বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: কৃষ্ণচূড়ার মুকুট পরে এলো বনমালী
কৃষ্ণচূড়ার মুকুট পরে এলো বনমালী (এলো) এ কোন্ বনবাসী
হাতে বাঁশের বাঁশি, তাহার মুখে কুটিল হাসি॥
চঞ্চলতার দোলা দিয়ে
দিল ব্রজের ঘুম ভাঙিয়ে
উঠল নেচে ঝিলমিলিয়ে যমুনার জলরাশি॥
এ বুঝি গো বেদের কুমার, তাই সে কালী-দহে;
নাগের ফণায় চরণ রেখে হেসে চেয়ে রহে।
সে একলা বসে কদম শাখে
বাঁশির সুরে যেমনি ডাকে,
নরনারী সব ছুটে এসে চরণে হয় দাসী॥
-
ভাবসন্ধান: এই গানে ব্রজবিহারী শ্রীকৃষ্ণের অপরূপ রূপ, লীলা ও মহিমা
উপস্থাপিত হয়েছে। এই গানে কবি কৃষ্ণের মহিমা উপস্থাপন করেছেন তিনটি পৃথক
বিষয়ানুসারে। প্রথমে উপস্থাপিত হয়েছে- ব্রজবাসীর মনে কৃষ্ণ-ভক্তির চৈতন্য ছড়ি
দিতে বানবাসীর রূপে। এই দশায় কৃষ্ণ বহুরূপী রূপে মহিমান্বিত। দ্বিতীয়টি রূপটি
উপস্থাপন করা হয়েছে কালী নামক নাগের বিনাশের সূত্রে। মূলত এই রূপে কৃষ্ণকে
উপস্থাপন করা হয়েছে অত্যাচারীর বিনাশকারী শক্তি রইসেবে। শ্রীকৃষ্ণের তৃতীয় রূপটি
হলো- জগতকল্যাণে প্রেমময় দৈবসত্তা।
যখন তিনি ব্রজবাসীর মনে কৃষ্ণ-ভক্তির চৈতন্যকারী রূপে আসেন- তখন তাঁর হাতে থাকে
বাঁশি, ঠোঁটে থাকে প্রেম-কৌতুকময় হাসি। তাঁর মাথায় থেকে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের মুকুট।
তিনি আসেন অচেনা বনবিহারী হয়ে। বনমালীর এই অচেনা রূপ দেখে কবির মনে
বিস্ময় জাগে। যেন স্বগোক্তিতে বলেন- 'এ কোন বানবাসী'। তাঁর উপস্থিতি ব্রজবাসীর
সুপ্ত চেতনাকে জাগ্রত করে নবতর চেতনায়। যমুনা জেগে ওঠে তাঁর ঝিলমিল আনন্দতরঙ্গে।
তিনি অশুভশক্তি বিনাশকারী রূপে আসেন। তাই তিনি কালীয় নামক নাগের ফণার উপর নেচে
নেচে তাকে হত্যা করেন। এই রূপে তিনি বেদের কুমারে হয়ে হাসি মুখে বিনাশ করেন
অশুভ শক্তিকে।
তিনি প্রেমিকরূপে আসেন। তাই তিনি কদম শাখায় বসে প্রেমের বাঁশী বাজান। আর সে
সুরের টানে ছুটে আসেন ব্রজের নরনারীরা, তাঁরা ভক্তি ও প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে
নিজেদেরকে নিবেদন করেন তাঁর শ্রীচরণে।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৫) মাসে, টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর
১ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২০১২)। ২২৩০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৬৬৯।
- রেকর্ড:
- টুইন
[জুলাই
১৯৩৮
(আষাঢ়-শ্রাবণ
১৩৪৫)। এফটি ১২৪৫০। শিল্পী:
কুঞ্জলাল সিংহ। সুর সুবল দাস।]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম: বৈষ্ণব। কৃষ্ণ। বন্দনা
- সুরাঙ্গ: মনিপুরী সুর
- তাল: খেমটা