়।
কত সে পলাশে, কত সে অশোকে কত কুঙ্কুম ফাগে॥
*১০৩৩. রাগ: পূরবী, তাল: মধ্যমান
আজ যুগের পরে ঘরে১ ফিরে মায়ের কথা পড়লো মনে।
শূন্য ঘরে মন বসে না গুমরে মরে হিয়ার বনে॥
আজো সে ঘর সবাই আছে,
মা কেবলই নেই গো কাছে,-
ঐ দাওয়া আর ঐ কানাচে আজো মায়ের স্বরটি রনে॥
যত্ন কারুর সইতে নারি, কণ্ঠ ছিঁড়ে কান্না আসে;
ওষ্ঠ চেপে যায় না রাখা, রূপ যে তোমার চক্ষে ভাসে!
পাইনি মাগো সাতটি বরষ
একটুকু ক্ষীণ স্নেহের পরশ,-
(ও মা) ‘বুনো’ তোমার হ’ল না বশ চল্‌লো ফিরে ফের বিজনে।
হার্‌লো স্নেহ বাঁধন-হারার বাঁধ্‌তে নিয়ে ডোর-সৃজনে॥
*১০৩৪. রেকর্ড-নাটিকা: ‘সুরথ উদ্ধার’
আজ শরতে আনন্দে ধরে না ধরণীতে।
একি অপরূপ সেজেছে বসুন্ধরা নীলে হরিতে॥
আনো ডালা ভরি কুন্দ ও শেফালি,
আজ শারদোৎসব জ্বালো দীপালি।
স্নেহ-মাখা সুনিবিড় আকাশ উদার ধীর,
দুলে নদীতীর কার আগমনীতে॥
*১০৩৫. রাগ: পিলু, তাল: কাহার্‌বা/ দাদ্‌রা
আজ শেফালির গায়ে হলুদ
উলু দেয় পিক পাপিয়া।
প্রথম প্রণয়-ভীরু বালা
লাজে ওঠে কাঁপিয়া॥
বনভূমি বাসর সাজায়
ফুলে পাতায় লাগে নীলে,
ঝরে শিশির আশিস-বারি
গগন-ঝারি ছাপিয়া॥
বৃষ্টি-ধোওয়া সবুজ পাতার
শাড়ি করে ঝলমল,
ননদিনী ‘বৌ কথা কও’
ডাকে আড়াল থাকিয়া॥
দেখতে এলো দিগ্‌বালিকা
সাদা মেঘের রথে ঐ,
শরৎ-শশীর মঙ্গল-দীপ
জ্বলে গগন ব্যাপিয়া॥
অতীত্ প্রণয়-স্মৃতি স্মরি’
কেঁদে যায় আশিন-হাওয়া,
উড়ে বেড়ায় বর সে ভ্রমর
কমল-পরাগ মাখিয়া॥
*১০৩৬.
আজও মা তোর পাইনি প্রসাদ আজও মুক্ত নহি।
আজও অন্যে আঘাত দিলে কঠোর ভাষা কহি॥
মোর আচরণ, আমার কথা
আজও অন্যে দেয় মা ব্যথা
আজও আমার দাহন দিয়ে শত জনে দহি॥
শত্রুমিত্র মন্দভালোর যায়নি আজও ভেদ
কেহ ব্যথা দিলে, প্রাণে আজও জাগে খেদ।
আজও মাগো দুখশোকে
অশ্রু ঝরে আমার চোখে,
আমার আমার ভাব মা আজও জাগে রহি’ রহি’ ॥
*১০৩৭.রাগ: কাফি
আজকে দোলের হিন্দোলায়
আয় তোরা কে দিবি দোল্।
ডাক দিয়ে যায় দ্বারে ঐ
হেনার কুঁড়ি আমের বোল্॥
আগুন-রাঙা ফুলে ফাগুন লালে-লাল,
কৃষ্ণ-চূড়ার পাশে রঙন অশোক গালে-গাল,
লোল্ হয়ে পড়িল ঐ রাতের জোছনা-আঁচল॥
হতাশ পথিক পথ-বিভোল্,
ভোল্ আজি বেদনা ভোল্-
টোল খেয়ে যাক নীল আকাশ
শুনে তোদের হাসির রোল
দ্বার খু’লে দেখ্-ফুলের রাত
ফুলে ফুলে ডামাডোল্॥
*১০৩৮. তাল: দাদ্‌রা
আজকে না হয় একটি কথা কইলে আবার মোর সাথে।
ওগো একটু না হয় বসলে এসে এই পাথরের পৈঠাতে॥
শুধু কি গো আমার আঁখি
ঝিমায় মদির স্বপ্ন মাখি’,
ওগো তোমার কি চোখ ধরে নাকো ঢুলতে নেশার মৌতাতে॥
আজকে তোমার নয়ন আমার নয়ন হেরি’ লজ্জা পায়,
আজকে তোমার মুখের কথা শুধুই কি গো মুখ রাঙায়?
