ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


বিবিধ প্রসঙ্গ

মনের বাগানবাড়ি

 


    ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ নহে। ভালোবাসা অর্থে, নিজের যাহা কিছু ভালো তাহাই সমর্পণ করা। হৃদয়ে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা নহে; হৃদয়ের যেখানে দেবত্রভূমি, যেখানে মন্দির, সেইখানে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা।
    যাহাকে তুমি ভালোবাস তাহাকে ফুল দাও, কাঁটা দিও না; তোমার হৃদয়-সরোবরের পদ্ম দাও, পঙ্ক দিও না। হাসির হীরা দাও, অশ্রুর মুক্তা দাও; হাসির বিদ্যুৎ দিও না, অশ্রুর বাদল দিও না। প্রেম হৃদয়ের সারভাগ মাত্র। হৃদয় মন্থন করিয়া যে অমৃতটুকু উঠে তাহাই। ইহা দেবতাদিগের ভোগ্য। অসুর আসিয়া খায়, কিন্তু তাহাকে দেবতার ছদ্মবেশে খাইতে হয়। যাহাকে তুমি দেবতা বলিয়া জান তাহাকেই তুমি অমৃত দাও, যাহাকে দেবতা বলিয়া বোধ হইতেছে তাহাকেই অমৃত দাও। কিন্তু এমন মহাদেব সংসারে আছেন, যিনি দেবতা বটেন কিন্তু যাঁহার ভাগ্যে অমৃত জুটে নাই, সংসারের সমস্ত বিষ তাঁহাকে পান করিতে হইয়াছে— আবার এমন রাহুও আছে যে অমৃত খাইয়া থাকে।
    যাঁহাকে তুমি ভালোবাস তাঁহাকে তোমার হৃদয়ের সমস্তটা দেখাইও না। যেখানে তোমার হৃদয়ের পয়ঃপ্রণালী, যেখানে আবর্জনা, যেখানে জঞ্জাল, সেখানে তাঁহাকে লইয়া যাইও না; তাহা যদি পার' তবে আর তোমার কিসের ভালোবাসা! তাঁহাকে তোমার হৃদয়ের এমন অঞ্চলের ডিষ্ট্রিক্ট্‌ জজ করিবে যেখানে ম্যালেরিয়া নাই, ওলাউঠা নাই, বসন্ত নাই। তাঁহাকে যে বাড়ি দিবে তাহার দক্ষিণ দিকে খোলা, বাতাস আনাগোনা করে, বড় বড় ঘর, সূর্য্যের আলোক প্রবেশ করে। ইহা যে করে সেই যথার্থ ভালোবাসে। এমন স্বার্থপর প্রণয়ী বোধ করি নাই যে মনে করে তাহার প্রণয়ীকে তাহার হৃদয়ের সমস্ত বাঁশঝাড়ে ঘুরাইয়া, সমস্ত পচাপুকুরে স্নান করাইয়া, না বেড়াইলে যথার্থ ভালোবাসা হয় না। অনেকের মত তাহাই বটে, কিন্তু সঙ্কোচে পারিয়া উঠে না। এ বড় অপূর্ব্ব মত।
    