বিষয়: নজরুলসঙ্গীত।
শিরোনাম: আমার যারা আশ্রিত নাথ তারা তোমার দান
আমার যারা আশ্রিত নাথ তারা তোমার দান
হে নাথ যেন সেই অতিথির হয় না অসম্মান॥
ওরা দেহে মনে সুন্দর হোক
পেয়ে তোমার পুণ্য আলোক,
কর্মে ওদের মহান কর ধর্মে বলবান॥
তোমার দেওয়া ভার বহিবার শক্তি মোরে দাও
আমার স্বাস্থ্য আয়ু নিয়ে আশ্রিতে বাঁচাও।
(যাদের) পাঠিয়ে দিলে আমার ঘরে
আমায় পরখ করার তরে
যেন দিতে পারি অকাতরে তাদের তরে প্রাণ॥
আমায় যারা ঘিরে আছে আমার মুখে চেয়ে
তারা আমার নহে হে নাথ, তোমার ছেলে মেয়ে॥
ওদের তুমি রেখো সুখে
ধরে তোমার আপন বুকে
বাঁচুক ওরা তোমার আশীর্বাদের প্রসাদ পেয়ে॥
আমায় দিও দুর্ভাবনার বোঝা যত আছে
(নাথ) থাকুক পরম নির্ভরতায় ওরা আমার কাছে।
শুধু তোমার ভরসাতে নাথ
আমি ওদের ধরেছি হাত
তোমার স্নেহ মায়ের মত থাকুক ওদের ছেয়ে॥
- ভাবসন্ধান: বিশ্বমানব জগতের কল্যাণে যে সকল মহাত্মারা মানবসেবা করে
থাকেন, তাঁদেরকে অনেকে ত্রাণকর্তা বা আশ্রয়দাতা হিসেবে মনে করেন। এই গানে-
যেন সে সকল মহাত্মাদের প্রতিনিধি হয়ে কবি- মহান স্রষ্টার কাছে সবিনয়ে নিজের
দীনতার কথা ব্যক্ত করেছেন। মহাত্মারা মনে করেন- যাঁরা তাঁদের কাছে অাশ্রয়ের
জন্য আসেন, তাঁদেরকে নাথই (জগতের অধিপতি) পাঠান। মহাত্মাদের আশ্রয় দেওয়া
ক্ষমতা তিনিই দেন। আশ্রয়প্রাথীকে ও তিনি দান (উপহার) হিসেবে পাঠান। তাই
তাঁদের কাছে আশ্রয়প্রার্থীরা সম্মানিত অতিথি। তাঁদের অসম্মান করার অর্থ হলো-
নাথের অসম্মান। এখানে নাথের কাছে সম্মানিত অতিথিদের সমাদার করার আশীর্বাদও
চেয়েছেন কবি।
কবি মনে করেন, নাথের আশীর্বাদ ব্যতীত তাঁর কিছু করার নেই। এ গানে নিজের
কল্যাণের জন্য তাঁর কোনো প্রার্থনা নেই। সম্পূর্ণ গান জুড়ে রয়েছে- অতিথিদের মহোত্তম
করে তোলার জন্য নাথের কাছে সকাতর আবেদন। কবি কামনা করেন,
নাথের স্পর্শে আগত অতিথিরা দেহমনে সুন্দর হয়ে উঠুক, জ্ঞানের পূণ্য আলোয়
তাঁরা
অভিষিক্ত হোক এবং ধর্ম ও করধ্মে বলীয়ান হয়ে তা!রা হয়ে উঠুক
মহোত্তম। কবির কামনা, তাঁরা
নাথের অনুগ্রহে কর্মভার বহন করার শক্তি লাভ করুক। এই অতিথিদের সমাদরে
তিনি এতটাই গভীরভাবে নিবেদিত যে, তাঁদের সুসাস্থ্য ও আয়ুষ্মান হওয়ার জন্য-
নিজের স্বাস্থ্য ও আয়ু দান করতেও কুণ্ঠিত নন। কবি মনে করেন, অতিথিদের জন্য তিনি
কতটা নিবেদিত,
তা পরীক্ষা করার জন্যই যেন নাথ তাঁর কাছে তাঁদের অতিথিদের পাঠিয়েছেন।
কবি সেবার মূল সত্যের দায় নাথের উপর চাপিয়ে তাঁকে যেন স্মরণ করিয়ে দেন- যে সকল অভাজনের কবির
দানের অপেক্ষায় থাকেন, তাঁরা তো তাঁরই সন্তান। তাই তাঁদের সুখে রাখার দায়ও
নাথের। কবির শুধু প্রার্থনা ওঁরা নাথের দেওয়া অনুগ্রহে সুখে থাকুক,
তাঁদের জীবন ধন্য হয়ে উঠুক নাথের আশীর্বাদে।
ইত্যবসরে নিজের কথা বলেছেন। তিনি নিজের জন্য কিছু না চেয়ে, চেয়েছেন অতিথিদের
অকল্যাণ দুরীকরণের দুর্ভাবনার ভার। যেন তাঁরা তাঁর আশ্রয়ে পরম নির্ভাবনায়
থাকুক। নাথের ভরসাতে তিনি অতিথিদের যে হাত ধরেছন, সে হাত যেন মায়ের
স্নেহের আশ্রয়ের হাত হয়ে তাঁদের উপর সর্বদা বিরাজ করুক।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়
না।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২০১২)। ৩০৫১ সংখ্যক গান।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। পরমসত্তা। প্রার্থনা