ফাগুন হাওয়ার দোদুল দোলায়
এই যে এসে দোল দিয়ে যায়-
ওগো মোরাই কি গো দুল্‌ব শুধু মান বিরহের দোল্‌নাতে॥
*১০৩৯.
আজি আকাশ মধুর, মধুর গানের সুর
আজি ভুবন লাগে মধুর।
পরানের কাছে যেন আসিয়াছে হারানো প্রিয়া সুদূর॥
একি মাধুরী জড়িত লতায় পাতায়,
যাহা হেরি তাই পরান মাতায়,
অবনি ভরিয়া ঝরিছে লাবনি মাধুরীতে ভরপুর॥
আগেও ফুটেছে এ গাঁয়ের মাঠে পথপাশে ভাটফুল,
এই পথ বেয়ে জলে যেত বধূ পিঠভরা এলোচুল।
আজ মনে হয় নতুন সকলি
মধুময় লাগে বিহগ কাকলি
আজি অকারণ নেচে ফেরে মন যেন বনের ময়ূর॥
*১০৪০. তাল: দাদ্‌রা
আজি এ বাদল দিনে কত কথা মনে পড়ে।
হারাইয়া গেছে পিয়া এমনি বাদল-ঝড়ে॥
আমারি এ বুকে থাকি’
ঘুমাত সে ভীরু পাখি,
জলদ উঠিলে ডাকি’ লুকাত বুকের ’পরে॥
মোর বুকে মুখ রাখি নিবিড় তিমির কাঁদে,
আমার প্রিয়ার মত বাঁধিয়া বাহুর বাঁধে।
কোথায় কাহার বুকে
আজি সে ঘুমায় সুখে,
প্রদীপ নিভায়ে কাঁদি একা ঘরে তারি তরে॥
*১০৪১. রাগ: ভীমপলশ্রী মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
আজি কুসুম-দীপালি জ্বলিছে বনে।
জ্বলে দীপ-শিখা আম্র-মুকুলে
রাঙা পলাশ অশোকে বকুলে,
আসে সে আলোর টানে বন-তল
মৌমাছি প্রজাপতি দলে দল
পুড়ে মরিতে সে রূপ-শিখাতে
প্রাণ সঁপিতে বাসন্তিকাতে;
পরিমল অঞ্জন মাখিয়া নয়নে
হের ঝিমায় আকাশ চাঁদের স্বপনে॥
জ্বলে গগনে তারার দীপালি
আজি ধরাতে আকাশে মিতালি
ধরা চাঁপার গেলাস ভরিয়া
মধু ঊর্ধ্বে তুলে গো ধরিয়া
পান করিতে সে মধু পরীরা
আসে নেমে কাননে স-শরীরা;
বাজে উৎসব বাঁশি গগনে পবনে
