মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন-কে
কৃষ্ণনগর
২৬-১২-২৬  (১৫ পৌষ ১৩৩৩)

প্রিয় নাসিরুদ্দিন সাব,
    এখন রাত্রি। এই মাত্র ‘মিসেস এম. রহমান’শীর্ষক কবিতাটি শেষ করে আপনাকে এই চিঠি লিখছি।
    আপনার দুইখান Post card-ই পেয়েছি, মঈনের চিঠিও পেয়েছি। একেবারে কবিতার সাথে চিঠি দেব বলে আর আলাদা চিঠি দিইনি; কিছু মনে করবেন না। আমি গাজি আবদুল করিমের৪ বন্দি-জীবন নিয়ে একটা কবিতা লিখছিলাম, এমন সময় মার (মিসেস এম. রহমানের) মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে আমার আবার সব গুলিয়ে গেল। বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গিয়েছিল। আপন পেটের ছেলের চেয়েও বেশি স্নেহ করতেন মা আমায়। আমি তার প্রতিদানে কিছুই দিতে পারিনি। আমি আজ দেউলিয়া হয়ে যেন জীবনের জোয়ার-ভাঁটা দেখছি শুধু। মন বড়ো খারাপ তাই এখন মার নামে যে কবিতাটি পাঠালাম – এটাই মাঘের সওগাতের প্রথমে দিয়ে দেবেন। মা আমায় ভালোবাসতেন বলেই যে এ দাবি করছি, তা নয়। মূলত সাহিত্যের দিক থেকেও এ দাবি করবার মতো গুণ মার ছিল।৫ এটা ছেপে দিলে আমি বড়ো খুশি হব, মাও বেহেস্ত হতে তাঁর অবহেলিত প্রতিভার অসময়ে কদর দেখে হয়তো শান্তি লাভ করবেন। আপনাকে অধিক লেখা নিষ্প্রয়োজন।
    আমার শরীর আজও যথেষ্ট দুর্বল। জ্বর আর আসছে না। নানান চিন্তায়, বিপদে মন বা মস্তিষ্ক স্থির নেই – ‘যা’আসছে কলমে, লিখে যাচ্ছি।
    ‘সওগাত’হতে কিছু নিতে আমার কষ্ট হয়। আপনি এটা ঋণ দিচ্ছেন মনে করে দেবেন। আমার বইয়ের দাম হতে এ ঋণের টাকা কেটে নেবেন। আমি হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যেই বা পরেই কলকাতা যাব, ইনসাল্লাহ। যদি আপনার কষ্ট না হয়, তাহলে গোটা বিশেক টাকা পাঠালে বড়ো উপকৃত হতুম। গোপালদা একশো টাকার সব টাকা দেননি। চিঠি লিখে উত্তর পাইনি। ও-টাকাটা এলে আপনাকে বিব্রত করতাম না লিখে। গোপালদাকে কিছু বলবেন না যেন। এখানেও তাই অনেক ঋণ হয়ে গেছিল –টাকা পেলেই কিছু কিছু করে তার শোধ দিতে হয়। অন্য পাবলিশারের কাছেও টাকা পাচ্ছিনে চিঠি লিখে; লেখার দামও পাচ্ছিনে – যেখানে যেখানে যেখানে পাওয়ার কথা। আপনাকে আমি অসংকোচে সব কথা লিখলাম বলে আপনার হাতে না থাকলে বিব্রত হওয়ার দরকার নেই। আমি তাতে বিন্দুমাত্র দুঃখিত হব না। এ ‘নিত নাই’-এর সমস্যা পূরণ আমাকে করতে হবে এবার কলকাতা গিয়ে।
    হ্যাঁ, ফাল্গুনের সওগাতের জন্য ওই গাজি আবদুল করিমের উপর লেখা কবিতাটা পাঠিয়ে দেব ২/৪ দিনের মধ্যেই শেষ করে। গজল-গান দুটো মাঘের সওগাতে দিতে পারেন, মাঝে বা শেষে। ফাল্গুনের জন্য আরও দুটো গজল পাঠিয়ে দেব। স্বরলিপি পাচ্ছি ২/১ দিনের মধ্যেই। বার্ষিক সওগাতের আর কত দেরি? পত্রোত্তরের প্রতীক্ষায় রইলাম।
    দলসুদ্ধ সকলে ভালোবাসা নিন। এখানে আর সকলে ভালো। শামসুদ্দিন সাহেবকে আমার জন্য অনেক গাল খেতে হচ্ছে হয়তো, না? ইতি।

প্রাণসিক্ত
নজরুল