ভাষাংশকোরানের সূরা সূচি
পবিত্র
কোরআনুল করীম

১৬.
সূরা
নাহল


মক্কায় অবতীর্ণ : আয়াত ১২৮

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

১. আল্লাহ্‌র নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।  
২. তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা
, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।  
৩. যিনি যথাবিধি আকাশরাজি ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার বহু উর্ধ্বে।  
৪. তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদ্‌সত্বেও সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী হয়ে গেছে।  
৫. চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্যে শীত বস্ত্রের উপকরণ আছে, আর অনেক উপকার হয়েছে এবং কিছু সংখ্যককে তোমরা আহার্যে পরিণত করে থাক।  
৬. এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়
, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও।  
৭. এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়
, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত পৌঁছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।  
৮. তোমাদের আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া
, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন, যা তোমরা জান না।  
৯. সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।  
১০. তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়
, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।  
১১. এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপাদন করেন ফসল
, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  
১২. তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি
, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকাসমূহ তাঁরই বিধানের কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।  
১৩. তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন
, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে।  
১৪. তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে
, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযানসমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহ্‌র কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।  
১৫. এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে
, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।
১৬. এবং তিনি পথনির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন
, এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।  
১৭. যিনি সৃষ্টি করেন
, তিনি কি সে লোকের সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না? তোমরা কি চিন্তা করবে না?  
১৮. যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।  
১৯. আল্লাহ জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর।  
২০. এবং যারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে অন্যদের ডাকে
, ওরা তো কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত।  
২১. তারা মৃত-প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে
, জানে না।  
২২. আমাদের ইলাহ্ একক ইলাহ। অনন্তর যারা পরজীবনে বিশ্বাস করে না
, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।
২৩. নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।  
২৪. যখন তাদেরকে বলা হয়: তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন
? তারা বলে: পূর্ববর্তীদের কিসসা-কাহিনী।  
২৫. ফলে কেয়ামতের দিন ওরা পূর্ণমাত্রায় বহন করবে ওদের পাপভার এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা তাদের অজ্ঞতাহেতু বিপথগামী করে শুনে নাও
, খুবই নিকৃষ্ট বোঝা যা তারা বহন করে।  
২৬. নিশ্চয় চক্রান্ত করেছে তাদের পূর্ববর্তীরা
, অতঃপর আল্লাহ তাদের চক্রান্তের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন। এরপর উপর থেকে তাদের মাথায় ছাদ ধ্বসে পড়ে গেছে এবং তাদের উপর আযাব এসেছে যেখান থেকে তাদের ধারণা ছিল না।  
২৭. অতঃপর কেয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন: আমার অংশীদাররা কোথায়
, যাদের ব্যাপারে তোমরা খুব হঠকারিতা করতে ? যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছিল তারা বলবে: নিশ্চয়ই আজকের দিনে লাঞ্ছনা ও দুর্গতি কাফেরদের জন্যে,  
২৮. ফেরেশতারা তাদের জান এমতাবস্থায় কবজ করে যে, তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তখন তারা আনুগত্য প্রকাশ করবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। হ্যাঁ নিশ্চয় আল্লাহ সববিষয় অবগত আছেন, যা তোমরা করতে।  
২৯. অতএব
, জাহান্নামের দরজসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।  
৩০. পরহেযগারদেরকে বলা হয়: তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন
? তারা বলে: মহাকল্যাণ। যারা এ জগতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। পরহেযগারদের গৃহ কি চমৎকার?
৩১. সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয়। তাদের জন্যে তাতে তা-ই রয়েছে, যা তারা চায়। এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহর পরহেযগারদেরকে,  
৩২. ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফেরেশতারা বলে: তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর।  
৩৩. কাফেররা কি এখন অপেক্ষা করছে যে
, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে কিংবা আপনার পালনকর্তার নির্দেশ পৌছবে? তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছিল। আল্লাহ্ তাদের প্রতি অবিচার করেননি; কিন্তু তারা স্বয়ং নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।  
৩৪. সুতরাং তাদের মন্দ কাজের শাস্তি তাদেরই মাথায় আপতিত হয়েছে এবং তারা যে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত
, তাই উল্টে তাদের উপর পড়েছে।  
৩৫. মুশরিকরা বলল: যদি আল্লাহ্ চাইতেন
, তবে আমরা তাঁকে ছাড়া কারও এবাদত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষেরাও করত না এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোন বস্তুই আমরা হারাম করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছে। রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।  
৩৬. আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে
, তোমরা আল্লাহ্‌র এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।  
৩৭. আপনি তাদেরকে সুপথে আনতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ্ যাকে বিপথগামী করেন তিনি তাকে পথ দেখান না এবং তাদের কোন সাহায্যকারী ও নেই।  
৩৮. তারা আল্লাহ্‌র নামে কঠোর শপথ করে যে
, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই এর পাকাপোক্ত ওয়াদা হয়ে গেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক জানে না।  
৩৯. তিনি পুনরুজ্জীবিত করবেনই
, যাতে যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল তা প্রকাশ করা যায় এবং যাতে কাফেরেরা জেনে নেয় যে, তারা মিথ্যাবাদী ছিল।  
৪০. আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি
; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও। সুতরাং তা হয়ে যায়।  
৪১. যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহ্‌র জন্যে গৃহত্যাগ করেছে
, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত।  
৪২. যারা দৃঢ়পদ রয়েছে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করেছে।  
৪৩. আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর
, যদি তোমাদের জানা না থাকে;  
৪৪. প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।  
৪৫. যারা কুচক্র করে
, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে, যা তাদের ধারণাতীত?