হের ঝিমায় আকাশ চাঁদের স্বপনে॥
*১০৪২. রাগ: পিলু-খাম্বাজ, তাল: কাহার্‌বা
আজি গানে গানে ঢাক্‌ব আমার গভীর অভিমান।
কাঁটার ঘায়ে কুসুম ক’রে ফোটাব মোর প্রাণ॥
ভুলতে তোমার অবহেলা
গান গেয়ে মোর কাট্‌বে বেলা,
আঘাত যত হান্‌বে বীণায় উঠ্‌বে তত তান॥
ছিঁড়লে যে ফুল মনের ভুলে
আমি গাঁথব মালা সেই সে ফুলে,
(ওগো) আস্‌বে যখন বন্ধু তোমার কর্‌ব তা’রে দান॥
(আজি) কথায় কথায় মিলায়ে মিল
কবি রে, তোর ভরল কি দিল্,
তোর শূন্য হিয়া, শূন্য নিখিল মিল পেল না প্রাণ॥
*১০৪৩. দ্বৈত সঙ্গীত
উভয়ে : আজি জ্যোৎস্না বিজড়িত ফাল্গুনী রাতে।
ল’য়ে মঞ্জুল-মল্লিকা মালিকা হাতে॥
আজি এসেছি মোরা এসেছি
দোঁহে মিলেছি বাহুপাশে হিন্দোলাতে॥
শ্যাম : আজি বিকশিত উন্মুখ চিত্ত
রাধা : দিছি পদতলে ঢালি সব বিত্ত
দিছি তনুমন যৌবন রিক্ত আজি হে
শ্যাম : ঊষর প্রাণের এ চির-পিপাসা কর গো তারে সিক্ত
আজি মিলন প্রেম-বারি পাতে॥
রাধা : থর কম্পিত হিয়া-পরে বাঞ্ছিত এসো গো
শ্যাম : মম স্পন্দিত বাহুপাশে নন্দিতা এসো গো
রাধা : আন অন্তরে নিবিড় চেতনা
হর মন্তরে এ চির বেদনা
শ্যাম : এসো মালতী বল্লরি বিতানে
এসো মিলন-পুলকিত প্রাণে
চির উৎসুক বিরহ অবসানে
নবপ্রেমে আজি প্রাণ মাতে॥
*১০৪৪. রাগ: কালাংড়া-বসন্ত-হিন্দোল, তাল: দাদ্‌রা
আজি দোল্-পূর্ণিমাতে দুল্‌বি তোরা আয়।
দখিনার দোল্ লেগেছে দোলন্-চাঁপায়॥
দোলে আজ্ দোল্-ফাগুনে
ফুল-বাণ আঁখির তূণে,
দুলে আজ বিধুর হিয়া মধুর ব্যথায়॥
দুলে আজ শিথিল বেণী, দুলে বধূর মেখলা
দুলে গো মালার পলা জড়াতে বঁধুর গলা!
