বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের পশ্চিম পাশের নীলক্ষেত-ফুলার রোডের সংযোগ স্থলে, সড়ক দ্বীপে স্থাপিত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় সঙ্কটকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, তারই স্মরণে এই স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ এই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক উদ্বোধন করা হয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এই স্মৃতিফলকে ১৯ জন শিক্ষক, ১ জন ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন ছাত্র, ৩১ জন কর্মচারী সব মিলিয়ে ১৫২ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই স্মৃতিফলকে মোট ১৪টি দণ্ডায়মান প্রাচীর রয়েছে, যেগুলোর গায়ে পোড়ামাটির ফলক স্থাপিত হয়েছে। এই প্রাচীরগুলোর মধ্যে ৬টি ছোট এবং ৮টি আকারে বড়। তবে উচ্চতার বিচারে সবগুলোই একই রকমের। কম প্রশস্ত প্রাচীরের উভয় পাশে শহিদদের নাম-পরিচয় রয়েছে এবং বাকি ৮টির একদিকে টেরাকোটা নকশা ফলক রয়েছে।

স্মৃতিফলকের প্রথম দিকের দু'টি প্রাচীরের গায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনা থেকে পঙ্‌ক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। পোড়ামাটির ফলকগুলোর মধ্যে ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জনের আনন্দ মিছিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বুদ্ধিজীবীদের ওপর অত্যাচারের নির্মম দৃশ্য। কয়েকটি টেরাকোটায় স্থান পেয়েছে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। কলসি কাঁখে বাংলার রমণী, পরাধীনতার প্রতীক শিকল, শহিদ মিনার, বাংলাদেশের পতাকার মাঝে সূর্য, ভাষা শহিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সড়কদ্বীপের এই স্মৃতিফলকটি তৈরি করেন স্থপতি মোহায়মেন ও মশিউদ্দিন শাকের। তৈরির এক পর্যায়ে এতে টেরাকোটার ফলক স্থাপন করার বিষয়টি যোগ করা হয়। তবে এর বাস্তবায়ন হয় চারুকলার শিক্ষক আবু সাঈদ তালুকদার ও শিল্পী রফিকুন নবীর হাত ধরে। এখানে ফলকগুলো স্থাপন করা হয়েছে মোজাইক করা ধূসর কংক্রিটের উপর। আর শহিদদের নাম-পরিচয় রয়েছে কালো মার্বেল পাথরে সাদা রঙে।