ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

               ছায়া
আঁখি চাহে তব মুখ-পানে,
তোমারে জেনেও নাহি জানে ।
      কিসের নিবিড় ছায়া
      নিয়েছে স্বপনকায়া
তোমার মর্মের মাঝখানে ।
 

হাসি কাঁপে অধরের শেষে
দূরতর অশ্রুর আবেশে ।
   বসন্তকূজিত রাতে
   তোমার বাণীর সাথে
অশ্রুত কাহার বাণী মেশে ।

মনে তব গুপ্ত কোন্‌ নীড়ে
অব্যক্ত ভাবনা এসে ভিড়ে ।
     বসন্তপঞ্চম রাগে
     বিচ্ছেদের ব্যথা লাগে
সুগভীর ভৈরবীর মিড়ে ।

তোমার শ্রাবণপূর্ণিমাতে
বাদল রয়েছে সাথে সাথে ।
    হে করুণ ইন্দ্রধনু,
    তোমার মানসী তনু
জন্ম নিল আলোতে ছায়াতে ।

অদৃশ্যের বরণের ডালা,
প্রচ্ছন্ন প্রদীপ তাহে জ্বালা ।
      মিলন নিকুঞ্জতলে
      দিয়েছ আমার গলে
বিরহের সূত্রে গাঁথা মালা ।

তব দানে ওগো আনমনা,
দিয়ো মোরে তোমার বেদনা ।
     যে বন কুয়াশা-ছাওয়া
     ঝরা ফুল সেথা পাওয়া,
থাক্‌ তাহে শিশিরের কণা ।

৫ ভাদ্র ১৩৩৫


            বাসরঘর
     তোমারে ছাড়িয়া যেতে হবে
             রাত্রি যবে
উঠিবে উন্মনা হয়ে প্রভাতের রথচক্ররবে ।
      হায় রে বাসরঘর,
বিরাট বাহির সে যে বিচ্ছেদের দস্যু ভয়ংকর ।
      তবু সে যতই ভাঙেচোরে
মালাবদলের হার যত দেয় ছিন্ন ছিন্ন করে,
     তুমি আছ ক্ষয়হীন
            অনুদিন ;
                তোমার উৎসব
বিচ্ছিন্ন না হয় কভু, না হয় নীরব ।
কে বলে তোমারে ছেড়ে গিয়েছে যুগল
      শূন্য করি তব শয্যাতল ।
      যায় নাই, যায় নাই,
নব নব যাত্রীমাঝে ফিরে ফিরে আসিছে তারাই
         তোমার আহ্বানে
     উদার তোমার দ্বার-পানে ।
            হে বাসরঘর,
বিশ্বে প্রেম মৃত্যুহীন, তুমিও অমর ।

 

[বাঙ্গালোর
আষাঢ় ১৩৩৫]


              বিচ্ছেদ
রাত্রি যবে সাঙ্গ হল , দূরে চলিবারে
        দাঁড়াইলে দ্বারে ।
    আমার কণ্ঠের যত গান
           করিলাম দান ।
            তুমি হাসি
মোর হাতে দিলে তব বিরহের বাঁশি ।
         তার পরদিন হতে
              বসন্তে শরতে
         আকাশে বাতাসে উঠে খেদ ,
কেঁদে কেঁদে ফিরে বিশ্বে বাঁশি আর গানের বিচ্ছেদ ।
 

বাঙ্গালোর
আষাঢ় ১৩৩৫