বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম :
কে সাজালো মাকে আমার বিসর্জনের বিদায় সাজে
কে সাজালো মাকে আমার বিসর্জনের বিদায়
সাজে
আজ সারাদিন কেন এমন করুণ সুরে বাঁশি
বাজে॥
আনন্দেরি প্রতিমাকে হায়, বিদায় দিতে
পরান নাহি চায়
মা-কে ভাসিয়ে জলে কেমন ক’রে রইব আঁধার
ভবন মাঝে॥
মা’র আগমনে বেজেছিল প্রাণে নূতন আশার বাঁশি
দুঃখ শোক ভয় ভুলেছিলাম দেখে মা অভয়ার
মুখের হাসি।
মা দশ হাতে আনন্দ এনেছিল, বিশ হাতে আজ
দুঃখ ব্যথা দিল
মা মৃন্ময়ীকে ভাসিয়ে জলে, পাব চিন্ময়ীকে বুকের মাঝে॥
-
ভাবসন্ধান: বাৎসরিক দূর্গা পূজার অবসান হয় মাতৃরূপিণী দুর্গার বিসর্জনের
মাধ্যমে। দেবীপক্ষের মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে
এই পূজা হয়ে ওঠে ভক্তি ও আনন্দের মহোৎসব। তাই বিজয়াদশমীতে দেবীর বিসর্জন ভক্তদের
কাছে হয়ে ওঠে মাতৃরূপিণী মৃন্ময়ী দুর্গা এবং দুর্গোৎসবের বিদায়ের মিশ্র
আবেগাশ্রিত বেদনাবিধুর অনুভব। দুর্গাপূজার সূত্রে দেবীর আগমন এবং যথাচারে তাঁর
পূজার ভক্তি ও আনন্দে মিশ্রিত উৎসবে ভক্তরা ভুলে থাকেন যাপিত জীবনের সকল দুঃখ-ভয়।
তাই দেবীর বিদায়ী সাজ, বাঁশীর সুরে বাদিত বিদায়ের বেদনাবিধূর করুণ ধ্বনি ভক্তের
কাছে হয়ে ওঠে অসহনীয়। সেই বেদনবিধূর অভিব্যক্তিই দিয়েই এই গানের শুরু।
এই পূজার আনন্দের উৎস ছিল মাতৃরূপিণী আনন্দরূপিণী কল্যাণরূপিণী দেবীপ্রতিমা।
তাঁর বিদায়ে ভক্তের মনের ঘর শূন্য হয়ে যাবে, আলোকিত আনন্দ বিসর্জিত হয়ে সে ঘর
হয়ে ঊঠবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেই আনন্দ-প্রতিমাকে বিসর্জন দিয়ে শূন্য অন্ধকার
কিভাবে ভক্ত থাকবেন, এই অন্তহীন অসীম বেদনা তাঁকে পীড়িত করে চলে অবিরত। তাই
তাঁর এই হাহাকার।
মাতৃরূপিণী এই দেবীর আগমনে ভক্তদের দুঃখপীড়িত জীবনস্রোতে জেগেছিল আনন্দের
জো্য়ার। প্রতিমার অভয় রূপ দেখে ভক্তের মনে জেগে উঠেছিল দুঃখ-শোক-ভয়-মুক্ত
জীবনের নতুন আশার আশ্বাস। দশভুজা মা তাঁর দশ হাতে এনেছিলেন যে আনন্দধারা,
তাঁর বিদায়ের বেদনা দ্বিগুণ (বিশ হাত) হয়ে বিষণ্ণ করে তুলেছে ভক্তের হৃদয়কে।
সবেশেষে কবি নিজেকে প্রবোধ দিয়েছে এই বলে- মৃন্ময়ী দেবীর বিসর্জন দিলেও চিন্ময়ী
হয়ে তিনি সর্বদা বিরাজ করবেন মনের গভীরে।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৩৭
খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৪) মাসে,
টুইন রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। সময় নজরুলের বয়স ছিল
৩৮ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত
সংগ্রহ,
[নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৭৪৭ সংখ্যক গান।
- রেকর্ড: টুইন।
অক্টোবর ১৯৩৭ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৪)।এফটি
১২১২৮। শিল্পী: বাঙলার ভাইবোন। সুর গিরীন চক্রবর্তী
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সেলিনা হোসেন
[একবিংশ খণ্ড,
নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা] অষ্টম গান। [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দূর্গাপূজা।
বিসর্জন
- সুরাঙ্গ: স্বকীয়
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: সা