ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

       মুক্তি
ভোরের পাখি নবীন আঁখিদুটি
      পুরানো মোর স্বপনডোর
           ছিঁড়িল কুটিকুটি ।
      রুদ্ধ মন গগনে গেল খুলি,
   বিজুলি হানি দৈববাণী
         বক্ষে উঠে দুলি ।
   ঘাসের ছোঁওয়া তৃণশয়নছায়ে
মাটির যেন মর্মকথা বুলায়ে দিল গায়ে ;
   আমের বোল, ঝাউয়ের দোল,
         ঢেউয়ের লুটোপুটি
   মিলি সকলে কী কোলাহলে
         বক্ষে এল জুটি ।

ভোরের পাখি নবীন আঁখিদুটি
   গুহাবিহারী ভাবনা যত
       নিমেষে নিল লুটি ।
   কী ইঙ্গিতে আচম্বিতে
       ডাকিল লীলাভরে।
দুয়ারখোলা পুরানো খেলাঘরে —
যেখানে বসে সবার কাছাকাছি
অজানা ভাবে অবুঝ গান
       একদা গাহিয়াছি ।
    প্রাণের মাঝে ছুটে-চলার
        খেপামি এল ছুটি,
    লাভের লোভ, ক্ষতির ক্ষোভ
        সকলি গেল টুটি ।

ভোরের পাখি নবীন আঁখিদুটি
    শুকতারাকে যেমনি ডাকে
        প্রাণে সে উঠে ফুটি ।
অরুণরাঙা চেতনা জাগে চিতে —
ঝুমকোলতা জানায় কথা
     রঙিন রাগিণীতে ।
মনের'পরে খেলায় বায়ুবেগে
কত-যে মায়া-রঙের ছায়া
    খেয়ালে-পাওয়া মেঘে ;
বুলায় বুকে ম্যাগ্‌নোলিয়া
    কৌতূহলী মুঠি,
অতি বিপুল ব্যাকুলতায়
    নিখিলে জেগে উঠি ।

২৭ শ্রাবণ ১৩৩৫