৪৬. কিংবা চলাফেরার মধ্যেই তাদেরকে পাকড়াও করবে
, তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না।  
৪৭. কিংবা ভীতি প্রদর্শনের পর তাদেরকে পাকড়াও করবেন
? তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত নম্র, দয়ালু।  
৪৮. তারা কি আল্লাহ্‌র সৃজিত বস্তু দেখে না
, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে।  
৪৯. আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমণ্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমণ্ডলে আছে এবং ফেরেশতাগণ
; তারা অহংকার করে না।  
৫০. তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়
, তা করে।
৫১. আল্লাহ বললেন: তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না— উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর।  
৫২. যা কিছু নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডলে আছে তা তাঁরই এবাদত করা শাশ্বত কর্তব্য। তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে
?  
৫৩. তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।  
৫৪. এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দুরীভূত করে দেন
, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে।  
৫৫. যাতে ঐ নেয়ামত অস্বীকার করে
, যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব মজা ভোগ করে নাও সত্বরই তোমরা জানতে পারবে।  
৫৬. তারা আমার দেয়া জীবনোপকরণ থেকে তাদের জন্যে একটি অংশ নির্ধারিত করে
, যাদের কোন খবরই তারা রাখে না। আল্লাহর কসম, তোমরা যে অপবাদ আরোপ করছ, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।  
৫৭. তারা আল্লাহ্‌র জন্যে কন্যা সন্তান নির্ধারণ করে
তিনি পবিত্র মহিমান্বিত এবং নিজেদের জন্যে ওরা তাই স্থির করে যা ওরা চায়।  
৫৮. যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়
, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।  
৫৯. তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে
, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।  
৬০. যারা পরকাল বিশ্বাস করে না
, তাদের উদাহরণ নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর উদাহরণই মহান, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৬১. যদি আল্লাহ্ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন
, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না।  
৬২. যা নিজেদের মন চায় না তারই তারা আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করে এবং তাদের জিহবা মিথ্যা বর্ণনা করে যে
, তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ। স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, তাদের জন্যে রয়েছে আগুন এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে নিক্ষেপ করা হবে।  
৬৩. আল্লাহ্‌র কসম
, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্মসমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সে-ই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।  
৬৪. আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি
, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে।  
৬৫. আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন
, তদ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে।  
৬৬. তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।  
৬৭. এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মধ্য ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক
, এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  
৬৮. আপনার পালনকর্তা মধুমক্ষিকাকে আদেশ দিলেন: পর্বতগাত্রে
, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর,  
৬৯. এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথসমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  
৭০. আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এরপর তোমাদের মৃত্যুদান করেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ পৌছে যায় জরাগ্রস্ত অকর্মণ্য বয়সে
, ফলে যা কিছু তারা জানত সে সম্পর্কে তারা সজ্ঞান থাকবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ সর্বশক্তিমান।  
৭১. আল্লাহ তাআলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে
, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে।  
৭২. আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে
?  
৭৩. তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে, যে তাদের জন্যে ভুমণ্ডল ও নভোমণ্ডল থেকে সামান্য রুযী দেওয়ারও অধিকার রাখে না এবং মুক্তি ও রাখে না।  
৭৪. অতএব
, আল্লাহ্‌র কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না, নিশ্চয় আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।  
৭৫. আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন
, অপরের মালিকানাধীন গোলামের, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে। উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহ্‌র, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না।
৭৬. আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন
, দুব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে?  
