ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

             দূত
     ছিনু আমি বিষাদে মগনা
            অন্যমনা
     তোমার বিচ্ছেদ-অন্ধকারে ।
     হেনকালে নির্জন কুটিরদ্বারে
          অকস্মাৎ
     কে করিল করাঘাত,
কহিল গম্ভীর কণ্ঠে, অতিথি এসেছি, দ্বার-খোলো ।

             মনে হল
    ওই যেন তোমারি স্বর শুনি,
    ওই যেন দক্ষিণবায়ু দূরে ফেলি মদির ফাল্‌গুনী
           দিগন্তে আসিল পূর্বদ্বারে,
    পাঠালো নির্ঘোষ তার বজ্রধ্বনিমন্দ্রিত মল্লারে ।
          কেঁপেছিল বক্ষতল
       বিলম্ব করি নি তবু অর্ধ পল ।

     মুহূর্তে মুছিনু অশ্রুবারি,
          বিরহিণী নারী,
    ছাড়িনু ধেয়ান তব তোমারি সম্মানে,
         ছুটে গেনু দ্বার-পানে ।
    শুধালেম, তুমি দূত কার ।
  সে কহিল, আমি তো সবার ।
যে ঘরে তোমার শয্যা একদিন পেতেছি আদরে
        ডাকিলাম তারে সেই ঘরে ।
             আনিলাম অর্ঘ্যথালি,
                   দীপ দিনু জ্বালি ।
       দেখিলাম বাঁধা তারি ভালে
যে মালা পরায়েছিনু তোমারেই বিদায়ের কালে ।

[কলিকাতা]

২০ অগস্ট ১৯২৮