ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


রুদ্রচণ্ড
(নাটিকা)
 

চতুর্দশ দৃশ্য


                  চাঁদ কবি
     
  চাঁদ কবি । উহু, কি নিস্তব্ধ বন, হাহা করে বায়ু,
    পদশব্দে প্রতিধ্বনি উঠিছে কাঁদিয়া!
আশঙ্কায় দেহ যেন উঠিছে শিহরি,
অতিশয় ধীরে ধীরে পড়িছে নিঃশ্বাস!
এই যে কুটীর সেই, সাড়াশব্দ নাই,
গোপন কি কথা ল'য়ে স্তব্ধ আছে যেন!
কাঁপিছে চরণ মোর! যাব কি ভিতরে?

                 [দ্বার উদ্‌ঘাটন
গৃহমধ্যে রুদ্রচণ্ডের মৃতদেহ ও মুমুর্ষু অমিয়া]

অমিয়া, অমিয়া মোর, স্নেহের প্রতিমা!
চাঁদ কবি, ভাই তোর এসেছে হেথায়।
  অমিয়া । চাঁদ, চাঁদ, আইলে কি? এস কাছে এস
    কখন্‌ আসিবে তুমি সেই আশা চেয়ে
বুঝি এতক্ষণ প্রাণ যায় নি চলিয়া
কত দিন কত রাত্রি পথে পথে খুঁজি
দেখা হল, ছুটে গেনু ভায়ের কাছেতে,
একবার দাঁড়ালে না? চলে গেলে চাঁদ?
না জানি কি অপরাধ করেছে অমিয়া!
আজ, চাঁদ, জীবনের শেষ দণ্ডে মোর
শুনিতে ব্যাকুল বড় সে কি অপরাধ!
দেখিতে পাই নে কেন? কোথা তুমি ভাই?
সংসার চোখের 'পরে আসিছে মিলায়ে।
ত্বরা ক'রে বল চাঁদ, সময় যে নাই,
একবার দাঁড়ালে না, চলে গেলে ভাই?

                 [মৃত্যু]
  চাঁদ কবি । একি হ'ল, একি হ'ল, অমিয়া, অমিয়া,
    এক মুহূর্ত্তের তরে রহিলি না তুই?
করুণ অন্তিম প্রশ্ন মুখে রয়ে গেল,
উত্তর শুনিতে তার দাঁড়ালি নে বোন?
যত দিন বেঁচে রব ওই প্রশ্ন তোর
কানেতে বাজিবে মোর দিবস রজনী,
জীবনের শেষ দণ্ডে ওই প্রশ্ন তোর
শুনিতে শুনিতে বালা মুদিব নয়ন।
অমিয়া, অমিয়া মোর, ওঠ্‌ একবার।
প্রশ্ন শুধাবারে শুধু বেঁচেছিলি বোন,
এক দণ্ড রহিলি নে উত্তর শুনিতে?
ভাল বোন, দেখা হবে আর-এক দিন,
সে দিন দুজনে মিলি করিব রে শেষ
দুজনের হৃদয়ের অসম্পূর্ণ কথা।
     
                 সমাপ্ত