ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী
রচনাবলী সূচি

মহুয়া
 


 

             ভাবিনী
ভাবিছ যে ভাবনা একা-একা
     দুয়ারে বসি চুপে চুপে,
সে যদি সম্মুখে দিত দেখা
     মূর্তি ধরি কোনো রূপে —
         হয়তো দেখিতাম শুকতারা
         দিবস পার হয়ে দিশাহারা
         এসেছে সন্ধ্যার কিনারাতে
               সাঁঝের তারাদের দলে,
        উদাস স্মৃতিভরা আঁখিপাতে
              উষার হিমকণা জলে ।

হয়তো দেখিতাম, বাদলে যে
      শ্রাবণে এনেছিল বাণী
শরতে জলভার এল ত্যেজে
     শুভ্র সেই মেঘখানি ।
         চলে সে সন্ন্যাসী দিশে দিশে
         রবির আলোকের পিয়াসী সে,
         আকাশ আপনারই লিপি লিখে
                পড়িতে দিল যেন তারে,
         সে তাই চেয়ে চেয়ে অনিমিখে
                বুঝিতে বুঝি নাহি পারে ।

হয়তো দেখিতাম, রজনীতে
       সে যেন সুরহারা বীণা
বিজন দীপহীন দেহলিতে
      মৌন-মাঝে আছে লীনা ।
          একদা বেজেছিল যে রাগিণী
          তারে সে ফিরে যেন নিল চিনি
          তারার কিরণের কম্পনে
               নীরব আকাশের মাঝে,
          সুদূর সুরসভা-অঙ্গনে
               সুরের স্মৃতি যেথা বাজে ।

১৫ আশ্বিন ১৩৩৫


              একাকী
    চন্দ্রমা আকাশতলে পরম একাকী —
আপন নিঃশব্দ গানে আপনারই শূন্য দিল ঢাকি ।
            অয়ি একাকিনী,
অলিন্দে নিশীথরাত্রে শুনিছ সে জ্যোৎস্নার রাগিণী
          চেয়ে শূন্যপানে,
     যে রাগিণী অসীমের উৎস হতে আনে
   অনাদি বিরহরস, তাই দিয়ে ভরিয়া আঁধার
কোন্‌ বিশ্ববেদনার মহেশ্বরে দেয় উপহার ।
         তারি সাথে মিলায়েছ তব দৃষ্টিখানি,
               চোখে অনিবর্চনীয় বাণী,
      মিলায়েছ যেন তব জন্মান্তর হতে নিয়ে আসা
                   দীর্ঘনিশ্বাসের ভাষা ।
      মিলায়েছ, সুগম্ভীর দুঃখের মাঝারে
যে মুক্তি রয়েছে লীন বন্ধহীন শান্ত অন্ধকারে ।
অরণ্যে অরণ্যে আজি সাগরে সাগরে,
         জনশূন্য তুষারশিখরে
কোন্‌ মহাশ্বেতা, কোন্‌ তপস্বিনী বিছালো অঞ্চল,
           স্তব্ধ অচঞ্চল,
অনন্তেরে সম্বোধিয়া কহিল সে ঊর্ধ্বে তুলি আঁখি,
          তুমিও একাকী ।

 

১৮ আশ্বিন ১৩৩৫