সাবাশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণ আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র –শিক্ষক- কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বলিষ্ঠ সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। এই সময় অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা শাহাদাৎ বরণ করেন। এরপর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ করেছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজশাহীতে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এরা স্থানীয় ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বিরাট অংশ রাজশাহী শহরে প্রবেশ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ঘাটি স্থাপন করে। এগই সময় শাহাদৎ বরণ করেন অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, অধ্যাপক মীর আব্দুল কাউয়ুম, কর্মকর্তা- কর্মচারী ও ছাত্র।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে স্মারক স্মৃতিসৌধ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ হয় সিনেট ভবনের দক্ষিণে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর নকশায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষে হলে এর ফলক উম্মোচন করেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম।

৪০ বর্গফুট জায়গার একটি বিশাল বেদীর ওপর ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভাস্কর্যের মূল বেদীতে উঠার জন্য কয়েকটি ধাপের সিঁড়ি রয়েছে। ভাস্কর্যের মূল লক্ষবস্তু দু'জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল হাতে এগিয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বাঁ পা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তরুণ মুক্তিযোদ্ধার পেশীবহুল দেহ অমিত শক্তির আভাস দিচ্ছে। এর ঘন চুল ও প্রশস্ত ললাট দৃঢ়তা ও উদারতার প্রতীক। এর পরনে প্যান্ট। এই মূর্তিটি শহুরে তরুণের প্রতিনিধি। অন্যজন এক হাতে রাইফেল ধরে আছে, আর অন্য হাত মাথার সামান্য উপরে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধভাবে রয়েছে। তাঁর পরনে লুঙ্গি। এই মুক্তিযোদ্ধা সাধারণ গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক।

এ দুজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতির পিছনে রয়েছে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়াল। দেয়ালে উপরের অংশে রয়েছে একটি বৃত্ত। এই বৃত্ত স্বাধীনতার সূর্যের প্রতীক। ভাস্কর্যটির নিচের দিকে ডান ও বাম উভয় পাশে ৬ ফুট বাই ৫ ফুট আয়তাকার দুটি দেয়াল চিত্র রয়েছে। দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে দুটি ভিন্ন চিত্র। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে দু'জন যুবক যুবতী। যুবকের কাঁধে রাইফেল,মুখে কালো দাঁড়ি, কোমরে গামছা বাঁধা। এই যুবক মুক্তিযোদ্ধা বাউলের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধে বাউল, লোকজ শিল্পীসহ বাংলাদেশের যে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। বাউল তরুণের পাশে রয়েছে একতারা হাতে বাউল তরুণী। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু এবং দু'জন তরুণী। একজনের হাতে পতাকা। পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে গেঞ্জি পরা এক কিশোর। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। এ জনযুদ্ধে নারী শিশু সহ সর্ব স্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছিল। এই দুটি চিত্রে মাঝখানে স্থান পেয়েছে তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার কয়েকটি লাইন। যা হলো-

“ সাবাস বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

এই লেখার নিচে রয়েছে 'সাবশ বাংলাদেশ/শিল্পী নিতুন কুণ্ড।