ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

                দিনান্তে
বাহিরে তুমি নিলে না মোরে, দিবস গেল বয়ে,
              তাহাতে মোর যা হয় হোক ক্ষতি,
অন্তরে যা দিবার ছিল মিলিছে এক হয়ে,
              চরণে তব গোপনে তার গতি ।
লুকায়ে ছিল ছায়াতে ফুল, ভরিল তব ডালি,
গন্ধভরা বন্দনাতে দিয়েছি ধূপ জ্বালি,
প্রদীপ ছিল মলিনশিখা, ধোঁয়াতে ছিল কালি,
              দীপ্ত হয়ে উঠিছে তার জ্যোতি ।
বাহির হতে না যদি লও পূজার এই ডালি
              চরণে তব গোপনে তার গতি ।

নাহয় তুমি ওপারে থাকো, এপারে আমি থাকি
                নীরব এই নীরস মরুতীরে,
অন্ধকারে সন্ধ্যাতারা নয়নে দেয় আঁকি
               সুদূর তব উদার আঁখিটিরে ।
ব্যথায় মম তোমারি ছায়া পড়িছে মোর প্রাণে,
বিরহ হানি তোমারি বাণী মিলিছে মোর গানে,
অলখ স্রোতে ভাবনা ধায় তোমার তটপানে
              এপার হতে বহিয়া মোর নতি ।
যে বীণা তব মন্দিরেতে বাজে নি তানে তানে
              চরণে তব নীরবে তার গতি ।

 

আম্বোয়াজ

১ শ্রাবণ ১৩৩৪


             অবশেষে
বাহির-পথে বিবাগী হিয়া
         কিসের খোঁজে গেলি,
    আয় রে ফিরে আয় ।
পুরানো ঘরে দুয়ার দিয়া
         ছেঁড়া আসন মেলি
   বসিবি নিরালায় ।
সারাটা বেলা সাগর-ধারে
      কুড়ালি যত নুড়ি,
নানারঙের শামুক-ভারে
     বোঝাই হল ঝুড়ি,
লবণ-পারাবারের পারে
        প্রখর তাপে পুড়ি
    মরিলি পিপাসায় ;
ঢেউয়ের দোল তুলিল রোল
      অকূলতল জুড়ি,
কহিল বাণী কী জানি কী ভাষায় ।
      আয় রে ফিরে আয় ।

বিরাম হল আরামহীন
       যদি রে তোর ঘরে,
   না যদি রয় সাথি,
সন্ধ্যা যদি তন্দ্রালীন
         মৌন অনাদরে,
    না যদি জ্বালে বাতি ;
তবু তো আছে আঁধার কোণে
          ধ্যানের ধনগুলি,
একেলা বসি আপনমনে
      মুছিবি তার ধূলি,
গাঁথিবি তারে রতনহারে
        বুকেতে নিবি তুলি

    মধুর বেদনায় ।
কাননবীথি ফুলের রীতি
    নাহয় গেছে ভুলি,
তারকা আছে গগন-কিনারায় ।
    আয় রে ফিরে আয় ।
 

শান্তিনিকেতন

২৯ শ্রাবণ ১৩৩৪