অনেকে বলিয়া উঠিবেন, "এ কিরকম কথা; যাঁহাকে তুমি খুব ভালোবাস, যাঁহাকে নিতান্ত আত্মীয় মনে করা যায়, তাঁহার নিকটে মনের কোন ভাগ গোপন করা কি উচিত?" উচিত নহে ত কি? সর্ব্বাপেক্ষা আত্মীয় "নিজের" নিকটে স্বভাবতঃ অনেকটা গোপন করিতে হয়। না করিলে চলে না, না করিলে মঙ্গল নাই। প্রকৃতি যাহাদের চক্ষে পাতা দেন নাই, যাহারা আবশ্যকমত চোখ বুজিতে পারে না, মনে যাহা কিছু আসে, যে অবস্থাতেই আসে, তাহাদের কুম্ভীরচক্ষে পড়িবেই, তাহাদের পক্ষে অত্যন্ত দুর্দশা। আমরা অনেক মনোভাব ভাল কয়িয়া চাহিয়া দেখি না, চোখ বুজিয়া যাই। এরূপ করিলে সে ভাবগুলিকে উপেক্ষা করা হয়, অনাদর করা হয়। ক্রমে তাহারা ম্রিয়মাণ হইয়া পড়ে। এই ভাবগুলি প্রবৃত্তিগুলি যদি ঢাকিয়া রাখা না যায়— পরস্পরের কাছে প্রকাশ করিয়া, বৈঠকখানার মধ্যে, কথাবার্ত্তার মধ্যে তাহাদের ডাকিয়া আনা হয়— তাহাদের সহিত বিশেষ চেনাশুনা হইয়া যায়— তাহাদের কদর্য্য মূর্ত্তি এমন সহিয়া যায় যে আর খারাপ লাগে না— সে কি ভালো? ইহাতে কি তাহাদের অত্যন্ত আস্কারা দেওয়া হয় না? একে ত যাহাকে ভালোবাসি তাহাকে ভাল জিনিষ দিতে ইচ্ছা করে, দ্বিতীয়তঃ তাহাকে মন্দ জিনিষ দিলে মন্দ জিনিষের দর অত্যন্ত বাড়াইয়া দেওয়া হয়। তাহা ছাড়া বিষ দেওয়া, রোগ দেওয়া, প্রহার দেওয়াকে কি দাতাবৃত্তি বলে?
    দোকানে-হাটে রাস্তায়-ঘাটে যাহাদের সঙ্গে আমাদের সচরাচর দেখাশুনা হয়, তাহাদের সঙ্গে আমাদের নানান কাজের সম্বন্ধ। তাহাদের সঙ্গে আমাদের নানা সাংসারিক ভাবের আদান প্রদান চলে। পরস্পরে দেখাশুনা হইলে, হয় কথাই হয় না, নয় অতি তুচ্ছ বিষয়ে কথা হয়, নয় কাজের কথা চলে। ইহারা ত সাধারণ মনুষ্য। কিন্তু এমন এক এক জনকে আমার চোখের সামনে আমার মনের প্রতিবেশী করিয়া রাখা উচিত, যে আমার আদর্শ মনুষ্য। সে যে সত্যকার আদর্শ মনুষ্য এমন না হইতে পারে; তাহার মনে যতটুকু আদর্শভাব সেইটুকু সে আমার কাছে প্রকাশ করিয়াছে । তাহার সঙ্গে আমার অন্য কোন কাজকর্ম্মের সম্পর্ক নাই, কেনা বেচার সম্বন্ধ নাই, দলিল দস্তাবেজের আত্মীয়তা নাই। আমি তাহার নিকট আদর্শ, সে আমার নিকট আদর্শ। আমার মনের বাগান-বাড়ি তাহার জন্য ছাড়িয়া দিয়াছি, সে তাহার বাগানটি আমার জন্য রাখিয়াছে। এ বাগানের কাছে কদর্য কিছুই নাই, দুর্গন্ধ কিছুই নাই। পরস্পরের উচিত, যাহাতে নিজের নিজের বাগান পরস্পরের নিকট রমণীয় হয় তাহার জন্য চেষ্টা করা। যত ফুলগাছ রোপণ করা যায়, যত কাঁটা-গাছ উপড়াইয়া ফেলা হয়, ততই ভাল। এত বাণিজ্য ব্যবসায় বাড়িতেছে, এত কলকারখানা স্থাপিত হইতেছে, যে, গাছপালা-ফুলে-ভরা হাওয়া খাইবার জমি কমিয়া আসিতেছে। এই নিমিত্ত তোমার মনের এক অংশে গাছপালা রোপণ করিয়া রাখিয়া দেওয়া উচিত, যাহাতে তোমার প্রিয়তম তোমার মনের মধ্যে আসিয়া মাঝে মাঝে হাওয়া খাইয়া যাইতে পারেন। সে স্থানে অস্বাস্থ্যজনক দূষিত কিছু না থাকে যেন, যদি থাকে তাহা আবৃত করিয়া রাখিও।
