ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

              রাখিপূর্ণিমা
কাহারে পরাব রাখি যৌবনের রাখিপূর্ণিমায়,
হে মোর ভাগ্যের দেব ? লগ্ন যেন বহে নাহি যায় ।
মেঘে আজি আবিষ্ট অম্বর, ঘনবৃষ্টি-আচ্ছাদনে
অস্পষ্ট আলোর মন্ত্র আকাশ নিবিষ্ট হয়ে শোনে,
বুঝিতে পারে না ভালো । আমি ভাবিতেছি একা বসে,
আমার বাঞ্ছিত কবে বাহিরিল প্রচ্ছন্ন প্রদোষে
চিহ্নহীন পথে । এসেছিল দ্বারের সম্মুখে মোর
ক্ষণতরে । তখনো রজনী মম হয় নাই ভোর,
হৃদয় অস্ফুট ছিল অর্ধ জাগরণে । ডাকে নি সে
নাম ধরে, দুয়ারে করে নি করাঘাত, গেছে মিশে
সমুদ্রতরঙ্গরবে তাহার অশ্বের হ্রেষাধ্বনি ।
হে বীর অপরিচিত, শেষ হল আমার রজনী,
জানা তো হল না কোন্‌ দুঃসাধ্যের সাধন লাগিয়া
অস্ত্র তব উঠিল ঝঞ্ঝনি । আমি রহিনু জাগিয়া ।

৩১ অগস্ট ১৯২৮


                   আহ্বান
কোথা আছ! ডাকি আমি । শোনো, শোনো, আছে প্রয়োজন
একান্ত আমারে তব । আমি নহি তোমার বন্ধন —
পথের সম্বল মোর প্রাণে । দুর্গমে চলেছ তুমি
নীরস নিষ্ঠুর পথে — উপবাসহিংস্র সেই ভূমি
আতিথ্যবিহীন ; উদ্ধত নিষেধদণ্ড রাত্রিদিন
উদ্যত করিয়া আছে ঊর্ধ্ব-পানে । আমি ক্লান্তিহীন
সেই সঙ্গ দিতে পারি, প্রাণবেগে বহন যে করে
শুশ্রূষার পূর্ণশক্তি আপনার নিঃশঙ্ক অন্তরে —
যথা রুক্ষ রিক্তবৃক্ষ শৈলবক্ষ ভেদি অহরহ
দুর্দাম নির্ঝরে ঢালে দুর্নিবার সেবার আগ্রহ,
শুকায় না রসবিন্দু প্রখর নির্দয় সূর্যতেজে,
নীরস প্রস্তরমুষ্টিতলে দৃঢ়বলে রাখে সে-যে
অক্ষয় সম্পদরাশি । সহাস্য উজ্জ্বল গতি তার
দুর্যোগে অপরাজিত, অবিচল বীর্যের আধার ।

 

১ সেপ্টেম্বর ১৯২৮