ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

            পথবর্তী
দূর মন্দিরে সিন্ধুকিনারে
          পথে চলিয়াছ তুমি ।
আমি তরু মোর ছায়া দিয়ে তারে
          মৃত্তিকা তার চুমি ।
হে তীর্থগামী, তব সাধনার
অংশ কিছু-বা রহিল আমার,
পথপাশে আমি তব যাত্রার
          রহিব সাক্ষীরূপে ।
তোমার পূজায় মোর কিছু যায়
          ফুলের গন্ধধূপে ।

তব আহ্বানে বরণ করিয়া
          নিয়েছি দুর্গমেরে ।
ক্লান্তি কিছু-বা নিলাম হরিয়া
         মোর অঞ্চল-ঘেরে ।
যা ছিল কঠোর, যাহা নিষ্ঠুর
তার সাথে কিছু মিলাই মধুর,
যা ছিল অজানা, যাহা ছিল দূর
        আমি তারি মাঝে থেকে
দিনু পথ- ' পরে শ্যাম অক্ষরে
         জানার চিহ্ন এঁকে ।
মোর পরিচয়ে তোমার পথের
        কিছু রহে পরিচয় ।
তব রচনায় তব ভকতের
       কিছু বাণী মিশে রয় ।
তোমার মধ্যদিবসের তাপে
আমার স্নিগ্ধ কিশলয় কাঁপে,
মোর পল্লব সে মন্ত্র জাপে
       গভীর যা তব মনে,
মোর ফলভার মিলানু তোমার
       সাধনফলের সনে ।

বেলা চলে যাবে, একদা যখন
        ফুরাবে যাত্রা তব,
শেষ হবে যবে মোর প্রয়োজন
       হেথাই দাঁড়ায়ে রব ।
এই পথখানি রবে মোর প্রিয়,
এই হবে মোর চিরবরণীয়,
তোমারি স্মরণে রব স্মরণীয়,
        না মানিব পরাভব ।
তব উদ্দেশে অর্পিব হেসে
       যা-কিছু আমার সব ।

২৬ অগষ্ট ১৯২৮