    সত্যকার আদর্শ লোক সংসারে পাওয়া দুঃসাধ্য। ভালবাসার একটি মহান্‌ গুণ এই যে, সে প্রত্যেককে নিদেন এক জনের নিকটেও আদর্শ করিয়া তুলে। এইরূপে সংসারে আদর্শ ভাবের চর্চ্চা হইতে থাকে। ভালবাসার খাতিরে লোককে মনের মধ্যে ফুলের গাছ রোপণ করিতে হয়, ইহাতে তাহার নিজের মনের স্বাস্থ্য-সম্পাদন হয়, আর তাহার মনোবিহারী বন্ধুর স্বাস্থ্যের পক্ষেও ইহা অত্যন্ত উপযোগী। নিজের মনের সর্ব্বাপেক্ষা ভালো জমিটুকু অন্যকে দেওয়ায়, ভালোবাসা ছাড়া অমন আর কে করিতে পারে? তাই বলিতেছি ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ করা নহে, ভালোবাসা অর্থে ভাল বাসা, অর্থাৎ অন্যকে ভালো বাসস্থান দেওয়া, অন্যকে মনের সর্ব্বাপেক্ষা ভালো জায়গায় স্থাপন করা। যাঁহাদের হৃদয়কাননের ফুল শুকাইয়াছে, ফুলগাছ মরিয়া গিয়াছে, চারি দিকে কাঁটাগাছ জন্মিয়াছে, এমন সকল অনুর্ব্বরহৃদয় বিজ্ঞ বৃদ্ধেরাই ভালোবাসার নিন্দা করেন।


গরীব হইবার সামর্থ্য


    অনেকের গরীব-মানুষি করিবার সামর্থ্য নাই। এত তাহাদের টাকা নাই যে, গরীব-মানুষি করিয়া উঠিতে পারে। আমার মনের এক সাধ আছে যে, এত বড় মানুষ হইতে পারি যে, অসঙ্কোচে গরীব- মানুষি করিয়া লইতে পারি! এখনো এত গরীব মানুষ আছি যে গিল্টি করা বোতাম পরিতে হয়, কবে এত টাকা হইবে যে সত্যকার পিতলের বোতাম পরিতে সাহস হইবে! এখনো আমার রূপার এত অভাব যে অন্যের সমুখে রূপার থালায় ভাত না খাইলে লজ্জায় মরিয়া যাইতে হয়। এখনো আমার স্ত্রী কোথাও নিমন্ত্রণ খাইতে গেলে তাহার গায়ে আমার জমিদারীর অর্দ্ধেক আয় বাঁধিয়া দিতে হয়! আমার বিশ্বাস ছিল রাজশ্রী ক বাহাদুর খুব বড়-মানুষ লোক। সে দিন তাঁহার বাড়িতে গিয়াছিলাম, দেখিলাম তিনি নিজে গদীর উপরে বসেন ও অভ্যাগতদিগকে নীচে বসান, তখন জানিতে পারিলাম যে তাঁহার গরীব-মানুষি করিবার মত সম্পত্তি নাই। এখন আমাকে যেই বলে যে, ক রায়-বাহাদুর মস্ত বড়মানুষ লোক, আমি তাহাকেই বলি, "সে কেমন করিয়া হইবে? তাহা হইলে তিনি গদীর উপর বসেন কেন?" উপার্জ্জন করিতে করিতে বুড়া হইয়া গেলাম, অনেক টাকা করিয়াছি, কিন্তু এখনো এত বড়মানুষ হইতে পারিলাম না যে আমি বড়মানুষ এ কথা একেবারে ভুলিয়া যাইতে পারিলাম। সর্বদাই মনে হয় আমি