বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: কেন মনে জাগে উদাসিনী গৌরী উমার স্মৃতি
কেন মনে জাগে উদাসিনী গৌরী উমার স্মৃতি!
আর কত দূরে
কত দেরি আনন্দময়ীর আসার তিথি॥
কেন পদ্মদীঘি দুলে ওঠে হৃদয়ে
মোর নন্দিনী মা আসে কি রাঙা চরণ ল'য়ে?
কেন নয়নের বাতায়নে উতলা হ'ল, অশ্রুর ভ্রমর-বীথি॥
তার মন নাই, উন্মনা চিন্ময়ী সে, তাই ছেলের কথা মনে নাই,
শারদ-শ্রী এলো, পরমা-শ্রী কই - কাঁদি আর পথ-পানে চাই।
ওকি ঘরে এসে, নাম ধরে, ডেকে চ'লে যায়
শিউলির অঞ্জলি ফেলে আঙিনায়,
ভোরের ভৈরবী বুকে মোর কাঁদে গো, ওকি তার করুণ-গীতি॥
- ভাবসন্ধান:
শারদশ্রী শরৎকালের বন্দনামূলক
গীতিআলেখ্যের জন্য রচিত হয়েছিল। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে- শরতের
অন্যতম আকর্ষণ- 'শারদীয় দুর্গাপূজা'-কে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গানের মাধ্যমে।
শরতের শুরুতেই এই দেবী আসেন না। বিলম্বে আসা দেবীর প্রতীক্ষায় জনপদবাসীর মনে যে
আকাঙক্ষার হাহাকর ওঠে, এই গানে তারই আভাস পাওয়া যায়। দেবীপক্ষের সূচনার গান
হিসেবে একে মহালয়ার গান হিসেবে বলা যেতে পারে।
সারাবছর সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উৎসুক হয়ে থাকেন- মাতৃরূপিণী দুর্গার
আগমনের অপেক্ষায়। আর সারা বৎসর হিমালয় কন্যা গৌরী উমা (দুর্গার দুটি নাম)
উদাসীন হয়ে থাকেন বঙ্গ জনপদের সন্তানদের কল্যাণ-অকল্যাণের ভাবনা থেকে। তিনি
আসেন শরতের প্রথম মাস আশ্বিনের দেবীপক্ষে। তাই শরতের শুরু থেকেই বঙ্গ
জনপদাবাসীরা আনন্দময়ী দেবীর আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। কবি মনে করেন,
মাতা-কন্যা-রূপিনী এই দেবী আসেন তাঁর মনোলোকের হৃদিপদ্ম দুলিয়ে। তাঁকে
দেখার আশায় ভক্তদের উতলা নয়ন উন্মোচিত হয়, আনন্দময়ীর আগমনের আনন্দ-আবেগে অশ্রুতে
সজল হয়ে ওঠে তাঁদের আঁখি-পল্লব।
কবি অভিমান ভরে বলেন- চিন্ময়ী দেবীর মনোলোকের দেবী তাঁর সন্তানদের ভুলে থাকেন।
প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে শরত আসে, কিন্তু শরতের শুরুতেই সকল সৌন্দর্যের
আধার পরমা-শ্রী (আদ্যশক্তি দুর্গা) আসেন না। কবি ভাবেন হয়তো তিনি আসেন। তিনি
ভক্তের ঘরে নাম ধরে ডেকে- সারা না পেয়ে চলে চাল যান। হয়তো শিউলি ফুলের
অঞ্জলিতে আঙিনা ভরিয়ে দিয়ে তিনি তাঁর আগমনের চিহ্ন রেখে যান। প্রকৃতিতে ভোরের
ভৈরবী রাগে বাঁধা করুণসুর কাঁদে দেবীকে না পাওয়ার বেদনায়।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়
না।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর
(শনিবার, ২৭ ভাদ্র ১৩৪৮)
কলকাতা বেতারকেন্দ্র ক-এর তৃতীয় অধিবেশনে
শারদশ্রী গীতিচিত্রটি প্রচারিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি রচনা ও প্রযোজনায় ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের যন্ত্রসহযোগিতায় ছিল- যন্ত্রী সংঘ এবং ধারা-বর্ণনায় ছিলেন অনিল দাস। সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন- চিত্তরঞ্জন রায়, শৈল দেবী এবং ইলা ঘোষ।
৭.৫৫ থেকে ৮.২৯ মিনিট পর্যন্ত। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৩ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। গান সংখ্যা ১৩৪২। রাগ: রাগ: গৌরী, তাল: ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ৪০৬।
- পত্রিকা: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ, ২১শ সংখ্যা। [১লা নভেম্বর ১৯৪১, ১৫
কার্তিক ১৩৪৮]। শারদ-শ্রী। গান সংখ্যা ২। পৃষ্ঠা: ১২৪১-১২৪২। [নমুনা]
- বেতার:
শারদশ্রী।
শরৎকালের বন্দনামূলক অনুষ্ঠান। কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে 'প্রচারিত। ১৯৪১
খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার, ২৭ ভাদ্র ১৩৪৮)।
- সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ, ১৭শ সংখ্যা। [১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪১, ১৫ ভাদ্র
১৩৪৮] পৃষ্ঠা:
১০৩৪
- The Indian listener. Vol VI No.
17 [August 22,1941] [page 83]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত, সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দূর্গাপূজা।
মহালয়ার গান