বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: উদার অম্বর দরবারে তোরই প্রশান্ত প্রভাত বাজায় বীণা
উদার অম্বর দরবারে তোরই প্রশান্ত প্রভাত বাজায় বীণা।
শতদল-শুভ্রা পদতল-লীনা, প্রশান্ত প্রভাত বাজায় বীণা॥
সহস্র কিরণ-তারে হানি’ ঝঙ্কার
ধ্বনি তোলে অনাহত গভীর ওঙ্কার,
সেই সুরে উদাসীন, পরমা প্রকৃতি ধ্যান-নিমগ্না মহাযোগাসীনা॥
আনন্দ-হংস বিমুগ্ধ গতিহীন
স্থির হ’য়ে ব্যোমে শোনে সে জ্যোতির্বীণ,
ঝরা ফুল-অঞ্জলি তা’রি চরণে প্রণতা ধরণী বাণী-বিহীনা॥
- ভাবার্থ: গানটি মূলত রাগ দরবারী টোড়ির ভাবার্থক লক্ষণ গীত।
মূলত এই রাগের ভিতরে
বিমুগ্ধ এবং মোহিত করার যে অপার্থিব মহিমা রয়েছে, তারই প্রকাশ ঘটেছে এই গানের
বাণীর অপূর্ব শব্দচয়নের মধ্য দিয়ে। মূলত সুর-সৌন্দর্যের পরম রূপের বিমূর্ত
আনন্দকে মূর্ত করা হয়েছে- এই গানে।
কবি
এই গানের শুরুতেই এই রাগের নাম সান্ধ্য ভাষায় 'দরবারে তোরই' উল্লেখ করেছেন । খোলা
আকাশের মহাদরবারে, দিবা প্রথম প্রহরের প্রশান্ত ভোরে যখন এই রাগ বাদিত হয়, তখন যেন
শুভ্র (কল্যাণকর ও পবিত্র) সুর-শতদল প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে যায়। এখানে 'তোরই'
শব্দটি বহুঅর্থক সম্বোধন। হতে পারে এই তুই পরমা-প্রকৃতি, হতে পারে সুরের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী।
দরবারী টোড়ির সুর প্রভাতের সহস্র আলোক কিরণরূপী তারে, পরবশিত হয়ে ঝঙ্কার তোলে।
পরমা-সত্তার বীণায় ওঠে অপার্থিব অনাহত ওঙ্কার ধ্বনি। পরমা প্রকৃতিরপিণী মহাযোগে
ধ্যানমগ্না, এই সুরের মোহে যেন উদাসীন হয়ে যায়।
আনন্দরূপী রাজহংসের
পৃষ্ঠে আসীনা সুরের দেবী (মহাসরস্বতী)। এই রাগের সুরে বিমুগ্ধ আনন্দ-হংসও যেন
গতিহীন হয়ে যায়। তিনি মহাকাশে শ্রবণ করেন এই জ্যোতির্ময় সুরের ঝঙ্কার। সমগ্র
চরাচর বাণীহীনা হয়ে, এই সুর-সৌন্দর্য-পুষ্পের অর্ঘ্য নিবেদন করে
পরমার পদতলে।
- রচনাকাল ও স্থান: রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৭৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭০) মাসে সন্ধ্যামালতী প্রকাশিত হয়েছিল।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট
ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১১৫৩। তাল: কাহারবা। পৃষ্ঠা: ৩৫১]
- সন্ধ্যামালতী
- প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৭৭ (জুলাই-আগষ্ট
১৯৭১)]
- নজরুল রচনাবলী জন্মশতবার্ষিকী সপ্তম
খণ্ড [১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫, ২৫ মে ২০০৮। সন্ধ্যামালতী, গান ১৯। পৃষ্ঠা:
১৩৬]
- বিষয়াঙ্গ: [ভক্তি। সাধারণ। বন্দনা]
- সুরাঙ্গ: খেয়ালাঙ্গ