বড়মানুষ। কাজেই আংটি পরিতে হয়, কেহ যদি আমাকে রাজাবাহাদুর না বলিয়া বাবু বলে, তবেই চোক রাঙাইয়া উঠিতে হয়। যে ব্যক্তি অতি সহজে খাবার হজম করিয়া ফেলিতে পারে, যাহার জীর্ণ খাদ্য অতি নিঃশব্দে নিরুপদ্রবে শরীরের রক্ত নির্ম্মাণ করে, সে ব্যক্তির চব্বিশ ঘণ্টা 'আহার করিয়াছি' বলিয়া একটা চেতনা থাকে না। কিন্তু যে হজম করিতে পারে না, যাহার পেট ভার হইয়া থাকে, পেট কামড়াইতে থাকে, সে প্রতি মুহূর্ত্তে জানিতে পারে যে, হাঁ, আহার করিয়াছি বটে। অনেকের টাকা আছে বটে, কিন্তু নিঃশব্দে টাকা হজম করিতে পারে না, পরিপাকশক্তি নাই— ইহাদের কি আর বড়মানুষ বলে! ইহাদের বড়মানুষি করিবার প্রতিভা নাই। ইহারা ঘরে ছবি টাঙ্গায় পরকে দেখাইবার জন্য; শিল্পসৌন্দর্য্য উপভোগ করিবার ক্ষমতা নাই, এই জন্য ঘরটাকে একেবারে ছবির দোকান করিয়া তুলে। ইহারা গণ্ডা গণ্ডা গাহিয়ে বাজিয়ে নিযুক্ত রাখে, পাড়াপ্রতিবেশীদের কানে তালা লাগাইয়া দেয়, অথচ যথার্থ গান বাজনা উপভোগ করিবার ক্ষমতা নাই। এই সকল চিনির বলদদিগকে প্রকৃতি গরীব মনুষ্য করিয়া গড়িয়াছেন। কেবল কতকগুলা জমিদারী ও টাকার থলিতে বেচারাদিগকে বড়মানুষ করিবে কি করিয়া?



কিন্তু-ওয়ালা


    বড়মানুষির কথা হইতে আরেক কথা মনে পড়িয়াছে। যে ব্যক্তি স্বভাবত বড়মানুষ সেই ব্যক্তি যে বিনয়ী হইয়া থাকে এ কথা পুরানো হইয়া গিয়াছে। কালিদাস বলিয়াছেন, অনেক জল থাকিলে মেঘ নামিয়া আসে,অনেক ফল ফলিলে গাছ নুইয়া পড়ে। গল্প আছে, নিউটন বলিয়াছেন তিনি জ্ঞানসমুদ্রের ধারে নুড়ি কুড়াইয়াছেন। নিউটন নাকি বিশেষ বড়মানুষ লোক, তিনি ছাড়া এ কথা যে-সে লোকের মুখে আসিত না, গলায় বাঁধিয়া যাইত। অতএব দেখা যাইতেছে যাহারা স্বভাবতঃ গরীব, প্রায় তাহারা অহংকারী হইয়া থাকে। ইহাও সহ্য হয়, কিন্তু এমন গরীবও আছে যাহারা প্রাণ খুলিয়া পরের প্রশংসা করিতে পারে না। প্রকৃতি সে ক্ষমতা তাহাদের দেন নাই। এমন লোক সংসারে পদে পদে দেখা যায়। এরূপ স্বভাব কাহাদের হয়? সকলে যদি তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়া দেখেন, তবে দেখিতে পাইবেন— যাহারা স্বাভাবিক অহঙ্কারী অথচ নিজের এমন কিছু নাই যাহা লইয়া নাড়াচাড়া করিতে পারে, তাহারাই এইরূপ করিয়া থাকে। একটা ভালো কবিতাপুস্তক দেখিয়াই তাহাদের মনে হয় 'আমিও এইরূপ লিখিতে পারি', অথচ তাহারা কোনো জন্মে কবিতা লিখে নাই। অহঙ্কার