বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম :
আজি দোল্-পূর্ণিমাতে দুল্বি তোরা আয়
আজি দোল্-পূর্ণিমাতে দুল্বি তোরা আয়।
দখিনার দোল্ লেগেছে দোলন্-চাঁপায়॥
দোলে আজ্ দোল্-ফাগুনে
ফুল-বাণ আঁখির তূণে,
দুলে আজ বিধুর হিয়া মধুর ব্যথায়॥
দুলে আজ শিথিল বেণী, দুলে বধূর মেখলা
দুলে গো মালার পলা জড়াতে বঁধুর গলা!
মাধবীর দোলন্-লতায়
দোয়েলা দোল্ খেয়ে যায়,
দুলে যায় হল্দে পাখি সোঁদাল-শাখায়॥
বিরহ-শীর্ণা নদীর আজিকে আঁখির কূলে
ভরে জল কানায় কানায় জোয়ারে উঠ্ল দু’লে।
দুলে বসন্ত-রানী
কুসুমিতা বনানী
পলাশ রঙন দোলে নোটন-খোঁপায়॥
দোলে হিন্দোল-দোলায় ধরণী শ্যাম-পিয়ারী,
দুলিছে গ্রহ-তারা আলোক-গোপ-ঝিয়ারি।
নীলিমার কোলে বসি’
দুলে কলঙ্কী-শশী,
দোলে ফুল-উর্বশী ফুল-দোলনায়॥
-
ভাবসন্ধান: রাধাকৃষ্ণের বসন্তকালী দোলযাত্রা হলো হোরি উৎসব। এই গানে
দোল-পূর্ণিমার মহিমা উপস্থাপন করা হয়েছে।
দোল-পূর্ণিমার দোলায়িত ছন্দের আবেশে রাধাকৃষ্ণ দোল খায় দোলনায়, আর তার দোলায়িত
ছন্দে দোলে প্রকৃতি, দুলে ওঠৈ মানব-মানবীর প্রেম-হৃদয়। এই গানে রাধাকৃষ্ণের চেয়ে
মহীয়ান হয়ে উঠেছে- দোলযাত্রার ছন্দের দোলা। এ দোলের ছোঁয়া লাগে দোল্-পূর্ণিমার
মায়াবী আলোয়. দোল লাগে মানব-মাবীর মনোবনে। যার আবেশে বসন্তের হাওয়ার ছোঁয়ায় দোলে
দোলন-চাঁপা, দোলে প্রেয়সীর আঁখির তূণে (বাণ রাখার আধার) প্রেম-পুষ্প বাণ।
দোলের আবেশে প্রেমমধুর বিধূর হৃদয় দুলে উঠে। দোলে কিশোরীর শিথিল বেণী, বধূর মেখলা
(কোমরের অলঙ্কার)। বঁধুর গলায় মালা জড়াতে গিয়ে দুলে ওঠে পুষ্পমালা-রূপী পলা।
উল্লেখ্য, এখানেপলা হলো- প্রবাল দিয়ে তৈরি হাতের বালা বিশেষ। এ গানে
পুষ্প-মালাকে পলার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এমন দোলোৎসবে মাধবী তার দোলন-লতায় দোলে। দোয়েলা, হলুদিয়া পাখি দোল খায় সোঁদল (সোনালু)
গাছের শাখায়। যার যৌবন নদী বিরহে শীর্ণা হয়ে গেছে, হোলির দোলায় তারও মন ভরে ওঠে
দোলের আমেজে। বসন্ত যেন রানির বেশে দোলে পুষ্পিতা বনানীতে। পলাশ রঙন দোলে
শ্যাম-পিয়ারীর নোটন-খোঁপায় (বড়-খোপা)। দোলে গ্রহতারা আলোকময় গোপ-কন্যা হয়ে।
প্রেয়সী নীলাকাশের কোলে দুলে কলঙ্কী চাঁদ। দোলে উর্বসী-রূপিণী পুষ্পরাশি,
পুষ্প-দোলনার দোলায়।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কালিকলম পত্রিকার 'চৈত্র ১৩৩৪' সংখ্যায়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৮ বৎসর
১০ মাস।
-
পত্রিকা: কালি কলম। চৈত্র ১৩৩৪ (মার্চ-এপ্রিল ১৯২৮)। শিরোনাম: দোল
পূর্ণিমা
- গ্রন্থ:
-
বুলবুল
- প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ (নভেম্বর ১৯২৮)।
গান ২৬। কালাংড়া-বসন্ত-হিন্দোল-দাদরা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান
২৬। কালাংড়া-বসন্ত-হিন্দোল-দাদরা। পৃষ্ঠা: ১৭২]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল
ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১০৪৩ সংখ্যক গান।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণবসঙ্গীত। হোরি।
দোলপূর্ণিমা।