বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ূর ডাকে
দ্বৈত: আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ূর ডাকে,
দোল্না কেন বাঁধলে না গো এবার কদম-শাখে॥
স্ত্রী: সঙ্গে ল'য়ে গোপ-গোপীরে
পুরুষ: ব্রজের-কিশোর যাবে ফিরে
দ্বৈত : লীলা-কিশোর শ্যাম যে লীলা-সাথীর সাথে থাকে
আবার
শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ূর ডাকে॥
দ্বৈত: দোলনা বেঁধে রইবো চেয়ে আমরা মেঘের পানে
আয় ওরে আয়, নির্জন বনকে জাগাই সেই কাজরী গানে গানে।
স্ত্রী:
বৃষ্টি ধারায় টাপুর টুপুর
পুরুষ: শুনব তাহার পায়ের নূপুর
দ্বৈত: বিজলিতে তার চপল চাওয়া দেখব মেঘের ফাঁকে॥
-
ভাবসন্ধান: শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে রাধাকৃষ্ণের লীলাভিত্তিক উৎসবকে হিন্দোল,
হিন্দোলা, ঝুলনোৎসব ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। বেনারস-মির্জাপুর অঞ্চলের
বৈষ্ণবরা রাধাকৃষ্ণের লীলা অবলম্বনে এই বর্ষা-উৎসবে পরিবেশেন করে থাকেন কাজরি
অঙ্গের নাচ ও গানের মাধ্যমে। পরে রাধাকৃষ্ণের লীলাভিত্তিক এই উৎসব ভারদের
অন্যান্য অঞ্চলের বৈষ্ণবদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এই সূত্রে অনেক অঞ্চলে কাজরি হয়ে উঠেছে বৈষ্ণব ধর্মাম্বলম্বীদের কাছে ভক্তিমার্গের
উৎসব বা নৃত্যগীতের ধারা। এই ধারা থেকে উদ্ভব হয়েছে রাধাকৃষ্ণের ঝুলন-উৎসব। এই উৎসবে
তমালের ডালে দোলনা বেঁধে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি স্থাপন করে মেয়েরা রাধাকৃ্ষ্ণের সখি
হিসেবে গান করে থাকে।
কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত 'হিন্দোল' গীতানুষ্ঠানের জন্য রচনা করেছিলেন,
কাজরি সুরাঙ্গে। তাই এই গানটিকে বলা যায়- একই সাথে কাজরি ও ঝুলনোৎসব বা হিন্দোলের
গান। এই গানে কাজরি শিল্পীরা মূলত তাঁদের উৎসবের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ-সঙ্গ পাওয়ার
অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের আসন্ন কাজরি অনুষ্ঠানে কৃষ্ণ তাঁর সাথীদের সাথে নিয়ে
প্রত্যক্ষভাবে আসবেনই এমন নয়। মূলত শ্রাবণের ঝুলনোৎসবের মাধ্যমে শিল্পীরা
শ্রীকৃষ্ণের লীলাকে অনুভব করবেন কল্পলোকে। ঝুলনোৎসব হয়ে উঠবে তাঁদের কাছে ভক্তি ও
প্রেমে কৃষ্ণের স্মরণোৎসব।
আগত শ্রাবণ মাসের আসন্ন হিন্দোলার আয়োজনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে 'স্ত্রী ও
পুরুষ' দ্বৈত চরিত্রের পরিবেশনায়। চরিত্রদ্বয় যেন পরস্পরকে দুষছেন এই
বলে- শ্রাবণ মাস এসে গেছে, ময়ূর ডাকছে, তবু কেন কদম শাখায় ঝুলনের দোলনা
বাঁধা হলো না। এ অবস্থায় ব্রজের কিশোর শ্যাম এসেও তাঁর গোপ-গোপীদের সাথে নিয়ে
ফিরে যাবেন।
পরক্ষণেই এই আক্ষেপ থেকে বেরিয়ে এসে- এঁরা অঙ্গীকার করছেন যে- তাঁরা দোলনা
বেঁধে শ্রাবণের মেঘের দিকে চেয়ে- শ্যাম ও তাঁর সঙ্গীদের অপেক্ষা থাকবেন, আর
কাজরি গান গেয়ে বনকে মাতিয়ে রাখবেন। তাঁরা মনে করেন, যখন শ্রাবণের বৃষ্টিধারা নামবে
টাপুর টুপুর শব্দে, তার সাথে তাঁরা শুনতে পাবেন শ্যাম কিশোরের পায়ের নূপূরের ধ্বনি।
এঁরা তাঁর চপল চাওয়া দেখবেন, বিজুলি জমকানো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট
(শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৫) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ২ মাস।
- রেকর্ড: টুইন [আগষ্ট
১৯৩৮ (শ্রাবণ-ভাদ্র ১৩৪৫) এফটি ১২৪৯০। শিল্পী: বীণা দত্ত ও ভক্তিরঞ্জন রায়, সুরকার: সুবল দাশগুপ্ত]
[শ্রবণ
নমুনা]
- বেতার:
হিন্দোলা
গীতানুষ্ঠান। কলকাতা বেতার কেন্দ্র-ক। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। [১৩ আগষ্ট ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (মঙ্গলবার
২৮ শ্রাবণ ১৩৪৭)] সন্ধা: ৮.০০-৮.৩৯।
-
গ্রন্থ:
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা
৩২৮। তাল: কাহারবা। পৃষ্ঠা: ১০২]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড।
প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। দ্বিতীয় গান।
[নমুনা]
-
সুরকার:
সুবল দাশগুপ্ত
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব-সঙ্গীত।
ঝুলনোৎসব
- সুরাঙ্গ: কাজরী
সূত্র:
- বেতারজগৎ। ১১শ বর্ষ, ১৫শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮৩৫
- The
Indian-listener
1940, Vol V, No 15. page 1181