করিবার কিছুই খুঁজিয়া পাইতেছে না, অথচ প্রশংসা করাও দায় হইয়া পড়িয়াছে। সে বলিতে চায়, এ কবিতাটি বেশ হইয়াছে, কিন্তু ইহার চেয়েও ভালো কবিতা একটি আছে, অর্থাৎ সে কবিতাটি এখনো লেখা হয় নাই, কিন্তু লেখা যাইতেও পারে। ভালো কবিতাটি বাহির করিতে পারে না নাকি, সেই জন্য তাহার গায়ের জ্বালা ধরে। সুতরাং প্রশংসার মধ্যে একটা হুলবিশিষ্ট 'কিন্তু'র কীট না রাখিয়া থাকিতে পারে না। একটা যে বিকটাকার 'কিন্তু' রাহু তাহার সকল প্রশংসাটাই গ্রাস করিয়া থাকে, সে রাহুটি আর কেহ নহে, সে তাহার অঙ্গহীন 'আমি', তাহার অপরিতৃপ্ত ক্ষুধিত অহঙ্কার। সে দৈত্য, তাহার প্রশংসাসুধা খাইবার অধিকার নাই, এই জন্য সকল সুধাকর চাঁদকে মলিন না করিয়া থাকিতে পারে না। তাহার নিজের জ্ঞান আছে সে একটা মস্ত লোক, অথচ প্রমাণ দিয়া অপরকে তাহা বুঝাইতে পারিতেছে না, সুতরাং সে সকলের যশকেই অসম্পূর্ণ রাখিয়া দেয়। সে মনে করে, 'আমার ভাবী যশের জন্য অথবা ন্যায্য যশের জন্য অনেকটা জায়গা করিয়া রাখা উচিত। আমি ত নিজে কোনো যশের কাজ করিতে পারি নাই, অন্যের কোনো কাজকেই যখন খাতিরেই আনি না, তখন লোকদের বুঝা উচিত যে, হাতে-কলমে যদি কাজে প্রবৃত্ত হই তবে না জানি কি কারখানাই হয়!' সে মনে করে যে, সেই ভাবী সম্ভাবিত যশের জন্য একটা সিংহাসন প্রস্তুত করিয়া রাখা উচিত, অন্যান্য সকলের যশের রত্নঙ্গলি ভাঙ্গিয়া এই সিংহাসনটি প্রস্তুত করা আবশ্যক। 'কিন্তু'-নামক অস্ত্র দিয়া সকলের যশ হইতে রত্নগুলি ভাঙ্গিয়া ইহারা রাখিয়া দেয়। আহা, এ বেচারীরা কি অসুখী! ইহাদের এ রোগ নিবারণ হয়, যদি সত্য সত্য ন্যায্য উপায়ে ইহারা যশ উপার্জন করিতে পারে। ইহাদের এমন স্বভাব নাই যে পরের প্রশংসা করিতে পারে, এমন শিক্ষা নাই যে পরের প্রশংসা করিতে পারে, এমন সম্বল নাই যে পরের প্রশংসা করিতে পারে— যে দিকে চাহি সেই দিকেই দারিদ্র্য। অনেক বড়মানুষ অহঙ্কারী আছে যাহাদের পরের প্রশংসা করিবার মত সম্বল আছে, কিন্তু এমন হতভাগ্য দরিদ্র অহঙ্কারী আছে যে নিজের অহঙ্কার করিতেও পারে না আবার পরের প্রশংসা করিতেও পারে না। ইহাদের 'কিন্তু'-পীড়িত প্রশংসাতে কেহ যেন ব্যথিত না হন, কারণ ইহাতে তাহাদেরই দারিদ্র্য প্রকাশ করে। এই 'কিন্তু'গুলি তাহাদেরই ভিক্ষার ঝুলি। বেচারী যশ উপার্জন করিতে পারে নাই, এই নিমিত্ত তোমার উপার্জিত যশ হইতে কিছু অংশ চায়,তাই 'কিন্তু'-র ভিক্ষার ঝুলি পাতিয়াছে।