ভাঙার গান
কাজী নজরুল ইসলাম

              

সুপার (জেলের) বন্দনা
 
তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে, তুমি ধন্য ধন্য হে।
আমার এ গান তোমারি ধ্যান, তুমি ধন্য ধন্য হে॥
 
রেখেছে সান্ত্রী পাহারা দোরে
আঁধার-কক্ষে জামাই-আদরে
বেঁধেছ শিকল-প্রণয়-ডোরে।
                    তুমি ধন্য ধন্য হে॥
আ-কাঁড়া চালের অন্ন-লবণ
করেছে আমার রসনা-লোভন,
বুড়ো ডাটা-ঘাঁটা লাপসি শোভন,
                    তুমি ধন্য ধন্য হে॥
ধরো ধরো খুড়ো চপেটা মুষ্টি,
খেয়ে গয়া পাবে সোজা স-গুষ্টি,
ওল-ছোলা দেহ ধবল-কুষ্টি
                    তুমি ধন্য ধন্য হে॥


রচনা ও প্রকাশকাল:
গানটির সুনির্দিষ্ট রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় নি। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩১ বঙ্গাব্দ) নজরুল 'ধূমকেতু' পত্রিকার মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী রচনা প্রচার করেন। এই কারণে ২৩শে নভেম্বর কুমিল্লা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে, কলকাতার কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি নজরলকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৭ই জানুয়ারি নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। এরপর ১৪ই এপ্রিল তাঁকে পাঠানো হয়েছিল হুগলি জেলে। এই জেলে নজরুল-সহ সকল রাজবন্দীদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছিল। হুগলি জেলে থাকাকালে জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ  ও নির্যাতনের পরিমাণ এতটাই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত ১৫ই এপ্রিল থেকে নজরুল-সহ মোট ২১জন রাজবন্দী অনশন শুরু করেন। পরে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে বিরজাসুন্দরী দেবী এসে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন। ১৮ই জুন তাঁকে বহরমপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়।

ভাঙার গান  কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই গানের পাদটীকায় উল্লেখ আছে - 'হুগলি জেলে থাকাকালীন জেলের সকল প্রকার ুলুম আমাদের ওপর দিয়ে পরখ ক'রে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জেলের মূর্ত্তিমান 'জুলুম' বড়-কর্তাকে দেখে এই গান গেয়ে আমতা অভিনন্দন কর্‌তাম। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- অনশনের কারণে নজরুল ২৫শে মের দিকে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ধারণা করা যায় গানটি তিনি রচনা করেছিলেন  ১৪ই এপ্রিল থেকে ২৫শে এপ্রিলের ভিতরে।