ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

         শেষ মধু
বসন্তবায় সন্ন্যাসী হায়
     চৈৎ-ফসলের শূন্য খেতে,
মৌমাছিদের ডাক দিয়ে যায়
    বিদায় নিয়ে যেতে যেতে —
    আয় রে ওরে মৌমাছি, আয়,
            চৈত্র যে যায় পত্রঝরা,
     গাছের তলায় আঁচল বিছায়
          ক্লান্তি-অলস বসুন্ধরা ।

সজনে ঝুলায় ফুলের বেণী,
আমের মুকুল সব ঝরে নি,
কুঞ্জবনের প্রান্ত-ধারে
     আকন্দ রয় আসন পেতে ।
     আয় রে তোরা মৌমাছি, আয়,
           আসবে কখন শুকনো খরা,
      প্রেতের নাচন নাচবে তখন
           রিক্ত নিশায় শীর্ণ জরা ।
 

শুনি যেন কাননশাখায়
      বেলাশেষের বাজায় বেণু ;
মাখিয়ে নে আজ পাখায় পাখায়
     স্মরণভরা গন্ধরেণু ।
কাল যে কুসুম পড়বে ঝরে
তাদের কাছে নিস গো ভরে
ওই বছরের শেষের মধু
     এই বছরের মৌচাকেতে ।
     নূতন দিনের মৌমাছি, আয়,
          নাই রে দেরি, করিস ত্বরা,
    শেষের দানে ওই রে সাজায়
         বিদায়দিনের দানের ভরা ।

 

চৈত্রমাসের হাওয়ায় কাঁপা
     দোলনচাঁপার কুঁড়িখানি
প্রলয়দাহের রৌদ্রতাপে
     বৈশাখে আজ ফুটবে জানি ।
যা কিছু তার আছে দেবার
শেষ করে সব নিবি এবার,
যাবার বেলায় যাক চলে যাক
     বিলিয়ে দেবার নেশায় মেতে ।
     আয় রে ওরে মৌমাছি, আয়,
         আয় রে গোপন-মধু-হরা,
    চরম দেওয়া সঁপিতে চায়
    ওই মরণের স্বয়ম্বরা ।

 

[শান্তিনিকেতন]

১২ চৈত্র ১৩৩৩