৭৭. নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমন
, যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছুর উপর শক্তিমান।  
৭৮. আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ
, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।  
৭৯. তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখে না
? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখে না। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শনবলী রয়েছে।  
৮০. আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের গৃহকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুস্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমার জন্যে তাঁবুর ব্যবস্থা। তোমরা এগুলোকে সফরকালে ও অবস্থান কালে পাও। ভেড়ার পশম
, উটের বাবরি চুল ও ছাগলের লোম দ্বারা কত আসবাবপত্র ও ব্যবহারের সামগ্রী তৈরী করেছেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।  
৮১. আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃজিত বস্তু দ্বারা ছায়া করে দিয়েছেন এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্মগোপনের জায়গা করেছেন এবং তোমাদের জন্যে পোশাক তৈরী করে দিয়েছেন
, যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।  
৮২. অতঃপর যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে
, তবে আপনার কাজ হল সুস্পষ্ট ভাবে পৌছে দেয়া মাত্র।  
৮৩. তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে
, এরপর অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।  
৮৪. যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব
, তখন কাফেরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাদের তওবাও গ্রহণ করা হবে না।  
৮৫. যখন জালেমরা আযাব প্রত্যক্ষ করবে
, তখন তাদের থেকে তা লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হবে না।  
৮৬. মুশরিকরা যখন ঐ সব বস্তুকে দেখবে
, যেসবকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল, তখন বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা এরাই তারা যারা আমাদের শেরেকীর উপাদান, তোমাকে ছেড়ে আমরা যাদেরকে ডাকতাম। তখন ওরা তাদেরকে বলবে: তোমরা মিথ্যাবাদী।  
৮৭.  সেদিন তারা আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পন করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে।  
৮৮. যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে
, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।  
৮৯. সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা
, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।  
৯০. আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা
, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।
৯১. আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না
, অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।  
৯২. তোমরা ঐ মহিলার মত হয়ো না
, যে পরিশ্রমের পর কাটা সূতা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে, তোমরা নিজেদের কসমসমূহকে পারস্পরিক প্রবঞ্চনার বাহানা রূপে গ্রহণ কর এজন্যে যে, অন্য দল অপেক্ষা একদল অধিক ক্ষমতাবান হয়ে যায়। এতদ্বারা তো আল্লাহ শুধু তোমাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ্ অবশ্যই কিয়ামতের দিন প্রকাশ করে দেবেন, যে বিষয়ে তোমরা কলহ করতে।  
৯৩. আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতে পারতেন
, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।  
৯৪. তোমরা স্বীয় কসমসমূহকে পারস্পরিক কলহদ্বন্দ্বের বাহানা করো না। তা হলে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পা ফসকে যাবে এবং তোমরা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করবে এ কারণে যে
, তোমরা আমার পথে বাধা দান করেছ এবং তোমাদের কঠোর শাস্তি হবে।  
৯৫. তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে যা আছে
, তা উত্তম তোমাদের জন্যে, যদি তোমরা জ্ঞানী হও।  
৯৬. তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে
, কখনও তা শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।  
৯৭. যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার
, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব যা তারা করত।  
৯৮. অতএব
, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।  
৯৯. তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।  
১০০. তার আধিপত্য তো তাদের উপরই চলে
, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।  
১০১. এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন
; তখন তারা বলে: আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন: বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।  
১০২. বলুন
, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ।  
১০৩. আমি তো ভালভাবেই জানি যে
, তারা বলে: তাকে জনৈক ব্যক্তি শিক্ষা দেয়। যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে, তার ভাষা তো আরবি নয় এবং এ কোরআন পরিষ্কার আরবি ভাষায়।  
১০৪. যারা আল্লাহর কথায় বিশ্বাস করে না
, তাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।  
১০৫. মিথ্যা কেবল তারা রচনা করে
, যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী।
১০৬. যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।  
১০৭. এটা এ জন্যে যে
, তারা পার্থিব জীবনকে পরকালের চাইতে প্রিয় মনে করেছে এবং আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।  
১০৮.  এরাই তারা
, আল্লাহ তা’য়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কাণ্ডজ্ঞানহীন।  
১০৯. বলাবাহুল্য পরকালে এরাই ক্ষতি গ্রস্ত হবে।  
১১০. যারা দুঃখ-কষ্ট ভোগের পর দেশত্যাগী হয়েছে অতঃপর জেহাদ করেছে
, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা এসব বিষয়ের পরে অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  
১১১. যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে সওয়াল-জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না।  
১১২. আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের
, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহ্‌র নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির।  
১১৩. তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে তাদরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিতই ওরা ছিল পাপাচারী।  
১১৪. অতএব
, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।  
১১৫. অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত
, শুকরের মাংস এবং যা জবাইকালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  
১১৬. তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বলো না যে
, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।  
১১৭. যৎসামান্য সুখ-সম্ভোগ ভোগ করে নিক। তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।  
১১৮. ইহুদীদের জন্যে আমি তো কেবল তাই হারাম করেছিলাম যা ইতিপূর্বে আপনার নিকট উল্লেখ করেছি। আমি তাদের প্রতি কোন জুলুম করিনি
, কিন্তু তারাই নিজেদের উপর জুলুম করত।  
১১৯. অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে
, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু।  
১২০. নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক
, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহ্‌রই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
১২১. তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।  
১২২. আমি তাঁকে দুনিয়াতে দান করেছি কল্যাণ এবং তিনি পরকালেও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত।  
১২৩. অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে
, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শেরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।  
১২৪. শনিবার দিন পালন যে
, নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা তাদের জন্যেই যারা এতে মতবিরোধ করেছিল। আপনার পালনকর্তা কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।  
১২৫. আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন
, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।  
১২৬. আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর
, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।  
১২৭. আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহ্‌র জন্য ব্যতীত নয়
, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।  
১২৮. নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন
, যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে।