সিকান্দার সুরিকে
পরাজিত করে হারানো রাজত্ব পুনরায় ফিরে পান। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি উত্তর পাঞ্জাবের সিওয়ালিক পর্বতে পালিয়ে যান। সিকান্দার শাহ সুরি এবং তার ভাই আদিল শাহ সুরি মুঘল সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে এবং পরাজিত হয়েছিলেন। পাণিপথের
যুদ্ধের আগেই হুমায়ূন
উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে সিকন্দর সুরের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠান। সে সময়
সিকন্দর শাহ পালিয়ে সিওয়ালিক পর্বতে আশ্রয় নেন। পাণিপথের যুদ্ধে জয়লাভের পর, বৈরাম
খান পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠান। এই সময় সিকন্দর শাহ বশ্যতা স্বীকার করে
একটি জায়গির লাভ করেন।
১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে
হুমায়ুন-এর মৃত্যুর পর, আকবর সিংহাসনে বসেন। এই সময় আকবরের
অভিভাবক হিসেবে বৈরাম খান তাঁর অভিভাবক ছিলেন। আকবরকে দিল্লীর সিংহাসন
থেকে অপসারিত করার জন্য, মহম্মদ শাহ আদিলের সেনাপতি হিমু বিশাল সেনাদল নিয়ে আগ্রা
অভিমুখে রওনা দেন এবং সহজেই আগ্রা দখল করেন। এরপর তিনি দিল্লী দখলের উদ্দেশ্যে রওনা
দিলে, দিল্লীর শাসনকর্তা তার্দিবেগ তাঁকে বাধা দেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে পলায়ন
করেন। ফলে দিল্লী হিমুর অধিকারে আসে। তিনি বিক্রমাদিত্য নাম ধারণ করে নিজেকে সম্রাট
ঘোষণা করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হিমুকে শায়েস্তা করার জন্য, বৈরাম খান দিল্লীর পথে
অগ্রসর হন। পাণিপথে উভয়ে মিলিত হন। ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পাণিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ বলা
হয়। এই যুদ্ধে হিমুর হস্তিবাহিনী বৈরাম খানের বাহিনীকে প্রায় তছনছ করে ফেলে। মোগল
বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু চোখে তীরবিদ্ধ হিমু সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, নেতৃত্বের
অভাবে হিমুর বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে। এই সময় বৈরাম খান সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে হিমুকে
বন্দী করেন। এই সময়, বৈরাম খান প্রায় ২৫০০ হাতি সহ বিপুল পরিমাণ যুদ্ধোপকরণ অধিকার
করতে সক্ষম হন। এরপর বৈরাম খান আহত হিমুকে হত্যা করে, দিল্লীর রাজপথে ফাঁসিকাষ্ঠে
ঝুলিয়ে রাখে।
আদিল শাহ সুর রাজত্ব
লাভের সময় বঙ্গের মহম্মদ শাহের সাথে
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। আদিল শাহের কাছে
পরাজিত হলে, মহম্মদ শাহ আদিল নিজ অনুচর শাহবাজ খাঁকে বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
কিন্তু অচিরেই মহম্মদ খাঁর পুত্র খিজির খাঁ পরাস্ত করেন এবং গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর
শাহ উপাধি ধারণ করে বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
তিনি শুরুতেই খোরাস খাঁ এবং হাইবৎ নিয়াজি নামক দুই
বিদ্রোহী আমিরকে দমন করেন। প্রায় নয় বৎসর তিনি রাজ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখতে সক্ষম
হন। ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খাঁ মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর নাবালক পুত্র ফিরোজ সিংহসনে
বসেন। কিন্তু তাঁর চাচা মুবারিজ খাঁ তাঁকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। মুবারিজ
খাঁ সিংহাসনে বসে মহম্মদ আদিল শাহ্ উপাধি ধারণ করেন। এই রাজবংশের অপর
প্রতিদ্বন্দ্বী আহম্মদ শাহ্ সুর পাঞ্জাবে সিকন্দর শাহ নাম ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা
করেন।
১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হিমুকে
পরাজিত করে আগ্রার সিংহাসন অধিকার করেন। ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিকান্দার শাহকে পরাজিত করে
আকবর মোগল সাম্রাজ্যের
পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লীতে হিমু পরাজয়ে মূলত এর মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে
শেরশাহ সুরি রাজবংশের বিলোপ ঘটে।
এই সময় বাংলার শাসনকর্তা গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর পলায়মান আদিল শাহকে সুরকগড়ের কাছে
পরাজিত ও হত্যা করেন। ফলে বাংলার শাসন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপই গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর
অধিকার করেন। ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রথম গিয়াসউদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর পুত্র
দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ ১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁর
মৃ্ত্যুর পর, তাঁর এক আমির তৃতীয় গিয়াসউদ্দিন নাম ধারণ করে ১ বৎসর রাজত্ব করেন।
১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে কর্রানী এই গিয়াজউদ্দিনকে পরাজিত করে বাংলায় কররানী রাজ বংশের
প্রতিষ্ঠা করে। এর ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে শেরশাহ সুরি রাজবংশের শাসন বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।