মুরলীধর বসু-কে
কৃষ্ণনগর
২৬-১২-২৬

মুরলীদা!
    তোমার চিঠি যখন পাই, তখন আমি বিছানা-সই হয়ে পড়ে আছি। তাই উত্তর দিতে পারিনি। প্রায় মাস খানেক ধরে জ্বরে ভুগে আজ দিন চারেক হল ভালো আছি। তুমি একা পড়েছ ‘কালিকলম’নিয়ে। শৈলজা ভুগছে আজও শুনলাম।
    আমি এবার এত দুর্বল হয়ে পড়েছি এবং চারিদিক দিয়ে এত বিব্রত হয়ে পড়েছি যে, এবার বুঝি সামলানো দায় হবে এই ভেবেছিলুম প্রথমে। অবশ্য সামলে যে উঠেছি তা-ও নয়। নিত্য-অভাবের চিত্ত-ক্ষোভ আমায় আরো দুর্বল করে তুলছে। এখনও বাড়ি ছেড়ে বেরোবার সাধ্য নেই। – তোমার এ-সময় সময় নেই; তবু একটা কাজ দিচ্ছি। আমি শুয়ে শুয়ে কয়েকটা গান লিখেছি উর্দু গজলের সুরে। তার কয়েকটা ‘সওগাতে’দিয়েছি। দুটো তোমার কাছে পাঠাচ্ছি –’বঙ্গবাণী’তে দিয়ে আমায় তাড়াতাড়ি কিছু নিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্য সব জায়গায় দশ টাকা করে দেয় আমায় প্রত্যেকটা কবিতার জন্য, একথা ওদের বোলো। গান দুটি পেয়েই যদি ওরা টাকাটা দেয় তাহলে আমার খুব উপকারে লাগে। – আমাদের আর মান-ইজ্জত রইল না, মুরলীদা, –না, অর্থাভাব বুঝি মনুষ্যত্বটাকেও কেড়ে নেয় শেষে!

    তোমার ‘কালিকলম’-এর জন্য মাঘ পর্যন্ত তো রয়েছে, তারপর আবার লেখা দেব, অন্তত দুটো গজল পাঠিয়ে দেব। এখন যদি চাও তো লিখ।
    হ্যাঁ, ‘বঙ্গবাণী’তে জিজ্ঞাসা কোরো, ওঁরা যদি স্বরলিপি চান তাহলে গজল দুটোর স্বরলিপি করে পাঠাতে পারি ২/১ দিনের মধ্যেই। ‘বঙ্গবাণী’র সঙ্গে বন্দোবস্ত করে দাও না মুরলীদা – ওঁরা প্রতি মাসে কিছু করে দেবেন, আমিও সেই অনুসারে লেখা দেব প্রতি মাসে। কী হয় লিখে জানিয়ো।...
    আমাদের বাড়ির আর সকলে ভালো। দেখলে কেবল নিজের কথাই এক কাহন করলুম। প্রেমেনের ঠিকানাটা দিয়ো।...

–নজরুল