মাধবীর দোলন্-লতায়
দোয়েলা দোল্ খেয়ে যায়,
দুলে যায় হল্‌দে পাখি সোঁদাল-শাখায়॥
বিরহ-শীর্ণা নদীর আজিকে আঁখির কূলে
ভরে জল কানায় কানায় জোয়ারে উঠ্‌ল দু’লে।
দুলে বসন্ত-রানী
কুসুমিতা বনানী
পলাশ রঙন দোলে নোটন-খোঁপায়॥
দোলে হিন্দোল-দোলায় ধরণী শ্যাম-পিয়ারী,
দুলিছে গ্রহ-তারা আলোক-গোপ-ঝিয়ারি।
নীলিমার কোলে বসি’
দুলে কলঙ্কী-শশী,
দোলে ফুল-উর্বশী ফুল-দোলনায়॥
*১০৪৫. রাগ: খাম্বাজ-কাফি, তাল: কাহার্‌বা
আজি নন্দদুলালের সাথে
ঐ খেলে ব্রজনারী হোরি।
কুঙ্কুম-আবির হাতে
দেখ, খেলে শ্যামল খেলে গোরী॥
থালে রাঙা ফাগ,
নয়নে রাঙা রাগ,
ঝরিছে রাঙা সোহাগ
রাঙা পিচ্‌কারি ভরি॥
পলাশ শিমুলে ডালিম ফুলে
রঙনে অশোক মরি মরি।
ফাগ-আবির ঝরে তরুলতা চরাচরে,
খেলে কিশোর কিশোরী॥
*১০৪৬. রাগ:মিশ্র জৌনপুরী, তাল: আদ্ধা-কাওয়ালি
আজি নাচে নটরাজ এ কী ছন্দে ছন্দে।
কী জানি কী সুখাভাসে
মৃদু মৃদু মধু হাসে
কে জানে মাতিল কোন আনন্দে॥
ধুতুরা খুলিয়া ফেলি’
পড়েছে চম্পা বেলি
অপরূপ রূপ হেরি সবে বন্দে॥
সুরধুনী গঙ্গে তরল তরঙ্গে,
ছন্দে তুলিল ধ্বনি তরঙ্গ রঙ্গে।
উমারে লইয়া বুকে
মহাকাল দোলে সুখে
রবি শশী গ্রহতারা অভিবন্দে॥
*১০৪৭. তাল: ফের্‌তা (কাহার্‌বা ও দ্রুত-দাদ্‌রা)
আজি পিয়াল ডালে বাঁধো বাঁধো বাঁধো ঝুলনা।
পর ধানী শাড়ি, মেঘ-রঙ ওড়না॥
জলদ-তাল বাজে শ্রাবণ-মেঘে
তরুরে জড়ায়ে দোলে বন-লতা-বিরহ-দোলনা॥
শান্ত আকাশে আজি বেদনা ঘনায়
কত কি বলিতে চায় শ্রাবণ-ধারায়,
(তার) তবু মনের কথা বলা হ’ল না॥
তমাল-কুঞ্জে চল চল দুলিতে,
আজি আসে মনে বৃন্দাবনের তুলনা॥
*১০৪৮. রাগ: পিলু-বারোয়াঁ
আজি পূর্ণশশী কেন মেঘে ঢাকা।
মোরে স্মরিয়া রাধিকাও হ’ল কি বাঁকা॥
কেন অভিমান-শিশিরে মাখা কমল,
কাজল-উজল-চোখে কেন এত জল,
লহ মুরলী হরি লহ শিখী-পাখা॥
*১০৪৯.
আজি প্রথম মাধবী ফুটিল কুঞ্জে মাধব এলো না সই।
এই যৌবন-বরমালা কারে দিব মোর বনমালী বই॥
সারা নিশি জেগে বৃথাই নিরালা
গাঁথিলাম নব মালতীর মালা,
অনাদরে হায় সে মালা শুকায় দেখিয়া কেমনে রই॥
মম অনুরাগ-চন্দন ঘ’ষে,
লাজ ভু’লে সাঁঝ হ’তে আছি ব’সে,
শুকাইয়া যায় চন্দন হায় রাধিকারমণ কই॥
চলিলাম আমি যথা মন চায়,
প্রভাতে আসিলে মোর শ্যামরায়
বলিস্ আঁধারে হারাইয়া হায় গেছে রাধা রসময়ী॥
*১০৫০.
আজি বাদল বঁধু এলো শ্রাবণ-সাঁঝে-
নীপের দীপ ঢাকি’ আঁচল ভাঁজে॥
জ্বালি’ হেনার ধুনা
যাচি’ কার করুণা
বন-তুলসী তলে এলে পূজারিণী সাজে॥
সেদিন এমনি সাঁঝে মোর বেদীর মূলে
প্রিয়া জ্বালিলে এ দীপ, তাহা গেছ কি ভুলে?
সেই সন্ধ্যা-স্মৃতি
সে যে করুণ গীতি,
দূরে দাদুরি আনে বহি’ মরম মাঝে॥