ভাঙার গান
কাজীনজরুল ইসলাম

                

ল্যাবেন্ডিশ* বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত
 
কোরাস্:     কে বলে মোদেরে ল্যাডাগ্যাপচার? আমরা সিভিল গাড়,
                অরাজক এই ভারত-মাঠে হে আমরা উদ্‌মো ষাঁড়�
 
                 মোরা     লাঙল জোয়াল দড়াদড়ি-ছাড়া,
                             বড় সুখে তাই দিই শিং-নাড়া,
                             অসহ-যোগীও করিবে না তাড়া রে-
ওরে     ভয় নাই, ওরা বৈষ্ণব বাঘ, খাবে না মোদের হাড়!
চলো     ব্যাং-বীর, বলো ঠ্যাং নেড়ে জোর, ছেডেডে ডেডেং হার্‌র্!
কোরাস্:     কে বলে ইত্যাদি-

                মোরা গলদঘর্ম যদিও গলিয়া,
                বড়         বেজুত করেছে লেজুড় ডলিয়া,
                তবু         গলদ করো না বলদ বলিয়া হে,
মোরা         বড় দরকারি সরকারি গরু, তরকারি নহি তার!
তবে           গতিক দেখিয়া অধিক না গিয়া সটান পগার পার!
কোরাস্:      কে বলে ইত্যাদি-
                আজ          গোবরগণেশ গোবরমন্ত
                                ল্যাজে ও গোবরে খিঁচেন দন্ত,
                                তবু করুণার নাহিকো অন্ত হে,
যত     মামাদের কড়ি ধামা-ধরে দিয়া আমাদেরি ভাঙে ঘাড়!
আর     বাবাদেরে বেঁধে ঠ্যাঙাতে মোরাই কেটে দি বাঁশের ঝাড়।
কোরাস্:     কে বলে ইত্যাদি-
                হয়ে         ইভিলের গুরু ডেভিল পশুর-
                              সিভিল-বাহিনী, কি এত কসুর
                              করেছি মাইরি? বলো তো শ্বশুর হে!
ঐ             রাঙামুখে বাবা অন্ন দি তুলি নিজে খাই জোলো মাড়,
তবু           সেলাম ঠুকিতে মলাম বাবা গো বক্র মাজা ও ঘাড়!
কোরাস্:     কে বলে ইত্যাদি-
 
                বহে         কালাতে ধলাতে গঙ্গা-যমুনা,
                              আমরা তাহারি দিব্যি নমুনা,
                              এ-রীতি পিরীতি বুঝিবে কভু না হে,
তাই         কালামুখ প্রেমে আলা করি হাঁকি-‘তাড়্‌রে নেটিভ্ তাড়্’!
তবে         কোপন-স্বভাব দেখিলে অমনি গোপন খাম্বা-আড়!
কোরাস্:    কে বলে ইত্যাদি-

                এবে         কাঁপিবে মেদিনী শত উৎপাতে
                               চিৎপটাং সে কত ‘ফুট্‌পাথে’
                হবে          আমাদেরি ভীম কোঁৎকাতে হে!
তবে          পরোয়া কি দাদা? ক্যাঁকড়ার সম নিসপিস নাড়ো দাঁড়,
যদি           নিশ্চল হাতে পিস্তল কাঁপে তবু গোঁফে দাও চাড়।
কোরাস্:     কে বলে ইত্যাদি-
                বাবা!         যদিও এ-দেহ ঝুনো ঠনঠন
                                তবু লোকে ভাবে ঠুঁটো পল্টন।
                আরে         ঘোড়া নাই? বাস্, পায়ে হন্টন হে!
বাজে         করতাল-আজ হরতাল। ডাকে আত্মা যে খাঁচা ছাড়্!
ওরে          ‘ওয়ান্ পেস্ স্টেপ্ ফরওয়ার্ড মার্চ, থুড়ি থুড়ি ব্যাক্‌ওয়ার্ড্।'

* কলকাতার এক জাতীয় সিপাই


রচনা ও প্রকাশকাল:
গানটির সুনির্দিষ্ট রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় নি।  ধূমকেতু পত্রিকার ১১ আগষ্ট ১৯২২ (শুক্রবার, ২৬ শ্রাবণ ১৩২৯) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।